লাগামছাড়া অটো-দৌরাত্ম্য রুখতে এ বার রাস্তায় নামবেন পরিবহণমন্ত্রী নিজেই। শুক্রবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পরে এ কথা জানিয়েছেন মদন মিত্র। আজ, শনিবার থেকেই তিনি শহরের মোড়ে মোড়ে গিয়ে অটোর উপরে নজরদারি চালাবেন।
অটোকে শাসন করতে লালবাজারে পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। অটো নিয়ে যাত্রীদের কোনও অভিযোগ থাকলে এত দিন ‘১০৭৩’ হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে জানাতে হত। এ বার ওই নম্বরে একটি পৃথক কন্ট্রোল রুম খুলছে কলকাতা পুলিশ। সেখানে পুলিশ ছাড়াও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পরিবহণ দফতরের অফিসারেরাও থাকবেন। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওই কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। যাত্রীদের অটো সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ এলে পুলিশ যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে, সে জন্যই ২৭ তারিখ থেকে ওই কন্ট্রোল রুম চালু করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
গত এক সপ্তাহে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় পরপর তিন অটোচালকের অভব্য আচরণের ঘটনা সামনে এসেছে। খুচরো দিতে না-পারায় তারাতলায় এক মহিলাকে চড় মারে এক অটোচালক। এর পরে পার্ক সার্কাসে ভাড়া বেশি দিতে না চাওয়ায় এক মহিলাকে রড দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় আর এক জন। মঙ্গলবার রাতে মত্ত অবস্থায় অন্য এক অটোচালক গড়িয়ার রামগড়ে এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দিলে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ ও প্রশাসন। |
অটোকে কী ভাবে শাসন করা যায়, তা নিয়ে এ দিন কলকাতা পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ-সহ কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে দুপুর আড়াইটে থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। ছিলেন পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৈঠকের পরে মন্ত্রী বলেন, “অটোচালকদের গাড়ির কাগজপত্র ঠিকঠাক রাখতে বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট রুটেই গাড়ি চালাতে বলা হয়েছে। কাটা রুটে গাড়ি চালানো যাবে না। কোনও রকম অনিয়মের ক্ষেত্রে পুলিশ ধরতে পারলে অটো আটক করবে।” তিনি বলেন, “অটোচালকদের শৃঙ্খলা মেনে চলতে বলছি। আমি নিজে শনিবার থেকে এ সমস্ত দেখতে রাস্তায় নামব।”
লালবাজার সূত্রের খবর, আজ, শনিবার বেলা এগারোটা থেকে পরিবহণমন্ত্রী ও কলকাতা পুলিশের কর্তারা রাসবিহারী, গড়িয়াহাট, শিয়ালদহ-সহ কলকাতার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অটো-শাসনে নামবেন। এ ছাড়াও, অটোকে শাসন করতে ২৭ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি-অভিযানেও নামবে কলকাতা পুলিশ।
অটোচালকদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনতে ট্যাক্সিচালকদের মতো তাঁদেরও বিশেষ পোশাক চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চালু করা হবে হাই-সিকিউরিটি নম্বর প্লেটও। বন্ধ করা হবে অটোর মধ্যে মিউজিক সিস্টেম চালানোও। পুলিশ তল্লাশিতে নেমে অটোয় মিউজিক সিস্টেম পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। যদিও পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, গত দু’বছর ধরেই পরিবহণমন্ত্রী অটোয় এই সব নিয়ম চালুর আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কেন হয়নি আর কবেই বা এই সব ব্যবস্থা চালু হতে পারে, তা নিয়ে অবশ্য সদুত্তর নেই পরিবহণ-কর্তাদের কাছে।
অটো-শাসনে মন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে প্রত্যাশিত ভাবেই স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতারা। মন্ত্রীর পদক্ষেপে সায় রয়েছে বিরোধী শ্রমিক সংগঠন সিটু-রও। তবে সিটুর অটো ইউনিয়নের নেতা বাবুন ঘোষের মতে, “আমরাও আইনের অনুশাসন চাই। কিন্তু অটোয় গুন্ডামি এত দিন ধরে প্রশ্রয় দিয়েছে শাসকদলই। আমরা চাই, এ সবের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। প্রশাসনেরই এ সব দেখার কথা। মন্ত্রী আগেও এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাজের কাজ হয়নি।”
অটোর সঙ্গে সঙ্গে এ দিনের বৈঠকে ট্যাক্সি নিয়েও দু’একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে কলকাতার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া, যাত্রীদের সুবিধার্থে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ফোন বুথ রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের কর্তারা। |