সোনার উপর আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানালেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী। অথচ ইউপিএ সরকারেরই অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বৃহস্পতিবারই দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছেন, এই শুল্ক এখনই কমানোর প্রশ্ন নেই। তাঁদের এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই বিভ্রান্ত স্বর্ণশিল্প মহল।
সোনায় আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি সনিয়া গাঁধীকে অনুরোধ করে অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশন। তার পরেই তিনি এ ব্যাপারে আর্জি জানান আনন্দ শর্মার বাণিজ্য মন্ত্রককে। তবে এ দিন দাভোসে চিদম্বরম পরিষ্কার জানিয়েছেন, যত দিন চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি (বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের ফারাক) নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না-হচ্ছে, তত দিন আমদানি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত বদল সম্ভব নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে লেখা ওই চিঠিতে সনিয়া গাঁধী বলেন, আমদানি শুল্ক বাড়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের যে-সমস্যা হচ্ছে। তা বিবেচনা করে দেখা হোক। সোনা আমদানির সঙ্গে গয়না রফতানিকে যুক্ত করার ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।
লেনদেন ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারের সমস্যার মোকাবিলা করতে আমদানির উপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্র। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সোনার আমদানি। কেন্দ্রের হিসাবে অশোধিত তেলের পরই সব থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয় সোনা আমদানির জন্য। আর এতে রাশ টানতে গত দেড় বছরে সোনার আমদানি শুল্ক ১% থেকে বাড়িয়ে ১০% করেছে কেন্দ্র।
পাশাপাশি, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সোনা আমদানির উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ ছাড়াও সোনা আমদানির সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে আমদানি কমেছে প্রায় ৭০%। উল্লেখ্য, দেশে বছরে সোনার চাহিদা ৯০০ টন। এর মধ্যে ২০০ টন লাগে শুধু সোনায় লগ্নির চাহিদা মেটাতে। বাকি ৭০০ টন দিয়ে তৈরি হয় গয়না।
সোনা আমদানির উপর কেন্দ্রের পদক্ষেপগুলির ফলে দেশে গয়না শিল্প চূড়ান্ত সমস্যায়। ওই সব পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ বলেন, “আমদানির সর্বোচ্চ মাত্রা বেঁধে দেওয়ার পর শুল্ক বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কোথায়? শুল্ক বাড়ানোর ফলেই চোরাপথে আমদানি লাভজনক হয়ে উঠেছে। এটা সরকারের ভেবে দেখা অত্যন্ত জরুরি।”
কেন্দ্র তাঁদের আর্জি বিবেচনা না-করলে দেশ জুড়ে ধর্মঘট-সহ বড় মাপের আন্দোলন করা হবে বলে জানান অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশনের পরিচালন পর্ষদের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা। তিনি বলেন, “মোট আমদানির মাত্র ১০% সোনা। আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় গয়না শিল্প চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছে। ক্রেতাকেও প্রায় ২০% অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কেন্দ্রের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা।”
আমদানি কমায় গয়না ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দেশের কয়েক লক্ষ লোকের রুটি-রুজিও সমস্যায়। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, “গয়না শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ অগ্রণী। অথচ রাজ্যের কয়েক হাজার গয়নাশিল্পী বেকার হওয়ার পথে। আমদানি শুল্ক বাড়ার ফলে সোনা রফতানিও মার খাচ্ছে।” |