সারা বছর ধরে ওরা কেউ কাঠ মিস্ত্রী, কেউ রঙের মিস্ত্রী, কেউ বা সাদামাটা ভ্যানচালক। প্রথাগত ভাবে প্রতিমা বা মণ্ডপ তৈরির কোনও তালিমই নেই। অথচ সরস্বতী পুজোর আগের ছ’মাস পাট কাঠি, পাটের তন্তু হাতে এঁরাই বিশ্বকর্মা হয়ে উছেছেন। কালনার হাটকালনা পঞ্চায়েতের রঙপাড়া গ্রামের ওই জনা পঞ্চাশ যুবকের এখন একটাই লক্ষ্য, কী করে সরস্বতী পুজোর দিনগুলোয় লোক টানা যায় আরও বেশি।
শহরের বেশিরভাগই ক্লাবই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ, প্রতিমা, আলোকসজ্জায়। গ্রামের মণ্ডপগুলিতেও কোথাও দেখা যায় রঙবাহারি আল্পনা, কোথাও কচি হাতের ছোঁয়া। বড় ক্লাবগুলি আবার পেশাদার শিল্পীদের আনায়। তবে হাটকালনার প্রত্যন্ত এই গ্রামটি এ বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে ধরেছে। মাস ছয়েক আগে একটি বৈঠক করে গ্রামবাসীরা ঠিক করেন, বাইরের শিল্পী নয়, নিজেরাই পাট ও পাটকাঠি দিয়ে মণ্ডপ গড়বেন। গ্রামবাসীরাই জানান, আগের বছর রাজ্য ক্ষুদ্র ও কুটীর শিল্প দফতরের তরফে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁরা। |
এখন রঙপাড়ায় গেলেই চেখে পড়ছে গোটা গ্রাম একজোট হয়ে হাত লাগিয়েছে পুজোর কাজে। কেউ শিল্পকর্ম নিয়ে ব্যস্ত, কেউ আবার গ্রামে গ্রামে ঘুরে মণ্ডপসজ্জার উপকরণ জোগাড় করছেন। গ্রামের একটি দরমার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, পাটের তন্তু দিয়ে ফুট পাঁচেকের প্রতিমা বানানোর কাজ প্রায় শেষ। আশপাশের বাড়ির উঠোনে, দাওয়াই এক মনে মণ্ডপসজ্জার কাজে ব্যস্ত কিছু যুবক। কিছুটা দূরেই যুবশক্তি ক্লাব। ক্লাবের সদস্যেরা জানান, এ বছর তাদের থিম সাত পাকে বাঁধা। বিয়ের অনুষ্ঠানের ধাঁচে পুরো মণ্ডপটি সাজানো হবে। প্রতিমার সঙ্গে মণ্ডপের মধ্যে খাট, বিছানা, সোফা, ফ্রিজ, আলমারি সবই রাখা হবে। এই সবই তৈরি করা হচ্ছে পাট দিয়ে। বিয়েবাড়ির মতোই কফি, ফুচকার স্টলও থাকবে। সেসবও তৈরি হবে পাট দিয়ে। উদ্যোক্তারা জানান, দর্শকদের নজর কাড়ার জন্য বেশ কিছু পাটকাঠির মডেলও থাকবে। মণ্ডপসজ্জার কাজে ব্যস্ত প্রতীত বৈরাগ্য, গোপাল বারুই, সঞ্জিত মণ্ডলের বলেন, “শেষ সাত দিন দিন-রাত এক করে কাজ হবে। আশা করি আমাদের ভাবনা, কাজ মানুষকে হতাশ করবে না।” প্রতিমা তৈরির তিন কারিগর গোপাল বারুই, মিঠুন শিকদার ও লক্ষ্মণ বারুইদের কথায়, “ঝুঁকি আছে ঠিকই। তবে আমরাও ধারাবাহিক পরিকল্পনা করে এগিয়েছি।” ক্লাব সম্পাদক মিঠুন শিকদার বলেন, “এ বছর ৩০ বছরে পড়ছে পুজো। অন্য ধরণের প্রতিমা ও মণ্ডপ তো হবেই, গোটা গ্রাম সাজানো হবে রঙবাহারি আলোয়। আর মান্না দে-কে স্মরণ করে তারই গান বাজানো হবে মণ্ডপে।”
|