চোরবাগান সুতানুটি পরিষদের বাইশতম শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর বসেছিল কৈলাশ বসু স্ট্রিটের লাহাবাড়িতে। ঝাড়বাতি না থাকলেও পুরনো জমিদার বাড়িতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের যে মজলিশ বসত তারই এক প্রতিচ্ছবি পাওয়া গেল এ দিন। উদ্যোক্তাদের তরফে প্রাসঙ্গিক কিছু কথার পর জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেদগানের মাধ্যমে সাঙ্গীতিক অনুষ্ঠানের সূচনা।
শুরু করলেন ধ্রুপদ গায়ক গুণ্ডেচা ব্রাদার্স। পণ্ডিত রমাকান্ত ও উমাকান্ত গুণ্ডেচা। ধ্রুপদের যে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, তার প্রতি যে নিষ্ঠা তাঁরা দেখিয়েছেন তা এক কথায় একটি সুন্দর উদাহরণ। ভাল ধ্রুপদ গায়নের সব ক’টি লক্ষণ ছিল শুরুর মূলতান রাগের আলাপে। মন্দ্র সপ্তক থেকে শুরু করে মধ্য ও তারসপ্তকে তাঁরা অতি নিপুণ ভাবে গানের মেজাজটিকে গড়ে তুললেন। ধ্রুপদ গানের বৈশিষ্ট্য রাগরূপ উন্মোচনে এক পরম্পরা রক্ষা করা, যা তাঁদের মধ্যে খুঁজে পেতে অসুবিধে হয় না। চৌতালে আবদ্ধ দ্রুত অংশে তাঁরা শোনালেন ‘বংশীধর পিনাকধর’। |
শিল্পীদ্বয়ের গায়কির স্বকীয়তা ও উৎকর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত হয়েছিল। আড়ানা রাগাশ্রিত ‘শিবাশঙ্কর দেব’ গানটি-সহ তাঁরা অনুষ্ঠান শেষ করেন। ধ্রুপদ ও ধামারের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তাই বারেবারে ফুটে উঠেছিল তাঁদের নিবেদনে। সঙ্গতকার হিসেবে তাপস দাস শিল্পীদের ভাবানুসরণ করেছেন।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে শিল্পীরা যেমন রাগের নাম উল্লেখ করে অনুষ্ঠান শুরু করেন, এ দিন শাহিদ পরভেজ তা করলেন না। কিন্তু তিনি তাঁর সেতার বাদনের মাধ্যমে সহজেই তৈরি করে দিলেন এমন এক অন্তরঙ্গ পরিবেশ, যা দিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে গড়ে তুললেন সংবেদনময় এক সেতু। অসামান্য এক আবহাওয়া তৈরি হল তাঁর বাদনে। তিনি বাগেশ্রী বাজালেন। আলাপ পর্যায়ে লম্বা সুরেলা মিড়ের মাধ্যমে বেশ একটা ধ্যানস্থ ভাব তৈরি করে ফেলেন তিনি। জোড় বা ঝালা অংশেও তাঁর স্বাভাবিক ক্রিয়াপরতা অনুষ্ঠানটিতে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। যে রাগই বাজান না কেন, তাঁর আবেগময় বাদনের মাধ্যমে রসঘন মেজাজটিই ফুটে উঠেছে ক্ষণে ক্ষণে। তবলায় অনুব্রত চট্টোপাধ্যায় অনবদ্য। |