নদীর পাড়ের মাটি খুঁড়ে অবাধে চুরি হচ্ছে মূল্যবান স্ফটিক পাথর। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটছে সালানপুর ব্লকের বরাকর নদ সংলগ্ন এলাকায়। এর ফলে শুধু যে মূল্যবান খনিজ সম্পদ চুরি হচ্ছে তা নয়, ভূমিক্ষয়ও হচ্ছে লাগামছাড়া। কী ভাবে এই চুরিতে লাগাম টানা সম্ভব তা নিয়ে ভাবনায় প্রশাসনের কর্তারাও। সালানপুরের দেন্দুয়া ও আল্লাডি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বরাকর নদের পাড় লাগোয়া এলাকায় গেলেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মাটি খোঁড়ার কাজ চলছে। তোলা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ স্ফটিক পাথর। সিদাবাড়ি, বাথানবাড়ি, সবুজদ্বীপ, হদলা, কালীপাথর, বাঁশকেটিয়া অঞ্চলে এই কাজে জড়িত রয়েছেন কয়েকশো মানুষ। কী ভাবে হচ্ছে সেই কাজ? দেখা গেল, গাঁইতি, কোদাল দিয়ে প্রথমে মাটির বেশ কিছুটা অংশ কেটে গর্ত করা হচ্ছে। উপরিভাগের লাল মাটি কয়েক ফুট কেটে নেওয়ার পরেই এবড়ো-খেবড়ো সাদা পাথরের স্তর বেরিয়ে আসছে। এর পরে সেই পাথরের স্তর শাবল দিয়ে ভেঙে টুকরো করে তুলে এক জায়গায় জড়ো করা হচ্ছে। পরে সুবিধা মতো সেই পাথর ডাম্পারে চাপিয়ে পাচার করা হচ্ছে। মাটি কেটে ভূগর্ভ থেকে সেই পাথর তোলার কাজ করছেন স্থানীয় গ্রামবাসীর একাংশ। এমনই এক জন বাসিন্দা শেখ কামরুদ্দিন জানান, দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিতে তাঁরা এই পাথর তোলার কাজ করেন। |
তবে এই কাজ যে বেআইনি তা তাঁদের জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি। সম্প্রতি বাথানবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভূগর্ভ থেকে তুলে ডাঁই করে রাখা সেই পাথর ডাম্পারে চাপানো হচ্ছে। সেই কাজ যিনি দেখাশোনা করছেন তিনি জানান, ক্রাশার যন্ত্রে এই পাথর গুঁড়ো করার পরে বস্তাবন্দি করে দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় পাচার করা হয়। কয়লা ছাড়া অন্য নানা খনিজ সম্পদের হাল-হকিকত হদিস রাখার দায়িত্বে রয়েছে আসানসোলের চিফ মাইনিং অফিসারের দফতরে। এই দফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি ভাষায় এই স্ফটিক পাথরকে কোয়ার্টজ বলা হয়। দফতরের আধিকারিকেরা জানান, এই পাথর সিরামিক ও টাইলস তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া মার্বেল ও মার্বেল সামগ্রী পালিশের কাজেও ব্যবহৃত হয়। সালানপুর এলাকায় এই খনিজ তোলার ব্যাপারে কোনও সরকারি অনুমোদন কেউ নিয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে আসানসোলের সহকারি চিফ মাইনিং অফিসার জয়দেব দাস বলেন, “এই ধরনের পাথর খননের কোনও রকম অনুমতি আমরা দিইনি।” তিনি আরও জানান, এই চোরাই কারবার রোখার জন্য তাঁরা মাঝে মাঝে অভিযান চালান। তার পরে দিন কয়েক এই কারবার বন্ধ থাকে। কিন্তু কিছু দিন পরে ফের শুরু হয়ে যায়। আবার অভিযান চালানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। জয়দেববাবু বলেন, “আমরা এই পাথর পাচার রুখতে পুলিশের কাছেও লিখিত আবেদন জানাচ্ছি।”
শুধু যে মূল্যবান খনিজ চোরাচালান হচ্ছে, তা নয়। এর ফলে এলাকায় ভূমিক্ষয়ও হচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, সমতল জমির যেখানে-সেখানে বড় বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে। নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জগদীশ মালাকার জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাবেন বলে জানান তিনি। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক সুদীপ্ত দাস অবশ্য বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এলাকায় গিয়ে দেখেশুনে শীঘ্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |