শনিবারের নিবন্ধ
যে আকাশ ছিল সোনা সোনা
স্কাইলাইনের বাংলা কী?
ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে আমার চেয়ে কুড়ি বছরের ছোট মল্লিকা বলল, “কেন এটাও পারলে না? জীবনানন্দ স্যর কবে করে রেখে গেছেন, ‘আকাশলীনা’।”
যে আকাশ লীন হতে হতে লাইন হয়ে যায় তাকেই বলে স্কাইলাইন।
মল্লিকা আমার চেয়ে কুড়ি বছরের ছোট। এটা কী রকম কথা হল?
গল্পটা হল এই যে, মল্লিকা চলে যাবার পরে আমি তখন খেতে পারছিলাম না, ঘুমোতে পারছিলাম না। রাতে বিছানার কোনায় উঠে বসে থাকতাম। একদিন একটি দীর্ঘাঙ্গী মেয়ে এল আমার ফ্ল্যাটে। পাঁচ পাঁচ। মল্লিকার হাইট। পড়ায় সোশিওলজি। মল্লিকার বিষয়।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কে? সে বলল, “আমার নাম মল্লিকা। আমি ইস্তানবুলে থাকতাম। আমাকে মল্লিকাদি পাঠান আপনার কাছে। আপনি ঠিকঠাক ওষুধ খাচ্ছেন কি না মনিটর করতে এলাম।’ বলেই হো হো করে হাসতে লাগল। হাসিটাকে আমি পঁচিশ বছর ধরে চিনি। হাসিটাও মল্লিকার মতো।
কলকাতার স্কাইলাইন পাল্টে গিয়েছে, আরও পাল্টে যাবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আকাশ পৃথিবীর সব দেশে এক রকম। কিন্তু দেখতে আলাদা। এমনকী উত্তর কলকাতার আকাশ আর দক্ষিণ কলকাতার আকাশ কত আলাদা।
কলেজ স্ট্রিট থেকে আকাশ দেখলে কেমন বই বই গন্ধ পাওয়া যায়, আকাশটাকে প্রেসিডেন্সির মাথার মতো দেখতে লাগে। আর তার দু’হাতে একটা খোলা গ্রন্থ কে যেন খুলে রেখে নীচে গিয়েছে। পার্ক স্ট্রিট থেকে স্কাইলাইন যতটা চোখে পড়ে ততটুকুই মনে হয় সুরাপাত্র উপচে পড়া ফেনা, গরম গরল যা কি না অমৃত, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।
কলকাতার আকাশরেখা কয়েক বছরে হুহু করে বদলে গিয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় আকাশ ছিল অনেকটা করে। এখন কোনও পাড়ায় এক বাটি আকাশ, কোনও পাড়ায় এক চামচ আকাশ, কোনও পাড়ায় এক মোবাইল আকাশ।
আমরাই আমাদের আকাশরেখা নিয়ন্ত্রণ করি। টালিগঞ্জের আকাশরেখা টালিগঞ্জের মানুষই ঠিক করে নিয়েছেন। ক’টা চোদ্দো তলা উঠবে, কটা কুঁড়েঘর থাকবে সেটা আমরাই ঠিক করি।
একটা পাড়ার আকাশরেখার সঙ্গে সেই পাড়ার অর্থনীতি জড়িয়ে। যে পাড়ায় যত বেশি টাকা সে পাড়ায় আকাশ তত কম। কিছু কিছু পাড়া আছে কলকাতায়, খুব স্থবির। নড়েও না। চড়েও না। সে সব পাড়ায় সেনসেক্স ওঠেও না, নামেও না। সে সব পাড়া স্টেটাসকো ধরে রাখে।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
