দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতীকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা আবশ্যক। তিনি যে ভাবে আইন ভঙ্গ করিয়াছেন, মধ্যরাত্রে দিল্লির অভিজাত আবাসিক এলাকায় আফ্রিকা মহাদেশের উগাণ্ডার মহিলা নাগরিকদের বাড়িতে হানা দিয়া গণিকাবৃত্তিতে লিপ্ত থাকার দায়ে তাঁহাদের গ্রেফতার করিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়াছেন এবং পুলিশ এই অন্যায় কাজে শামিল হইতে অস্বীকৃত হইলে তাহাকে ধমকাইয়াছেনতাহাতে তাঁহাকে অন্তত মন্ত্রিসভার সদস্যপদে রাখিয়া দেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উচিত ছিল, এই ঘটনার পরেই সোমনাথ ভারতীকে বরখাস্ত করা। বিপরীতে তিনি নির্দেশ অমান্যকারী পুলিশের শাস্তির দাবিতে রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমীপে দরবার করেন এবং সেই দরবার ব্যর্থ হইলে রেল-ভবনের সামনের রাস্তা অবরুদ্ধ করিয়া ধর্নার নাটক করেন। ইহা নিন্দনীয়।
বিদেশি অতিথিদের মর্যাদাহানিকর মন্তব্য ও ক্রিয়াকলাপের প্রতিক্রিয়ায় উগাণ্ডা সরকারি ও কূটনৈতিক স্তরে ভারত সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানাইয়াছে। দেশের ভাবমূর্তিও ইহাতে কালিমালিপ্ত হইয়াছে। সর্বোপরি, ওই মহিলার বিরুদ্ধে গণিকাবৃত্তি ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে লিপ্ত থাকার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলিয়া সোমনাথ ভারতী তাঁহার অত্যন্ত আপত্তিকর মানসিকতারও পরিচয় দিয়াছেন। দেশের বিভিন্ন মহিলা সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন ভারতীর দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করিয়াছে। ভারতীকে মন্ত্রিসভা হইতে বিদায় করার আর্জিও জানাইয়াছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অবিচলিত। তিনি বোধহয় তাঁহার সতীর্থের এই ন্যক্কারজনক আচরণ ও কথাবার্তায় আপত্তিকর কিছু দেখিতেছেন না। সোমনাথ ভারতী যে-ভাবে মধ্যরাত্রে লোক জড়ো করিয়া লাঠিসোঁটা লইয়া উগাণ্ডার চার মহিলার উপর চড়াও হন, তাঁহাদের শারীরিক নিগ্রহ করেন, ভারত-ত্যাগের নতুবা প্রাণনাশের ঝুঁকি লইয়া বাস করার হুমকি দেন, তাহাতে আইন নিজ হাতে তুলিয়া লওয়ার এবং শাসনক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরবর্তী স্বেচ্ছাচারের প্রবণতা স্পষ্ট। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তরফে এমন চৌকিদারি গণতান্ত্রিক শাসনপ্রণালীর পক্ষে শুভ নয়, বাঞ্ছিতও নয়।
কেজরিওয়াল কেন তাঁহার কলঙ্কিত সেনাপতিকে ইস্তফা দিতে বলিতেছেন না, তাহার কোনও সদুত্তর তাঁহার কাছে নাই। দিল্লির লেফটেনান্ট গভর্নর নজিব জং সমগ্র ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়াছেন। একই আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের মুখেও শুনা গিয়াছে। কিন্তু নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই কি অভিযুক্ত মন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত নয়? এত কাল ধরিয়া আম আদমি পার্টি যে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির কথা বলিয়া আসিয়াছে, মূল্যবোধভিত্তিক রাজনীতির কথাও, তাহার প্রেক্ষিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কি আগ বাড়াইয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জরুরি নয়? ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও’ আপ্তবাক্যটিই তো নিষ্ফল হইয়া যায়, যদি ভিন্ন ঘরানার রাজনীতি করিতে আসিয়া আম আদমি পার্টির নেতৃত্ব সেই পথই অনুগমন করে, যে-পথ এত কাল অন্যান্য রাজনৈতিক দল অনুশীলন করিয়া আসিয়াছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁহার দলের কাছে জনসাধারণের প্রত্যাশা কিন্তু অন্য রকম। সেই প্রত্যাশা তাঁহারা নিজেরাই জাগাইয়া তুলিয়াছেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর এক মাস কাটিতে না কাটিতে সেই প্রত্যাশার মৃত্যুর দায়ও কিন্তু কেজরিওয়ালের উপরেই বর্তাইবে। |