|
|
|
|
শহর ছড়ালেও বাড়ছে না পুর-এলাকা
রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় • বাঁকুড়া |
সঞ্চয়ের টাকা খরচ করে মনের মতো করে বাড়ি তোলা হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা নেই। বড় রাস্তা ছেড়ে মেঠো রাস্তা পেরিয়ে তবে বাড়িতে ঢুকতে পারেন কাটজুড়িডাঙার শরৎপল্লির বাসিন্দা সব্যসাচী নন্দী। বর্ষায় সেই রাস্তাই জল-কাদায় ভরে যায়।
হাতে টর্চ না থাকলে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে ফাঁপড়ে পড়েন জুনবেদিয়ার বাসিন্দা স্বপন গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ঝাঁ চকচকে বাড়িতে আলো ঝলমল করলেও কয়েক মিটার দূরের রাস্তায় কোনও আলো নেই। তাই গরম পড়লেই সাপের ভয়ে ওই রাস্তা পেরোতে আতঙ্কে থাকেন তিনি।
গ্রীষ্মকালে কেশিয়াকোলের দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির টিউবওয়েলের জল নেমে যায়। এলাকার অনেকেরই একই সমস্যা। ভরসা তখন পাড়ার টিউবওয়েল। দৈন্যন্দিন এই জীবন-যন্ত্রণার ছবি বাঁকুড়া পুরএলাকার গাঁ ঘেষে তৈরি হওয়া বসতিতে ঘুরলেই নজরে আসে। পুরএলাকার সীমানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তৈরি হওয়া এই নতুন পাড়াগুলি এখনও পুরসভার মধ্যে পড়েনি। রয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত এলাকাতেই। ফলে পৈতৃক ভিটে ছেড়ে সদর শহরের স্বাচ্ছন্দ্য লাভের আশায় যাঁরা এই সব এলাকায় বাড়ি তৈরি করেছেন, তাঁদের এখন রোজ দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
শহরের বাড়তি পরিষেবার জন্য পুরসভার গণ্ডি বাড়ুক, চাইছেন বাঁকুড়া শহর লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। দাবিটা দীর্ঘ দিনের। অতীতে বাম আমলেও এ নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। সরকারের কাছে দাবিও পেশ করা হয়েছিল জেলা বামফ্রন্টের তরফে। বর্তমান তৃণমূল সরকারের জমানাতেও এ নিয়ে জলঘোলা কম হচ্ছে না। তৃণমূল পরিচালিত বর্তমান পুরবোর্ডও একই দাবি নিয়ে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দ্বারস্থ হয়েছে। কবে সেই দাবি পূরণ হয়, সে দিকেই তাকিয়ে সবাই। |
|
অনেকে পেশার টানে, অনেকে উন্নত জীবনযাত্রা গড়ে তোলার তাগিদে জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঁকুড়া শহরের দিকে ছুটে আসছেন তাঁর। জায়গা কিনে ঘরবাড়ি বানাচ্ছেন। এই ভাবেই গত কয়েক বছরে পুরসভার সীমানা লাগোয়া জুনবেদিয়া, কেশিয়াকোল, কাটজুড়িডাঙার একাংশে এবং গোবিন্দনগর লাগোয়া এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার উঠে এসেছে। কিন্তু এলাকাগুলি পুরসভার বাইরে থাকায় যাবতীয় পুরপরিষেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। পানীয় জল, রাস্তাঘাট, পথবাতি, নিয়মিত এলাকার জঞ্জাল সাফ না হওয়া-সহ আরও বেশ কিছু অসুবিধার কারণে তাল কাটছে জীবযাত্রার ছন্দেও।
এই পরিস্থিতিতে ওই সব এলাকার মানুষদের একটা বড় অংশই এলাকাগুলিকে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করছেন। এ বিষয়ে জুনবেদিয়ার বাসিন্দা শুধাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত এলাকা হওয়ায় আমাদের পাড়ায় রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যাচ্ছে না। বাড়ির পিছনে জমা জলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।” তিনি জানান, রাস্তায় পথবাতি নেই, নেই নিকাশি ব্যবস্থাও। তাঁর প্রশ্ন, “এই সব অসুবিধার কথা আমরা কাকে জানাব?” এই এলাকায় চা দোকান রয়েছে কমলা বাগদি-র। তিনি বলেন, “পুরসভা হলে না হয় বাড়তি কিছু কর দিতে হবে। কিন্তু সেই তুলনায় উন্নত পরিষেবাও তো পাওয়া যাবে।”
জুনবেদিয়ার বাসিন্দা তুষারকান্তি মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হলে খাওয়ার জলের ট্যাঙ্ক আমরা পুরসভা থেকেই ভাড়া করে নিয়ে আসি। আমাদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় কাজের জন্য পুরসভার উপরেই ভরসা করি। তাই আমরা চাই আমাদের এলাকাকে পুরসভায় অন্তর্ভূক্ত করা হোক। একই দাবি তুলেছেন, কেশিয়াকোল, কাটজুড়িডাঙা এলাকার শরৎপল্লি, বিদ্যাসাগরপল্লি, গোবিন্দনগর এলাকার আইলাকান্দি, পাথরা, শ্রীনগর, শালবনির মতো বহু এলাকার বাসিন্দারা।
বাম-বামবিরোধী উভয় রাজনৈতিক দলও একযোগে এই সব এলাকাগুলিকে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলছে। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “বাম আমলেই জুনবেদিয়া, কেশিয়াকোল, কাটজুড়িডাঙা ও গোবিন্দনগরের পঞ্চায়েত এলাকাগুলিকে পুরসভায় যোগ করার দাবি জানানো হয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। এখনও এই দাবিকে আমরা সমর্থন করছি।” বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা বলেন, “সম্প্রতি জুনবেদিয়া, কেশিয়াকোল ছাড়াও পোয়াবাগান, শালবনি-সহ বেশ কিছু এলাকাকে পুরসভায় নিয়ে আসার দাবি মানচিত্র সহকারে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পেশ করা হয়েছে।” তিনি জানান, বিষয়টি কবে বিধানসভায় পাস হয় সেই দিকেই তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন।
|
আমরা যা চাই |
নিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছুই নেই। পঞ্চায়েত এ বিষয়ে সচেতন নয়।
বধূ বীনা নন্দী
(কাঠজুড়িডাঙা, শরপল্লি) |
এলাকা ঝোপঝাড়ে ভর্তি। পোকামাকড়ের উপদ্রব। পুরসভা হলে রোজ পরিষ্কার হবে।
শিক্ষক আদিত্য দুলে
(জুনবেদিয়ার বাসিন্দা) |
এলাকায় নানা সমস্যা রয়েছে। কেউ খোঁজ নিতে আসে না। পুরসভা হলে সমস্যা জানানোর মতো কাউকে পাব।
ছাত্রী অনন্যা ধবল
(কাঠজুড়িডাঙা) |
জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমাধান নেই। পুরসভা হলে ভাল হবে আশা করি।
রাজমিস্ত্রী শেখ সাজমান
(জুনবেদিয়া) |
|
|
|
|
|
|