ভরা পিকনিকের মরসুমেও সে ভাবে ভিড় নেই জঙ্গিপুর মহকুমায় পিকনিকের জন্য জনপ্রিয় জায়গাগুলোতে। অন্য বছর মাঘের শুরু থেকেই প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের ভিড়ে গমগম করত রঘুনাথগঞ্জের সবুজ দ্বীপ। অথচ বৃহস্পতিবার, ছুটির দিনেও সেখানে ভিড় করেছিলেন মাত্র ৩৩টি পিকনিক দলের শ’পাঁচেক লোকজন। একই অবস্থা ফরাক্কার ডিয়ার ফরেস্ট লাগোয়া গঙ্গা পাড়ের পিকনিক স্পটেরও। সেখানেও এ দিন পিকনিক করতে এসেছিলেন অল্প সংখ্যক কিছু স্থানীয় মানুষ। আর আহিরণের জঙ্গলে এ দিন পাশের গ্রামের জনা কুড়ি বাসিন্দা ছাড়া আর কোনও পিকনিকের দল চোখে পড়েনি। অথচ মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে যে ক’টি পিকনিক স্পট রয়েছে তার মধ্যে জঙ্গিপুর মহকুমার এই তিনটি পিকনিক স্পট শুধু যে জনপ্রিয় তাই নয়, পিকনিকের পক্ষে মনোরম স্থানও বটে। তবে সামনের সপ্তাহান্তে ভিড় বাড়বে আশা করা হচ্ছে। |
ভাগীরথীতে গজিয়ে ওঠা ৬৪ একর চরের জমিতে হাজারো গাছের জঙ্গলে ঘেরা রঘুনাথগঞ্জ সবুজ দ্বীপ জেলার মধ্যে পিকনিকের আদর্শ জায়গা বলে পরিচিত। ১৯৯৮ সালে এই দ্বীপটি গড়ে ওঠে। জঙ্গিপুর পুরসভা নিয়ন্ত্রিত এই দ্বীপে গত বছরও উপচে পড়েছিল ভিড়। কিন্তু এ বার সেই ভিড় নেই কেন? অনেকেরই দাবি, একবার কোনও জায়গায় পিকনিক করার পরে ফের সেই জায়গাতেই আবার পিকনিক করতে যেতে পছন্দ করেন না বেশিরভাগ মানুষই। কেননা, পিকনিকের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ারও সম্পর্ক রয়েছে। উপ পুরপ্রধান অশোক সাহা বলেন, ‘‘পিকনিকের পক্ষে সবুজ দ্বীপ আদর্শ জায়গা হলেও মানুষ চায় প্রতি বছর নতুন জায়গায় যেতে। জেলার সম্ভবত এমন মানুষ কমই যাঁরা এই দ্বীপে একবারও পিকনিক করতে আসেননি। সেক্ষেত্রে আকর্ষণ ধরে রাখতে গেলে শুধু বন জঙ্গল থাকলেই তো হবে না। নিত্য নতুন ভাবে জায়গাটাকে সাজাতে হবে। বিনোদনের উপকরণ, শিশুদের খেলার সামগ্রী, বোটিং-এর ব্যবস্থাও করতে হবে। পিকনিকে এসে মানুষ চান এই একটা দিন আর পাঁচটা দিনের থেকে একেবারে অন্য রকমভাবে কাটাতে।” তিনি জানান, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা দিয়ে দ্বীপটি সাজানোর কাজও শুরু হয়েছে।
|
পিকনিকের পাঁচকাহন |
• তিনটি জায়গাতেই আশপাশে কোনও ওষুধের দোকান নেই। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। |
• সবুজ দ্বীপে প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা, পিকনিক ফি ১০০ টাকা, গাড়ি পার্কিং ৫০ থেকে ১০০ টাকা। |
• রয়েছে পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা। |
• বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট, মদ্যপান নিষিদ্ধ। |
• ফরাক্কায় উপরিপাওনা ডিয়ার ফরেস্ট, বোটিং, ফরাক্কা বাঁধ। |
• ফরাক্কায় ও আহিরণে পিকনিকের জন্য ফি নেই। তবে পানীয় জল সঙ্গে আনুন। |
|
পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘শীতটা এ বার সেভাবে জাঁকিয়ে পড়েনি। গাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। তাই ডোমকল, জলঙ্গী, বেলডাঙা, মালদহ বা বীরভূম থেকে মানুষ এত দূরে আসতে চাইছেন না। ফলে গত বারের থেকে এ বারে পিকনিকের দলের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে এ বার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে দ্বীপে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে শৌচাগার ও পানীয় জলের। তবে প্রবেশ মূল্য বাড়িয়ে ৫ টাকা, ও পিকনিক ফি ১০০ টাকা করা হয়েছে। বাস পার্কিং ১০০ টাকা, ছোট গাড়ির পার্কিং ফি ৫০ টাকা করা হয়েছে। তবে আগামী শনি ও রবিবার থেকে ভিড় হবে বলেই মনে হচ্ছে।’’
ফরাক্কায় ডিয়ার ফরেস্ট বা হরিণ উদ্যানে অবশ্য পিকনিকের জন্য কোনও ফি লাগে না। স্থানীয় বিধায়ক মইনুল হক বলেন, ‘‘আগে আশপাশ থেকে বহু মানুষ আসতেন গঙ্গা পাড়ে। শীতের ক’দিন গোটা এলাকাটাই জমজমাট থাকত। পিকনিকে এসে ডিয়ার ফরেস্ট ঘুরে, বোটিং করে, ফরাক্কা বাঁধ দেখে দিনের শেষে বাড়ি ফেরেন লোকজন। পিকনিকের জন্য এটাও একটা ভাল জায়গা।” আহিরণের জঙ্গলও পিকনিক স্পট হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস জানান, “যাঁরা একটু নির্জনতা পছন্দ করেন, তাঁরা আহিরণকে পিকনিক স্পট হিসাবে বাছতে পারেন। পাশেই রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নেই।” স্থানীয় এক গাড়ি মালিক আতিকুর সেখ বলেন, ‘‘পিকনিকের স্পট তো অনেক আছে। কিন্তু গাড়ি ভাড়া বেড়েছে অনেক। তাই দূরে কোথাও পিকনিকের পাট এড়িয়ে চলছেন অনেকেই।” |