|
|
|
|
ভোটযুদ্ধে মুলায়মকে ছাপ্পান্ন ইঞ্চির চ্যালেঞ্জ
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৩ জানুয়ারি |
উত্তরপ্রদেশ কি গুজরাত হতে পারবে! এই প্রশ্নেই বৃহস্পতিবার লড়াই চলল বারাণসী-গোরক্ষপুরের।
বারাণসীতে মুলায়ম সিংহ যাদব বললেন, “গুজরাতকে উত্তরপ্রদেশ বানানোর মুরোদ আছে মোদীর?” গোরক্ষপুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নরেন্দ্র মোদী বললেন, “উত্তরপ্রদেশে গুজরাতের মতো উন্নয়ন করার ক্ষমতা আছে নেতাজির? তার জন্য ছাপ্পান্ন ইঞ্চি বুকের ছাতি চাই!”
ভোটের আগে এই বাগ্যুদ্ধের নিঃসন্দেহে তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, লড়াইটা গো-বলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে। মুজফ্ফরনগরের সাম্প্রতিক গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর যেখানে মেরুকরণের জমি প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। তাই উন্নয়নের প্রশ্নে কথার গোলা ছোড়াছুড়ি চললেও আড়ালে রয়ে গেল সাম্প্রদায়িক ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যই।
উত্তরপ্রদেশই মোদীর আসন বাড়ানোর সব থেকে বড় ভরসা। সেই কারণেই লোকসভায় প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপিতে আস্থা হারানো হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে মুলায়মকে আক্রমণ করলেন মোদী। একই ছকে মোদীকে পাল্টা আক্রমণ করে মুসলিম ভোট বাড়াতে চাইছেন মুলায়মও। ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে মোদী-মুলায়মের এই লড়াই অবশ্য এর আগেও দেখা গিয়েছে। নির্বাচনে জমি না ছাড়তে চেয়ে ইদানীং উত্তরপ্রদেশে মোদীর সভার দিনেই পাল্টা সভা করছেন মুলায়ম-অখিলেশ। যার অন্যথা হয়নি এ দিনও। |
|
অস্ত্র হাতে তৈরি দু’পক্ষই। গোরক্ষপুর এবং বারাণসীর সভায়
নরেন্দ্র মোদী এবং মুলায়ম সিংহ যাদব। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই। |
হিন্দু ভোট পুনরুদ্ধার লক্ষ্য হলেও এ দিন অবশ্য সরাসরি উগ্র হিন্দুত্বের কথা বলেননি মোদী। কিন্তু বিনয় কাটিয়ার, যোগী অদ্বৈতনাথের মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতারা গোষ্ঠী সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে সেই জমি প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। আর মোদী নিজস্ব ভঙ্গিতে সেই প্রসঙ্গ সরাসরি না ছুঁয়ে চলে গেলেন উন্নয়নের প্রসঙ্গে। জানিয়ে দিলেন, গুজরাতে দশ বছর ধরে যে শান্তি বজায় রয়েছে, উত্তরপ্রদেশে সেই শান্তি মুলায়ম প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। মুলায়ম যদি এমন উত্তরপ্রদেশ তৈরি করতে পারেন, যেখানে গুজরাত থেকে লোক কাজ করতে আসবে, তবে তিনি খুশি হবেন।
বিজেপি সূত্রের মতে, বিষয়টি একটি প্যাকেজ। যেখানে সঙ্ঘ হিন্দুত্বের কথা বলবে। মোদী বলবেন উন্নয়নের কথা। কেবল মুলায়ম নয়, কংগ্রেস ও মায়াবতীকেও আজ আক্রমণ করেছেন মোদী। উত্তরপ্রদেশের দলিতদের দারিদ্র ঘোচানোর কথা বলে মায়াবতী-কংগ্রেসের পালের হাওয়া টানার চেষ্টা করেছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। একই সঙ্গে মুলায়ম-মায়াবতী-কংগ্রেসকে বিঁধে তাঁর কটাক্ষ, ‘সবকা মালিক এক’। ‘স’ মানে সমাজবাদী পার্টি, ‘ব’ বহুজন সমাজ পার্টি, ‘ক’ কংগ্রেস। তাঁর ইঙ্গিত, আসন বাড়াতে মুলায়ম, মায়াবতী, কংগ্রেস সকলেরই ভোটব্যাঙ্কে ধস নামাতে হবে।
গরিবি নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে আজ ফের নিজের অতীতে ফিরেছেন মোদী। এ দিনও তিনি বলেন, “গরিব মায়ের ছেলে আমি। চা-বিক্রেতা। কিন্তু এক জন গরিব যখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইছে, কংগ্রেস তা মানতে চায় না।” এর পরেই গরিবের এই আবেগকে কাজে লাগিয়ে জানতে চাইলেন, এই অপমান আম-জনতা সহ্য করবেন কি? সভার ভিড় থেকে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর ভেসে এল, “না।”
মোদী-মুলায়মের এই বাগ্যুদ্ধে চুপ করে বসে রইল না কংগ্রেসও। নরেন্দ্র মোদী কিন্তু বার বার বলছেন, ষাট বছরের শাসকের পরিবর্তে ষাট মাসের জন্য ‘সেবক’-কে দিল্লির গদিতে বসার সুযোগ দিতে। তবে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির কটাক্ষ, “এক সময় চন্দ্রশেখরও বলতেন, চল্লিশ বছরের মোকাবিলায় চার মাস। মোদী নিজের কথায় অভিনবত্ব আনুন।” |
|
|
|
|
|