বাগানের প্রতিপক্ষ এখন ওডাফার ‘দাদাগিরি’

২৪ জানুয়ারি
ফেড কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর হোটেলে গিয়ে ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই স্টেডিয়ামে ফিরে এসেছিলেন ওডাফা ওকোলি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত গ্যালারির নীচের একটি ঝুপড়ি মতো ঘরে বসে ছিলেন! ঈগলস এফসি-র নাইজিরিয়ান বন্ধু কোকোর সঙ্গে।
বাগান অধিনায়ককে কে পরামর্শ দিয়েছেন, ভারতীয় দলের এক পার্ট টাইম ফিজিও জিজি জর্জ এখানে থাকেন, ওঁর কাছে যাও, তোমাকে সুস্থ হওয়ার পথ বাতলে দিতে পারবেন। সে জন্যই অপেক্ষা। জিজিকে শেষ পর্যন্ত চোট দেখানোর সুযোগ পাননি গোলমেশিন। জিজি শুক্রবার ফোনে বললেন, “কোকো আমায় ফোন করেছিল ওডাফাকে দেখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তখন বাড়ি ফিরে এসেছি। দেখা হয়নি।”
ওডাফার যা চোট সেটা অন্তত এক বছর বিশ্রামে না থাকলে সুস্থ হওয়ার নয়, জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতার সেরা চিকিৎসক-ফিজিওরা। তাঁদের নিদান, টুকটাক পাস করলে সমস্যা হবে না। কিন্তু জোরে শট মারার চেষ্টা করতে গেলেই খোঁড়াতে হবে ওডাফাকে। আর তাঁর ট্রেডমার্ক গোলার মতো শট নিতে না পারলে গোল পাবেন কী করে? গোল-ই তো গোলমেশিনের ইউএসপি। তাই চোট সারাতে পাগলের মতো দু’কোটির বাগান স্ট্রাইকার যেখানে পারছেন, দৌড়াচ্ছেন। ফেড কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর হতাশ এবং বিমর্ষ দেখাচ্ছিল ওডাফাকে। হেরে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে বলছিলেন, “ভাবতেই পারিনি ছিটকে যাব। এ বার ভেবেছিলাম ট্রফিটা আসবে।”
কিন্তু যে টুর্নামেন্টে সবাই ধরে নিয়েছিল বাগানের হাতেই ট্রফি, সেখানে চার্চিলের মতো আই লিগের লাস্ট বয় কী ভাবে এত সহজে ভোকাট্টা করে দিল করিম বেঞ্চারিফার হাইপ্রোফাইল টিমকে? চার্চিলের দুই বিদেশি অ্যান্টনি উলফ বা আব্দেল হামিদ সাবানা মনে করছেন, এর জন্য ওডাফাই ষাট শতাংশ দায়ী। টিমের হয়ে ১-২ করলেও, মাঠের মধ্যে জুনিয়র ফুটবলারদের তাঁর হম্বিতম্বি, গালাগালি টিমের উপর প্রভাব ফেলেছে।
কাঠগড়ায়
চার দফা অভিযোগ
• পুরো ফিট নন
• তিন বছরেও ট্রফি দিতে না পারা
• বল পায়ে স্বার্থপর
• জুনিয়রদের প্রকাশ্যে গালিগালাজ
“মাঠের মধ্যে ওকে মনে হচ্ছিল হেডমাস্টার। সব সময় বকবক করছে। চিৎকার করছে। হয় রেফারিকে না হলে নিজেদের ফুটবলারকে। আমি আফ্রিকার বহু সেরা ক্লাবে খেলেছি, কখনও এ রকম দেখিনি।” বলছিলেন বৃহস্পতিবার বাগানকে ফেড কাপ থেকে ছিটকে দেওয়ার প্রধান নায়ক সাবানা। ফাইনাল খেলতে নামার আগের দিন অনুশীলনে কোচি স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে মিশরের সেরা ক্লাব আল আহলিতে টানা চার বছর খেলে আসা চার্চিল মিডিও বললেন, “ওডাফা বড় প্লেয়ার। কিন্তু টিম ম্যান নয়। ও ক্যাপ্টেন, জুনিয়রদের সঙ্গে ওর ব্যবহার দেখে খারাপ লেগেছে।”
চার্চিলের আর এক স্ট্রাইকার ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর বিশ্বকাপার অ্যান্টনি উলফও মানছেন, ওডাফার কাছে সব বল আসায় চার্চিলের জয়ের পথটা মসৃণ হয়ে গিয়েছিল। “সবাই যেখানে যা বল পাচ্ছে, ওকে দিচ্ছে। ওডাফা ভাল গোলগেটার। কিন্তু তাই বলে টিম গেমে ওকেই সব বল দিতে হবে, হয় না কি? সে জন্যই আমরা ঠিক করেছিলাম, ওকে আটকে রাখলেই সমস্যা কমে যাবে।”
