হাউসস্টাফ জোগাড় করতে
টোপ ফেলার ভাবনা

মবিবিএস পাশ করে শুধু এক বছর ইন্টার্ন হয়ে থাকা। তার পরে আর অন্য কিছু নয়, সোজা এমডি-এমএসে বসার প্রস্তুতি। তরুণ ডাক্তারদের মধ্যে এই প্রবণতা দিন দিন বাড়তে থাকায় সরকারি হাসপাতালে হাউসস্টাফের আকাল দেখা দিয়েছে। যার মোকাবিলায় হাউসস্টাফদের জন্য স্নাতকোত্তর প্রবেশিকায় বাড়তি নম্বর বরাদ্দ করার কথা ভাবছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। যদিও এই ‘টোপে’ কাজের কাজ কতটা হবে, কিংবা উচ্চস্তরের পঠনপাঠনের মান কতটা বজায় থাকবে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এমবিবিএস পাশ করে এক বছরের ইন্টানর্র্শিপ করলে তবে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর মেলে। তার পরে এক বছর হাউসস্টাফ হয়ে থাকা যায়। এক সময়ে হাউসস্টাফের দায়িত্ব পালন করাটা বাধ্যতামূলক ছিল। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র নিয়ম ছিল, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাউসস্টাফশিপ না-করলে স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকায় বসা যাবে না। ক’বছর আগে তারা নিয়মটা তুলে দিয়েছে। ফলে সদ্য ডাক্তারদের বড় অংশ হাউসস্টাফের চাকরিতে না-ঢুকে পাখির চোখ করছেন স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকাকে। পরিণামে হাউসস্টাফ বাড়ন্ত। অথচ ইন্টার্ন ও হাউসস্টাফ সোজা কথায় জুনিয়র ডাক্তারদের উপরেই সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা বহুলাংশে নির্ভরশীল। ইন্ডোর-আউটডোর তো বটেই, এমনকী ইমার্জেন্সিরও সিংহভাগ জুড়ে থাকেন তাঁরাই।
এমতাবস্থায় পরিষেবা পড়ছে সঙ্কটে। তারই সুরাহার লক্ষ্যে বাড়তি নম্বরের টোপ। স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটিরও একই সুপারিশ। সেই মতো দফতরের পরিকল্পনা, হাউসস্টাফশিপ করলে এমডি-এমএসের প্রবেশিকায় অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হবে। এতে অনেকেই হাউসস্টাফের কাজ করতে আগ্রহী হবেন বলে কর্তাদের আশা। তবে শর্ত, এ ক্ষেত্রে হাউসস্টাফকে যেতে হবে জেলার হাসপাতালে, এমনকী গ্রামেও। স্বাস্থ্য-কর্তাদের যুক্তি: যে মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেছেন, সেখানেই হাউসস্টাফ হওয়ার সুযোগ থাকার সুবাদে জুনিয়র ডাক্তারেরা মৌরসিপাট্টা গড়ে তোলারও সুযোগ পেতেন। অন্যত্র নিয়োগ হলে সেটা হবে না। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে। ক’বছরের মধ্যে ডাক্তারের অভাব অনেকটা মিটবে। তত দিন অন্তত কাজ চালানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা খুবই জরুরি। হাউসস্টাফ হিসেবে আরও বেশি ছেলেমেয়েকে পাওয়া গেলে কিছুটা সুবিধে হবে।”
নতুন নিয়ম কবে কার্যকর হবে, তা অবশ্য এখনও চুড়ান্ত হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এমসিআই-কে এই মর্মে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু এমসিআই আগের নিয়ম রদ করল কেন?
এমসিআই তখন যুক্তি দিয়েছিল, সরকারি হাসপাতালে কাজ করেন মূলত ইন্টার্নরা। হাউসস্টাফরা অধিকাংশই স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই ওঁরা নিজেদের মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ করে ডিউটি ভাগ করে নেন, অনেকে সপ্তাহে দু’-এক দিনের বেশি কাজ করেন না। উপরন্তু বহু হাউসস্টাফ ‘অলিখিত’ ভাবে বেসরকারি হাসপাতালে ডিউটি করেন, এমন অভিযোগও উঠেছিল। যার প্রেক্ষাপটে এমসিআইয়ের বক্তব্য ছিল, হাউসস্টাফ থাকাতেও পরিষেবা ধাক্কা খাচ্ছে। এ দিকে কাজ না-করা হাউসস্টাফদের মাসে মাসে ভাতা গুনে যেতে হচ্ছে। তার চেয়ে হাউসস্টাফশিপে ‘আবশ্যিক’ তকমা উঠিয়ে দেওয়াই শ্রেয়।
সুতরাং নিয়ম শিথিল। “কিন্তু হাউসস্টাফ না-থাকার ফল বিভিন্ন হাসপাতালের সুপারেরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।” মন্তব্য এক স্বাস্থ্য-কর্তার। কী রকম?
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর, অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে ইন্ডোর-ইমার্জেন্সিতে রোগীর প্রয়োজনমাফিক ডাক্তার পেতে দেরি হচ্ছে। কৈফিয়ৎ দিতে দিতে জেরবার হচ্ছেন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। তাই বিভিন্ন হাসপাতালের তরফেও অবিলম্বে বিকল্প বন্দোবস্ত চেয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য ভবনে দরবার করা হচ্ছিল। সেই কারণেই নতুন পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন ব্যবস্থাতেও সব হাউসস্টাফকে দিয়ে ঠিক মতো কাজ করানো যাবে তো? নজরদারি করবে কে? স্পষ্ট জবাব মেলেনি। বরং দফতরের এক শীর্ষ কর্তা আক্ষেপ করেছেন, “নজর দেওয়ার কথা সিনিয়র ডাক্তারদের। অথচ ওঁদেরই অনেকে দুপুর না-গড়াতে প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে বেরিয়ে যাচ্ছেন! সর্ষের মধ্যে থাকা ভূত তাড়াব কী করে?”
অর্থাৎ, সংশয়ের নিরসন হচ্ছে না। পাশাপাশি এতে ডাক্তারির উচ্চতর পঠন-পাঠনের উৎকর্ষে আপস করা হবে কি না, সেই সংশয়ও দানা বাঁধছে চিকিৎসক মহলের একাংশে। দুর্গম ও সমস্যাসঙ্কুল অঞ্চলে কাজ করে আসা ডাক্তারদের স্নাতকোত্তর প্রবেশিকায় প্রতি বছরের জন্য ১০% হিসেবে সর্বোচ্চ মোট ৩০% নম্বর লাভের সুযোগ আগেই দিয়েছে রাজ্য। “তার সঙ্গে হাউসস্টাফশিপের ইনাম হিসেবেও বাড়তি নম্বর বরাদ্দ হলে আখেরে মেধাকে বঞ্চিত করা হবে না কি?” প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকদের কেউ কেউ। এমসিআইয়ের কী মতামত?
এমসিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “এ নিয়ে কাউন্সিলের ভিতরে মতান্তর রয়েছে। আবার নম্বরের আকর্ষণ না-থাকলে কেউ গ্রামেও যেতে চাইছে না। অগত্যা আমরাও নিরুপায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.