|
|
|
|
বিদেশি লগ্নি টানতে শেষ বেলায় বাজি চাষের জমি
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৪ জানুয়ারি |
চাষের জমি কিনে আবাসন প্রকল্প হলে, তাতে বিদেশি লগ্নির অনুমতি আছে। কিন্তু আবাসন গড়ার জন্য চাষের জমি কেনা যায় না বিদেশি অর্থে। মেয়াদ ফুরিয়ে আসার মুখে মনমোহন সরকার এ বার সেই দরজা খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে।
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ধারণা, বিদেশি লগ্নির খরা কাটতে পারে এতে। লোকসভা ভোটের আগে দেশের বেহাল অর্থনীতিকে কিছুটা অন্তত চাঙ্গা করে তোলার তাগিদে এই দাওয়াই নিয়ে আলোচনা চলছে সরকারের অন্দরে। প্রস্তাবের ভাল-মন্দ খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কমল নাথ এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে নিয়ে মন্ত্রিসভার একটি বিশেষ কমিটিও তৈরি হয়েছে।
চাষের জমি নিয়ে এই প্রস্তাবের প্রবল বিরোধী বামেরা। তাঁদের বক্তব্য, এতে কৃষকদের সর্বনাশ হবে। ফাটকাবাজির জন্য চাষের জমি কিনে নেওয়া হবে। দেশের খাদ্য সুরক্ষাও প্রশ্নের মুখে পড়বে। প্রস্তাবটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিজেপি-রও। প্রধান বিরোধী দলের যুক্তি, সবটাই আসলে রাজনৈতিক চমক। দেশের অর্থনীতিকে মনমোহন সরকার এতটাই নীচে টেনে নামিয়েছে যে, শেষ বেলায় এই ভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টায় কোনও ফলই মিলবে না।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, কৃষিজমি নিয়ে ফাটকাবাজি রুখতেই এত দিন আবাসন প্রকল্প বা পরিকাঠামো তৈরির জন্য চাষের জমি কেনার ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজির প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবাসন, টাউনশিপ, পরিকাঠামো ও নির্মাণ প্রকল্পে সরাসরিই ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির অনুমতি দেওয়া আছে। সিংহভাগ ক্ষেত্রে ওই সব বড় প্রকল্প চাষের জমির উপরেই গড়ে উঠছে। কিন্তু সেই জমি কেনার কাজে বিদেশি অর্থ কাজে লাগানো যায় না বলে অনেক সংস্থা ঘুরপথে সেই কাজ করতে গিয়ে ফ্যাসাদে পড়ছে। ইতিমধ্যেই বহু সংস্থাকে কোটি কোটি টাকা জরিমানাও দিতে হয়েছে এ জন্য। নগরোন্নয়ন মন্ত্রক মনে করছে, চাষের জমি কেনার জন্যও বিদেশি পুঁজি আসতে দিলে আবাসন ক্ষেত্রেও লগ্নির অভাব হবে না।
মন্ত্রিসভার কাছে পাঠানো প্রস্তাবে কমল নাথের মন্ত্রক যুক্তি দিয়েছে, অর্থের অভাবে বহু আবাসন প্রকল্পের কাজই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। কারণ আবাসন প্রকল্পের জন্য চাষের জমি কেনার দরকার হলে ব্যাঙ্ক তার জন্য ঋণ দেয় না। একমাত্র বড় মাপের নির্মাণ প্রকল্প, যেখান থেকে ভবিষ্যতে নতুন আয় তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে ছাড় রয়েছে। তার ফলে প্রোমোটাররা ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতাদের থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে জমি কেনেন। চাষের জমিতে আবাসন গড়তে ছাড়পত্র নিতে হয়। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। আগাম টাকা দিয়েও সমস্যায় পড়েন ক্রেতারা। চাষের জমি কেনার জন্যও বিদেশি পুঁজি ব্যবহার করতে দিলে এ রকম অনেক সমস্যা মিটে যাবে।
এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় তিন মন্ত্রীকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কমিটি। ইউপিএ-নেতৃত্ব মনে করছেন, সরকারের মধ্যে মতপার্থক্য কাটিয়ে ফেলতে পারলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না। কারণ এ নিয়ে সংসদমুখো হওয়ারও কোনও প্রয়োজন নেই। ফলে রাজনৈতিক বিরোধিতায় সিদ্ধান্ত আটকে যাওয়ারও আশঙ্কা নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও অর্থনীতির কোনও লাভ হবে না বলেই বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির দাবি। তাঁর যুক্তি, “ইউপিএ সরকার এ পর্যন্ত যে সব জায়গায় বিদেশি লগ্নির অনুমতি দিয়েছে, কোনও লগ্নি আসেনি সেখানে। নতুন ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিয়েও আর লাভ হবে না। পুরোটাই রাজনৈতিক চমক। সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব অর্থনীতির যে বেহাল দশা করেছে, তাতে শেষ বেলায় চেষ্টা করে কোনও লাভই হবে না।” রাস্তায় নেমে এর বিরোধিতা করবে বলে ঘোষণা করেছে সিপিএম। দলের কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, “জমি এমনিতেই দুর্লভ। আসলে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কর্পোরেট সংস্থা ও আমলারা সরকারের কাছে লবি করছে। এতে কর্পোরেট সংস্থা ও প্রোমোটাররাই ফাটকাবাজি করে ফায়দা লুটবে। কৃষকদের কিছু লাভ হবে না।” |
|
|
|
|
|