গত তিন বছর বাগানে খেলছেন ওডাফা। প্রায় ছয় কোটি টাকা তাঁকে দিয়েছে মোহনবাগান। কিন্তু একটা ট্রফিও তিনি দিতে পারেননি ক্লাবকে। গোল করেছেন প্রচুর। গত দু’বছর ৭৩ ম্যাচে ৭৭ গোল আছে তাঁর। একশো শতাংশেরও বেশি সাফল্য। আর এ বারও খোঁড়াতে খোঁড়াতে ১৫ ম্যাচে ১০ গোল করে ফেলেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভাল। তা সত্ত্বেও হোসে ব্যারেটোর পাশে তিনি ফ্যাকাশে। চূড়ান্ত ব্যর্থ। দু’টো আই লিগ এবং ফেড কাপ বাগানকে দিয়েছেন সবুজ-তোতা। কিন্তু কলকাতা লিগও জেতাতে পারেননি ওডাফা। আর সে জন্যই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ওডাফা বাগানের সম্পদ না বোঝা? শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ‘ধমক চমক’ দিয়ে সব বল নিয়ে গোল করতে যাবেন, বর্তমান ফুটবলে এ রকম ফুটবলার দলের পক্ষে কতটা ভাল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। টিমের একাধিক ফুটবলার কোচি ছেড়ে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছেন, “ওডাফার ভয়ে তো জুনিয়ররা কাঁটা। এত গালাগালি করে। ওই তো বেশি চাপে ফেলে দিয়েছিল পুরো টিমকে।”
কিছু দিন আগে যুবভারতীতে রাম মালিককে ড্রেসিংরুমের ভিতরে চড় মারার অভিযোগ উঠেছিল ওডাফার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনাল ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে লেফট ব্যাক শৌভিক ঘোষকে বসানোর জন্য করিমকে চাপ দিতে থাকেন তিনি। ম্যাচের পর মাঠেই রাম মালিক, পঙ্কজ মৌলাকে প্রকাশ্যেই গালিগালাজ করতে দেখা যায় তাঁকে। ড্রেসিংরুমে ফিরে তাঁর রোষে পড়েন প্রীতম, শৌভিক, পঙ্কজরা। টিমের জুনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে অধিনায়ক এ রকম বিশ্রী আচরণ করছেন দেখেও চুপ করে থাকেন ‘কঠোর’ কোচ করিম। ক্লাবের নতুন রসায়নে মোহন-কোচ চাইছেন না চার্চিলের স্মৃতি ফিরে আসুক। কারণ চার্চিলে খেলার সময় এই রকম ‘দাদাগিরি’ করতেন বলেই ওডাফার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল করিমের। ছাড়তে হয়েছিল গোয়ার ক্লাব। মোহন-কর্তারাও ওডাফাকে কিছু বলেন না। বরং প্রশ্রয়ই দেন। তাঁর আপত্তিতেই র‌্যান্টি মার্টিন্সকে টিমে নেননি তাঁরা। সমস্যা হবে বলে নেওয়া যায়নি জেমস মোগাকেও। তবে দেরিতে হলেও মোহন-কর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরের বার রাখা হবে না ওডাফাকে।
ফেড কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর মোহন-কর্তারা অবশ্য অখুশি নন। সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু বললেন, “হারলেও দল ভাল খেলেছে। এই জুনিয়র টিমটাকে ধরে রাখব আমরা। ভবিষ্যতে সুফল পাব।” সাড়ে তিন বছর ট্রফিহীন দল সাড়ে চার বছরেও ট্রফি পাবে কি না ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু আজ মারিয়ানো ডায়াসের চার্চিল বনাম অস্কার ব্রুজোর স্পোর্টিং ক্লুবফেড কাপ ফাইনালের গোয়ান ডার্বিতে কী হবে? চার্চিল কখনও ফেড কাপ পায়নি। সে জন্য সাবানা-লেনিরা মরিয়া। টিডি সুভাষ ভৌমিক ফাইনালেও থাকবেন না রিজার্ভ বেঞ্চে। শুক্রবার সকালে তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়েছে। তবে আসছেন চার্চিল প্রধান চার্চিল আলেমাও। স্পোর্টিং ক্লুব আবার আই লিগের ৩-২ হারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। কালু, বৈমারা এ দিন অনুশীলনের পর বলে গিয়েছেন, “কঠিন ম্যাচ। ট্রফি জিতব আমরাই।”

শনিবারে ফেড কাপ ফাইনাল—
স্পোর্টিং ক্লুব: চার্চিল ব্রাদার্স (কোচি ৭-৩০)।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.