আমি আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে কুড়ি বছর পড়াচ্ছি, রাস্তাটা কোনও দিন একটু পাশ ফিরেও শুল না। এক রকম ভাবে শুয়ে আছে। বাড়িগুলো বড় হল না। ছোটও হল না। আকাশরেখা কুড়ি বছর আগে যা ছিল এখনও তাই আছে। বরঞ্চ কেন জানি না রাস্তাটা বিদ্যাসাগরে শুরু হয়ে রামমোহনে শেষ হয়ে গিয়েছে। যেন বাঙালির আর কিছু করার নেই, দুটো নাম পেয়েছি, ওই দুটো পাশবালিশ জড়িয়ে শীতের রাতে ঘুমিয়ে আছে পাড়া। জানা যাচ্ছে না অবনী বাড়ি আছে কি না।
নিউ ইয়র্ক শহর বোঝাতে হলিউডের সিনেমার একটা বিশেষ শট ছিল প্লেন স্ট্যাচু অব লিবার্টির ওপর দিয়ে নেমে আসছে। এবং সামনে নিউ ইয়র্ক শহরের বিখ্যাত স্কাইলাইন। ওই একটা শটেই ধরিয়ে দেওয়া যেত চল্লিশতলা-পঞ্চাশতলা বাড়ির ম্যানহাটনকে। বড়লোকের আমেরিকাকে।
কলকাতায় সেরকম শট নেই। তবে হাওড়ার ব্রিজ কিংবা ভিক্টোরিয়া দেখানো হত। এখন নতুন ব্রিজ দেখানো হয়, কিন্তু স্কাইলাইন তেমন স্পষ্ট নয়। তা হলে কি কলকাতার কোনও বিখ্যাত স্কাইলাইন নেই? আমাদের আকাশ আছে, স্কাইলাইন নেই!
সন্ধেবেলা ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে বেরিয়ে ময়দানের দিকে হাঁটলে সত্তরের দশকেও একটা ছবি ধরা পড়ত। গাঢ় অন্ধকারে ঝাঁকড়া গাছের হাঁ-করা মাথা, জমাট কালো নীল আকাশটাকে সঙ্গে করে গিলতে আসছে।
মোহনবাগান মাঠে যখন ফ্লাড লাইট বসল, মনে হল, ওই আলো-আাঁধারিকে খানিকটা সরিয়ে একটা কেল্লা ফণা তুলেছে। এরপর ইডেন যখন আলোর লাভা মাথায় নিয়ে প্রায় আকাশ ছুঁলো, কেল্লাটা যে কোথায় গেল! আলোর ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে গেল আকাশলীনাও।
কলকাতা শহরে এবং শহরতলিতে নেই নেই করেও অনেকগুলো ফ্লাইওভার উঠেছে। তারাই এখন আকাশরেখার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।
ময়দানের দিকে দাঁড়িয়ে এ পারে পার্ক স্ট্রিট থেকে মিউজিয়াম হয়ে গ্র্যান্ড হোটেলের যে প্যানোরেমিক ভিউটা দেখা যেত, সেটা এখন আর পাওয়ার উপায় নেই। মাঝে একটা পেল্লাই ফ্লাইওভার ‘পোস্ট কলোনিয়াল’ সাহেবপাড়ার পেট চিরে ধড়-মুণ্ড আলাদা করে দিয়েছে।
নন্দনের সামনে দিয়ে ক্যালকাটা ক্লাবের ঘাড়ের উপর দিয়ে এজেসি বোস রোডের দু’পাশের ফ্ল্যাটের মাঝখান দিয়ে কোনও কোনও বেডরুমে টুকি দিয়ে যে ফ্লাইওভারটি ছুটে গেছে, তাতে আমাদের গতি বেড়েছে, পার্ক সার্কাস থেকে পিজি আসতে আড়াই মিনিট লাগে, কিন্তু তৈরি করেছে প্রাইভেট আর পাবলিক স্পেসের লড়াই। এই লড়াই মানুষের প্রাচীনতম লড়াই। সে লড়াইয়ের কাটাকুটি আকাশলীনার গায়েও।
একই ঘটনা গোলপার্ক থেকে বালিগঞ্জ। জায়গাটার ল্যান্ডস্কেপ, থুড়ি থুড়ি সিটিস্কেপটাই পাল্টে গিয়েছে। আগে মনে হত বালিগঞ্জ অনেক উপরে। ঘাড় তুলে হা করে দেখতে হত। এখন বালিগঞ্জ নীচে। ছুটন্ত ফ্লাইওভার থেকে নীচে তাকিয়ে দেখতে হয় কলকাতার সব চেয়ে এলিটিস্ট পাড়াটাকে। এ জীবনে আর ওই পাড়াতে আমার থাকা হল না। ভিসা পেলাম না। ওখানে সবাই ডলার ভাঙিয়ে দই কেনে, মাছ কেনে, জয়নগরের মোয়া কেনে।
