রুগ্ণ ল্যাব, ন্যায্য দামের ওষুধ যাচাইয়ে জট
রকারি হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে নিম্ন মানের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল বেসরকারি ওষুধ বিক্রেতাদের সংস্থা। সমালোচনার জবাব দিতে সরকারি ল্যাবরেটরিতে ৫৩৫টি ওষুধের নমুনা পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। আড়াই মাস পরে দেখা গেল, উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে বেশির ভাগ ওষুধের নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরুই করা যায়নি!
কেন এমন হল, তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও ল্যাবরেটরি অধিকর্তার মধ্যে দোষারোপের পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর দাবি, “ওখানে যে পরিকাঠামোর এত অভাব, তা জানা ছিল না। এই অবস্থায় আমরা ঠিক করেছি, নমুনা পরীক্ষার জন্য দেশের সাতটি স্বীকৃত ল্যাবরেটরির কাছ থেকে দরপত্র চাইব। এর মধ্যে কোনও একটি থেকে দ্রুত ওষুধের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।”
সরকারি ল্যাবরেটরির এমন বেহাল পরিকাঠামোর কথা কি স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে?
ল্যাবরেটরির অধিকর্তা সত্যব্রত রায়ের জবাব, “সমস্যা দীর্ঘদিনের। আলাদা করে বলার তো কিছু নেই। ল্যাবরেটরির হাল ক্রমশই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও পরীক্ষার জন্য এখানেই এত নমুনা পাঠানো হল!”
পরিকাঠামোর ঘাটতি সত্ত্বেও সরকারি ল্যাবরেটরিতে এত নমুনা পাঠানো হল কেন?
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। সব জানা সম্ভব নয়। ওরাই বা পরীক্ষা না-করে আড়াই মাস নমুনাগুলো ফেলে রাখল কেন? আমাদের কিছু জানাল না কেন? দেরি দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে এখন সব জানতে পারছি।”
সরকার কি ওই ল্যাবরেটরির অধিকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার জবাব, “সেটা মন্ত্রী ভাববেন। তবে সামনেই ল্যাবরেটরি অধিকর্তার অবসর। এখন শাস্তি দিয়ে কী লাভ?”
নমুনা পরীক্ষা না-হওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র যুক্তি অবশ্য অন্য রকম। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন ওষুধ সংস্থা নিজেদের ‘কম্বিনেশন ড্রাগ’-এর ফর্মুলা বলতে চায় না। সমস্যার মূল কারণ সেটাই।”
তা হলে তো কোনও দিনই এই ধরনের ওষুদের নমুনা পরীক্ষা হবে না! বিকল্প কিছু ব্যবস্থা হচ্ছে কি?
মলয়বাবু বলেন, “সে-সব আলোচনা করে দেখা হচ্ছে।”
যা নিয়ে দুই কর্তার মধ্যে চাপান-উতোর চলছে, কনভেন্ট লেনের সেই ওষুধ পরীক্ষার ল্যাবরেটরির অবস্থা এই মুহূর্তে ঠিক কেমন?
ন্যায্য মূল্যের দোকানের ওষুধ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় গত বছরের অক্টোবরে ওই ধরনের ৩৫টি দোকান থেকে মোট ৫৩৫টি ওষুধের নমুনা পাঠানো হয়েছিল ল্যাবরেটরিতে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, তার মধ্যে ‘কম্বিনেশন ড্রাগ’ (যে-ওষুধে একাধিক উপাদান থাকে)-এর নমুনা ২১৯টি। বাকি ৩১৬টি ‘সিঙ্গল কম্পোনেন্ট’ (একটি উপাদানে তৈরি ওষুধ)। সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্তারা জানতে পারেন, ওই ল্যাবরেটরিতে কম্বিনেশন ড্রাগের নমুনা পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থাই নেই! আর লোকবল ও উপযুক্ত যন্ত্রপাতির অভাবে সিঙ্গল কম্পোনেন্টের মাত্র ৫১টি নমুনা এত দিনে পরীক্ষা হয়েছে। তার একটি নিম্ন মানের। বাকিগুলি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
এমন বেহাল দশা কেন?
ল্যাবরেটরি অধিকর্তার যুক্তি, “এখানে লোক কম। সিনিয়র ড্রাগ অ্যানালিস্টও খুব কম। তার উপরে ড্রাগ কন্ট্রোল, পুলিশ, আদালত সকলেই এই ল্যাবে নমুনা পাঠায়। ফলে সিঙ্গল কম্পোনেন্ট ড্রাগ পরীক্ষা করতেও অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।”
সরকারি ল্যাবরেটরির হাল দেখে অভিযোগকারীরা সুর চড়িয়েছেন। বেসরকারি ওষুধের দোকানের মালিক সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তুষার চক্রবর্তী বলেন, “যে-কোনও দেশে সরকারি ল্যাবরেটরিতে এই ধরনের পরীক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এখানে তা নেই!” অভিযোগকারীদের আশঙ্কা, খারাপ মানের ওষুধ দ্রুত চিহ্নিত না-হলে সাধারণ মানুষেরই এর ফলে ক্ষতি বাড়বে।
নমুনা পরীক্ষার এই দশার মধ্যেও অবশ্য ‘সাফল্য’ খুঁজে পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাসের যুক্তি, ৫১টির মধ্যে মাত্র একটির মান খারাপ বেরিয়েছে। এর থেকে পরিষ্কার, অধিকাংশ ওষুধই ভাল মানের। সুমনবাবুর সাফাই, “ভাল মানের ওষুধ তৈরির শংসাপত্র রয়েছে এবং বার্ষিক অন্তত ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয় এমন সংস্থা থেকেই ওষুধ কেনে সরকার। তাই ওষুধের মান খারাপের প্রশ্নই নেই। বরং বাইরের বেসরকারি ওষুধের দোকানের অনেক ওষুধের মান নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, ওরা অনেক অনামী সংস্থার ওষুধও রাখে।”
তুষারবাবুদের পাল্টা প্রশ্ন, যে-ল্যাবরেটরির পরিকাঠামোর এমন শোচনীয় দশা, সেখানে পরীক্ষার ফল যে ঠিক হবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? স্বাস্থ্য দফতর বলছে, মাত্র একটি নমুনা খারাপ মিলেছে। এটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তুষারবাবুর দাবি, তাঁদের দোকানে যে-সব ওষুধ রাখা হয়, তার ছাড়পত্র দেয় ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়া। তাই এটা নিয়ে কারও সংশয় থাকা উচিত নয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.