লগ্নি টানার জন্য ভারতকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ। এ জন্য কেন্দ্রকে অর্থনীতিকে আরও আঁটসাট করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। লগ্নির অনুমোদনের ক্ষেত্রে শ্লথ গতি ভারতে নয়া বিনিয়োগ টানতে অন্যতম বাধা বলে শুক্রবার দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে জানিয়েছেন লাগার্দ।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন পদক্ষেপের জেরে আগামী দিনে দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার আয়ত্ত্বের মধ্যে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইএমএফ প্রধান। শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে ভাবে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার উপর জোর দিচ্ছে, এ দিন সেই পদক্ষেপের প্রশংসাই শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ধরনের পদক্ষেপ সুফল দিয়েছে বলেও জানান তিনি। সে কারণে তাঁর আশা রঘুরাম রাজনের নেতৃত্বে ভারতের ক্ষেত্রেও তা আগামী দিনে ভাল ফল দেবে। তবে সব কিছু ঠিকঠাক চালাতে আগামী দিনে দেশে মূলধন জোগান বজায় রাখা এবং দুনীর্তি মেটানোর দিকে নজর দিতে হবে বলে তাঁর মত।
এ দিনই বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং পূর্বাভাস নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেখানে চলতি বছরে (২০১৪) দেশের অর্থনীতি ৫.৩% হারে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। যা ২০১৩-র ৪.৮ শতাংশের চেয়ে বেশি হলেও, প্রত্যাশার তুলনায় কম। মূলত ক্রেতা চাহিদা কম থাকা এবং বিনিয়োগ কম হওয়ার কারণেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধি চলতি বছরে প্রত্যাশামতো হবে না বলে মত রাষ্ট্রপুঞ্জের।
অবশ্য ভারতের অর্থনীতি আগামী দিনে ফের ঘুরে দাঁড়াবে বলেই প্রকাশিত ওই রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে দেশে ভাল বর্ষা হলে, নয়া বিনিয়োগ আসতে শুরু করলে এবং বিশ্ব বাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় রফতানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় উৎপাদন আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে তা ২০১৫ সালে ৫.৭% ছুঁতে পারে। সে ক্ষেত্রে কমবে মূল্যবৃদ্ধিও। অর্থনীতির চাকা ঘুরবে বলে শুক্রবার আশা প্রকাশ করেছেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। কোনও সময়সীমা না জানালেও, জাতীয় উৎপাদন আগামী দিনে ৭ শতাংশে পৌঁছবে বলে এ দিন মন্তব্য করেন তিনি। তবে সে জন্য আসন্ন বাধা বুঝতে পারা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি বলেও তাঁর মত।
আগামী তিন বছর ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি বাড়বে বলে এ দিন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে আশা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। পাশাপাশি, রাজকোষ ঘাটতি ৪.৮ শতাংশে বেঁধে রাখা যাবে বলে শুক্রবার ফের মন্তব্য করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। এ কথা জানালেও, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ঘাটতি কমাতে সোনা আমদানির উপর যে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছিল, তা শিথিল করা হবে কি না, এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি মন্ত্রকের সচিব সুমিত বসু। বরং সরকার আগে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ঘাটতি কমানোর উপরই বেশি জোর দেবে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
শুধুমাত্র ভারত নয়, ব্রাজিলের মতো ব্রিক অঞ্চলের দেশের ক্ষেত্রেও নগদ জোগান বড় সমস্যা বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে প্রকাশ। কিন্তু আগামী দিনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ-সহ উন্নয়নশীল দেশগুলি ঘুরে দাঁড়াবে বলে তাদের আশা। পাশাপাশি, ইউরোজোন ও মার্কিন আর্থিক বৃদ্ধি সব মিলিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে ওই রিপোর্ট। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধি ২০১৪ সালে ৩% এবং পরের বছর ৩.৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের মত। |