অবশেষে বাইপাসের ধারে মেট্রো রেলের লাইন পাতার জন্য জমি জট ঘুচল। গড়িয়া থেকে দমদম বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের জন্য ধাপার কাছে ২২ বিঘা জমি দরকার মেট্রো কর্তৃপক্ষের। ওই জমি কলকাতা পুরসভার। কিন্তু সেখানে চাষ করে সংসার চালান ৭৭ জন কৃষক। তাঁদের দাবি ছিল, জমি নিতে হলে তাঁদেরকে ক্ষতিপূরণ (সোলাসিয়াম) দিতে হবে। কিন্তু তার পরিমাণ কাঠা প্রতি কত হবে, তা নিয়ে মাস কয়েক ধরে দরাদরি চলছিল। কৃষকদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শুক্রবার পুর-প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেডের(আরভিএনএল) প্রতিনিধিরা। সেখানেই চূড়ান্ত হয়, কাঠা প্রতি ৫২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বৈঠকে হাজির ছিলেন পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার, পুর কমিশনার খলিল আহমেদ এবং আরভিএনএলের মুখ্য প্রজেক্ট ম্যানেজার অমিত রায়। দেবব্রতবাবু বলেন, “জমি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে সমস্যা মিটল। সোলাসিয়ামের টাকা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ পুরসভার কাছে জমা দেবেন। তার পরেই তা কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, ২২ বিঘা জায়গার মধ্যে ১০ বিঘা জমিতে হবে দু’টি স্টেশন। বাকি ১২ বিঘা জমিতে রেল লাইন বসানোর করিডর হবে। ১২ বিঘা ওই জমিতে মোট ৪০ জন চাষ করেন। সেই জমি মেট্রো রেল ব্যবহার করবে ঠিকই, তবে তার মালিকানা পুরসভার হাতেই থাকবে বলে জানিয়েছেন দেবব্রতবাবু। আর যে ১০ বিঘা জমিতে স্টেশন হবে, সেখানে চাষ করেন আরও ৩৭ জন চাষি। তাঁদের সোলাসিয়াম দেবে মেট্রো। ওই দু’টি স্টেশনের জন্য চিহ্নিত জমি মেট্রো রেলকে হস্তান্তর করবে পুরসভা। এবং তার জন্য মেট্রো রেলকে দাম দিতে হবে বলে ইতিমধ্যেই পুরসভা জানিয়ে দিয়েছে।
তবে চাষিদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দু’পক্ষ একমত হলেও ১০ বিঘা জমির দাম দেওয়া নিয়ে বিতর্ক কাটেনি। আরভিএনএলের বক্তব্য, কলকাতার উন্নয়নে ওই মেট্রো প্রকল্প হচ্ছে। তাই জমির দাম নেওয়া উচিত নয়। যদিও তা মানতে নারাজ পুর প্রশাসন। মেয়র পারিষদ দেবব্রতবাবুর বক্তব্য, “পুরসভা ওই জমি মেট্রো রেলের নামে লিখে দেবে কিন্তু দাম নেবে না, তা হয় নাকি?” তিনি বলেন, “প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মেট্রো ও পুর প্রশাসনের বৈঠক হয়েছিল। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, পুরসভার জমি কিনতে দাম দিতে হবে। তা ছাড়া আমরা তো বাজারদর
চাইছি না। আলাপ-আলোচনা করে দর ঠিক হোক।”
অন্য দিকে আরভিএনএলের পক্ষে অমিতবাবু বলেন, “ওই ধরনের কোনও সিদ্ধান্তের কথা আমার জানা নেই। জনসাধারণের প্রয়োজনে ওই প্রকল্প হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সে ভাবেই দেখা হোক।” এ ব্যাপারে পুর প্রশাসনের সঙ্গে আরও আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান। তবে চাষিদের সোলাসিয়াম দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ায় খুশি আরভিএনএল কর্তৃপক্ষ। চাষিদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে মেট্রো রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। |