রাজাবাজার থেকে মৌলালি যেতে গেলে এখন আমরা ফ্লাইওভারেই উঠি, ইংরেজি ‘টি’ অক্ষরের মতো একটা ফ্লাইওভার যেন শাক দিয়ে মাছ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে। শিয়ালদার ওই অঞ্চলে যত ক্লেদজ কুসুম ছিল, যত অপরাধ ও অবৈধ দারিদ্র ছিল সব ঢাকা পড়ে গেছে নতুন বিন্যাসে। যে ফ্লাইওভার ওখানে নতুন শহর এনে দিয়েছে, নতুন আকাশ এনে দিয়েছে, সেই ফ্লাইওভার যেন একটা সুগভীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের ঢাকনা তৈরি করে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে আকাশলীনাকেও।
দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ যদি হয় কলকাতার নতুন লোগো, যে লোগোর নীচে গঙ্গার পারে দাঁড়ালে এক অসাধারণ স্কাইলাইন চোখে পড়ে, যে আকাশ আগে ছিল না কলকাতায়, যে আকাশ আর ব্রিজ মণিরত্নমকে টেনে আনতে পারে, তেমনি আরেক লোগো টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া মেট্রো। যেটা চলে গেছে মাটির নীচ দিয়ে নয়, বাড়িগুলোর কানের পাশ দিয়ে। এও এক নতুন কলকাতা, নতুন স্কাইলাইন, নতুন আনন্দ, নতুন উৎপাত।
গঙ্গার এ পারে দাঁড়িয়ে সালকিয়ার দিকে তাকালে সার সার চিমনির ধোঁয়া কত কল্পনা তৈরি করত... মহাদেবের জটা, ঝাঁকড়া চুলো সিংহ, বিরাট একটা ডাইনোসর। এখন সেখানেও ‘দাঁড়ি’ পড়েছে। টেলি লেন্স জুম করলে চোখে আসে বট অশ্বত্থের ঝুরি নিয়ে সিমেন্টে বাঁধাই আখাম্বা চিমনিগুলো হাঁ করে দাড়িয়ে আছে। আকাশের গায়ে উপোসী মহাকাল যেন! নাকি সাক্ষাৎ যক্ষ?
বাইপাস যখন হল আমরা ভেবেছিলাম ওদিকে শেয়াল থাকে। এখন দেখছি ওদিকে এন আর আই থাকে। অভিষিক্তা-রুচিরা এই সব হর্ম্যরাজি আজ কলকাতার আকাশের ল্যান্ডমার্ক, আবার ভুল ইংরেজি বললাম, বলতে হবে নতুন স্কাইমার্ক। রাজারহাটের আকাশ খেতে পেত না, এখন সেটা বড়লোকের স্কাইলাইন।
রাজারহাটে ঢুকলে আর রক্ষে নেই। দুর্যোধনদের যা হয়েছিল, স্ফটিকের মেঝেতে হাঁটতে গিয়ে স্ফটিকের দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছিল, সে রকম হয়েছিল আমারই। একটি সুউচ্চ রেস্তোরাঁয় ঢুকে আর বেরোতে পারছিলাম না। সামনে ফাঁকা পেয়ে দ্রুত হাঁটতে গিয়ে নাকে ধাক্কা খেয়ে বসে পড়েছিলাম। যে জায়গাটাকে ফাঁকা ভেবেছিলাম, সেটা ছিল কাচের দেয়াল, এমন কাচ যেখানে প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে না। প্রতিবিম্ব আছে, তবে সে বাইরের খাড়াই কাচের দেওয়ালে। ঘাড় তুলে তাকিয়ে দেখি, দেওয়ালের মাথায় ঝুলে আছে কালো নীল আকাশের টুকরো মায়া, গাছের ফাঁকে আলোছায়া, উড়ালপুলের তরঙ্গ। এ ছবি আগে তো দেখিনি কোনও দিন!
আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে গ্রিসে গিয়েছিলাম কবিতা পড়তে। পারোস নামে একটা দ্বীপে রাশিয়া মায়ানমার নাইজেরিয়া আমেরিকা ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ থেকে ডেকে আনা আমাদের চোদ্দো জন লেখককে রাখা হয়েছিল।
আমরা বহু রাত পর্যন্ত আকাশ দেখতাম কেননা ওই দ্বীপে দুটো জিনিস দেখার ছিল। একটা হল আকাশ। আর একটা হল ভূমধ্যসাগর। দুটো দেখেই শেষ করা যায় না। অনন্ত মাধুরী।
আমাদের সঙ্গে ছিল সুন্দরী গ্রিক কবি এলেনা। সে সারাক্ষণ সিগারেট খেত। আমি জীবনে আর কোনও দ্বিতীয় সুন্দরীকে দেখিনি এত সিগারেট খেতে।
এক দিন তাঁকে আমরা খুঁজে পেলাম না। কোথায় এলেনা?
পুলিশে খবর দিতে হবে ভেবেই আমি আঁতকে উঠলাম। পরে আমরা আবিষ্কার করি, রাতের পোশাক পরে সে হাঁটতে বেরিয়েছিল বাইজানটাইন সভ্যতার খোঁজে। এই সেই দ্বীপ, এখান দিয়েই চলে গেছে বাইজানটাইন সভ্যতার লেজ। সেই ট্রেল ধরেই, সেই পায়ে হাঁটা পথ ধরে গিয়ে সে শুধু আকাশ আর আকাশরেখা দেখতে দেখতে নিজেই হারিয়ে গিয়েছিল।
আকাশ সরগমে
• আকাশে আজ রঙের খেলা (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়)
• ও আকাশ সোনা সোনা (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)
• আকাশ এত মেঘলা (সতীনাথ মুখোপাধ্যায়)
• এই এত আলো এত আকাশ (মান্না দে)
• পৃথিবীর গান আকাশ কি মনে রাখে (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)
• আকাশের অস্তরাগে (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়)
• নীল আকাশের নীচে এই পৃথিবী (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)
• আকাশ কেন ডাকে (কিশোরকুমার)
• ওই দূর দিগন্ত পারে যেথা আকাশ মাটিতে কানাকানি
(মহম্মদ রফি)
• পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগ্গা/ আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক মাটিতে অবজ্ঞা (কবীর সুমন)
পারোস দ্বীপের আকাশরেখা ছিল পিকাসোর কিউবিজম। ছোট ছোট এক তলা-দোতলা বাড়ি, পাহাড়ের ওঠা নামা, তার উপর দিয়ে উঠে গেছে নক্ষত্রের আকাশ, তৈরি করেছে এক অপরূপ আকাশরেখা। যেন এক্ষুনি পিকাসো নিজে হাতে আকাশরেখা এঁকে দিয়েছেন।
কলকাতার আকাশরেখা আমরা তৈরি করেছি, ভগবান তৈরি করেনি। আমাদের যা সামর্থ্য ধোঁয়া, চিমনি, বস্তি, পোষা পায়রার মাচা, রেডিয়ো-টিভির অ্যান্টেনা, কাক-চড়ুইয়ের ওড়াউড়ি, লাট খাওয়া ঘুড়ি, হঠাৎ হঠাৎ মাথা তুলে দাঁড়ানো মহীরুহ, হাড়পাঁজর বার করা গথিক স্টাইলের বাড়ির পাশে দুয়েকটা পাঁচ কি ছ’তলা... এত দিন এগুলোই ছিল আকাশলীনার প্রসাধন। তাই দিয়েই গড়া ছিল আমাদের আকাশ নিয়তি।
