চিমা ওকোরির গলার স্বর আচমকা বদলে গেল! দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাটে বসে বলে দিলেন, “বিজয়ন এই যুগের ফুটবলার হলে জীবনে কলকাতার ক্লাবে খেলত না।”
ফেড কাপের খেলা যে টিভি চ্যানেল দেখাচ্ছে, সেটা হায়দরাবাদে মহম্মদ হাবিবের বাড়িতে ধরে না। খবরের কাগজেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের নিয়মিত খোঁজ রাখেন। বাংলা ফুটবলে যা ঘটছে তাতে উচ্ছ্বাস কম, হতাশা-ই বেশি ‘বড়ে মিঞা’র গলায়। “ধীরেন দে, জ্যোতিষ গুহ, তাজ মহম্মদের মতো কর্মকর্তাদের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলা। আদর্শ টিম গড়তে যে ফুটবল-বুদ্ধি লাগে, সেটা ওখানকার কর্মকর্তাদের এখন নেই।”
চিমা-হাবিবের কথা শুনলে যদি মনে হয়, বাংলা ফুটবলের ‘শেষের শুরু’, তা হলে ভাইচুং ভুটিয়ার যুক্তি শুনলে অন্য ধারণা মনে হবে।
যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তির মধ্যেই ভারতের পাঁচ বিশিষ্ট ফুটবলার-কোচের সামনে তিনটে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল:
১) বাংলা ফুটবলের নিম্নমুখী
গ্রাফের আসল কারণ কী?
২) কী তার সমাধান?
৩) ভারতীয় ফুটবলের রাজধানী
কি এখন বাংলার বদলে গোয়া?
|
মহম্মদ হাবিব
১) স্থানীয় ফুটবলারের অভাব। বাংলায় প্রতিভা নেই বলব না। তবে প্রতিভার সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। যারা খেলছে সবাই যোগ্য নয়। যারা যোগ্য তারা সবাই সুযোগ পাচ্ছে না।
২) কর্মকর্তাদের দায়সারা মনোভাব বদলাতে হবে। ভারতীয় কোচেদের বেশি সুযোগ দিতে হবে। সুভাষ ভৌমিককে কলকাতার ক্লাব থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। সেই সুভাষই আই লিগে চার্চিলকে চ্যাম্পিয়ন করল। ফেড কাপেও ওর দল ফাইনালে।
৩) গোয়া অনেক বেশি পেশাদার। যে কোনও রাজ্যের খেলাধুলোর ভিত অ্যাকাডেমি। গোয়ায় অন্তত ৫০টা ফুটবল অ্যাকাডেমি আছে। আইএফএ সেখানে উদাসীন। বাংলাকে ছাপিয়ে যাওয়ার সব সম্ভাবনাই গোয়ার আছে ভবিষ্যতে।
চিমা ওকোরি
১) বাংলা পিছিয়ে পড়েনি। বরং ভারতের অন্য ক্লাবগুলো দ্রুত উন্নতি করেছে। তবে বাংলার ফুটবল ১৫-২০ বছর আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিভা, সুযোগ-সুবিধে, টাকায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে টক্কর দিচ্ছে গোয়া, বেঙ্গালুরুর ক্লাব। অকারণে কলকাতার বড় ক্লাবে খেলার টেনশন নিতে ফুটবলাররা আসবে কেন?
২) ইউথ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামগঞ্জ থেকে ফুটবলার তুলে আনতে হবে। টিমে তো সাত-আট জন ভারতীয়ও খেলে। তাদের থেকে যদি ঠিকঠাক সাহায্য না পাওয়া যায়, টিম জিতবে কী করে? অবিলম্বে পেশাদার স্কাউটিং টিম রিক্রুট করতে হবে। আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকার মতো।
৩) গোয়া দারুণ উন্নতি করলেও বাংলাকে টপকে গিয়েছে বলব না। তবে এখানে যদি তাড়াতাড়ি কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সেই দিন হয়তো খুব দূরে নয়।
ভাইচুং ভুটিয়া
১) বাংলা ফুটবলের গ্রাফ নিম্নমুখী বলা যাবে না। ইস্টবেঙ্গল শেষ চার বছরে তিন বার ফেড কাপ জিতেছে, দু’বার আই লিগ রানার্স, এএফসি কাপ সেমিফাইনাল খেলেছে। মহমেডান ডুরান্ড জিতেছে।
২) ইস্টবেঙ্গল নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। মোহনবাগানকে ধৈর্য ধরতে হবে। গোয়ার ক্লাব সাফল্য পাচ্ছে একই টিম ধরে রেখেছে বলে। মোহনবাগানের একটা মরসুম খারাপ গেলেই টিম বদলে ফেলছে। কোচ ছাঁটাই। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
৩) বাংলাতে খেলা এখনও স্বপ্নপূরণের মতোই।
আই এম বিজয়ন
১) আমাদের সময় কলকাতায় ফুটবল নিয়ে যে রকম পাগলামি দেখেছি, তার দশ শতাংশ নেই এখন। ফুটবলের প্রতি ভালবাসা কোথায়?
২) স্থানীয় ফুটবলারদের তুলে আনতে হবে। বিদেশি নির্ভরতা কাটাতে না পারলে বাংলা ফুটবলের উন্নতি হবে না।
৩) পরিসংখ্যাই বলছে গোয়া যে বাংলাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ২০০৩-র পর সব আই লিগ গেছে গোয়ায়। এক বার মুম্বইয়ে।
ডগলাস ডি’সিলভা
১) কলকাতার ক্লাবে আগে ফুটবলার বাছা হয়, সবশেষে কোচ। কোচের হয়তো দরকার এক রকমের টিম, অথচ পেলেন অন্য রকম। সাফল্য আসবে কী করে? সুভাষ ভৌমিক যে ব্রাজিলে গিয়ে আমার কত ম্যাচ দেখার পরে ইস্টবেঙ্গলে নিয়েছিলেন, তার ঠিক নেই।
২) কলকাতায় দ্বিগুণ খাটতে হয়। প্রচণ্ড দায়বদ্ধতা না থাকলে এক মরসুমের বেশি টেকা যায় না। প্রথম দু’বছর মিডিয়াকে এড়িয়ে চল। না হলে শুরুতেই সুপারস্টারের তকমার বাড়তি চাপ।
৩) গোয়ায় এখন টাকা আছে, দায়বদ্ধতাও আছে। বাংলায় এখন শুধু টাকা আছে, দায়বদ্ধতা শূন্য। |