এখন প্রতিদিন গাছেরা খুন হচ্ছে, পাখিরা শহর ছাড়ছে। ঘুড়ি কোথায়, যে লাট খাবে! অ্যান্টেনা? সে তো ত্রেতা যুগে ছিল। হাইরাইজ-এ ভর করে মাথায় বাড়ছে কলকাতা। আকাশলীনার প্রসাধনে বদলের ধুম লেগেছে।
এর জন্য শুধু কর্পোরেট সমাজকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সারা পৃথিবীর আকাশ এখন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো। তারাই একটা শহরের চেহারা বানায়, তারাই ভাঙে, তারাই পুনর্নির্মাণ করে। তারা আকাশ কিনে নিচ্ছে। কলকাতার আকাশ এখনও তারা কিনতে পারেনি। কিন্তু পঞ্চাশ তলা বাড়ি বানানোর দিন এসে গেলেই তারা আমাদের আকাশলীনাকে আরও পাল্টে দেবে।
আমরা যে শোভাবাজারের গলির মোড়ে ভাঁড়ে চা খেতে খেতে কুমারটুলির মোড় ছাড়ানো জট পাকানো যে আকাশলীনাকে দেখতাম, তাকে আর দেখতে পাব না। দমদম-বেলঘরিয়া রেল লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের দঙ্গল এড়িয়ে যে ব্যস্ত আকাশলীনাকে দেখতাম তাকে আর দেখতে পাব না। বেলুড় থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত জলপথে আসতে আসতে যে শান্ত আকাশটা নুয়ে পড়ত গঙ্গার বুকে, সেও হয়তো একদিন বদলে যাবে।
আকাশরেখারও যে বিনির্মাণ হয় সেটা ভাবতে ভাল না লাগলেও সত্যকে মেনে নিতে হবে, একদিন কল্লোলিনী থেকে এই আকাশলীনাও হারিয়ে যাবে। মানুষ ইন্ডাস্ট্রি চায়, চাকরি চায়, দু’বেলা দু মুঠো পেটে দিতে চায়, আকাশ দিয়ে পেট ভরে না, তাতে যদি আকাশ হারিয়ে যায় কোনও ক্ষতি নেই। আকাশ হারাতে হারাতেই আকাশরেখা তৈরি করে। আমরা যেমন পিকনিক করতে জঙ্গলে যাই, জঙ্গলকে বাড়িতে নিয়ে আসি না, তেমনি আমরা বছরে একদিন আকাশ দেখার কর্মসূচি তৈরি করব, আমরা ডায়মন্ডহারবার যাব আকাশলীনাকে দেখতে।
আকাশরেখা দিয়ে যেমন বোঝা যায় একটা শহর গরিব না বড়লোক, যেমন বড়লোকদের দেখে বোঝা যায় তারা কতটা গরিবদের শহরে থাকে, তেমনি কলকাতার বস্তিগুলোতে দাঁড়ালেও একটা অনন্য আকাশরেখা চোখে পড়ে। বস্তি যেখানে, সেখানে একটা স্কাইরাইজ থাকবেই। হাইরাইজগুলো বেঁচে আছে বস্তিগুলোর ম্যানুয়াল সার্ভিসের ওপর।
গণেশের মা দুপুরে বাসন মেজে যখন চোদ্দো তলার ছাদে কাপড় মেলতে যায়, সে একবার মুখ তুলে আকাশে তাকায়, অবাক লাগে তার এতটা আকাশ আছে কলকাতায়! নীচের বস্তিতে লক্ষ্মী-সরস্বতী বিড়ি ধরায়, আর পাশেই চোদ্দো তলা ঘরের জানলা থেকে বৃদ্ধ মা ওপরে তাকান। আমেরিকার আকাশ থেকে তার ছেলের ফিরে আসার কথা। কবে ফিরবে, কেন ফিরবে কিছুই জানেন না তিনি, শুধু তাকিয়ে থাকেন কলকাতার আকাশরেখার দিকে যা ক্রমশ তাঁর চোখের দৃষ্টির মতো ঝাপসা হয়ে আসছে দিন দিন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.