‘প্রেমিকে’র সঙ্গে বেরিয়ে গণধর্ষণের শিকার হলেন এক আদিবাসী তরুণী। মালদহের গাজলে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন ওই তরুণী। সোমবার রাতে ইটাহারে নিজের বাড়ি যাচ্ছেন বলে সেখান থেকে ছুটি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। সে সময়েই একটি ছোট ভ্যান গাড়িতে তুলে ‘প্রেমিক’ কৃষ্ণ মোদী ও তার তিন বন্ধু তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। কৃষ্ণ সহ তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, “ওই তরুণীর সঙ্গে কৃষ্ণ নামে প্রধান অভিযুক্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। সে রাতে কৃষ্ণ তার তিন বন্ধুকে নিয়ে একটি ভ্যানে করে এসে ওই তরুণীকে তাতে তোলে। তারপর তাঁকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। কৃষ্ণর দুই বন্ধু পিন্টু বিশ্বাস ও শ্যামল সিংহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চতুর্থ ব্যক্তি ওই ভ্যানের চালক। তার সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।” বুধবার আদালতে তোলা হলে ধৃতদের দু’দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসেই এই জেলায় এই নিয়ে তিনটি গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল। ৩ জানুয়ারি সুজাপুরে এক স্বামী পরিত্ত্যক্তা মহিলাকে গণধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ ওঠে। তাতে এখনও পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি রতুয়ার পাহাড়পুরে গণধর্ষণ করে খুন করা হয় এক মহিলাকে। সেই ঘটনায় পুলিশ কাউকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “পরপর গণধর্ষণের কথা শুনে আঁতকে উঠছি। তবে গাজলের ঘটনায় পুলিশ এক দিনেই তিন জন গ্রেফতার করেছে। বাকি অভিযুক্তকেও দ্রুত গ্রেফতার করতে বলেছি।”
সোমবার রাত ১২টা নাগাদ বামনগোলা মোড়ের কাছে ওই আদিবাসী তরুণীকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই তাঁকে গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার কিছুটা সুস্থ হয়ে ওই তরুণী জানান, তিনি গণধর্ষণের শিকার। চার জনের মধ্যে তিন জনকে যে তিনি চিনতেও পেরেছেন, সে কথাও জানান। এরপরই অভিযান শুরু করে পুলিশ। এক এক করে গ্রেফতার করা হয় কৃষ্ণ, পিন্টু, শ্যামলকে। পুলিশ জানিয়েছে কৃষ্ণ রং মিস্ত্রি। পিন্টু ও শ্যামল কাঠের কাজ করে। কৃষ্ণের আইনজীবী সুখজিৎ দাসের অবশ্য দাবি, “কৃষ্ণর সঙ্গে ওই আদিবাসী তরুণীর সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। সে নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
এলাকার মানুষও জানিয়েছেন, কৃষ্ণের সঙ্গে ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই তরুণীকে প্রায়ই কৃষ্ণর সঙ্গে ঘুরতে যেতে দেখা যেত। যে বাড়িতে তিনি কাজ করতেন, সেই বাড়ির কর্ত্রী জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে বিকেল বেলা ওই তরুণী বাইরে বেড়াতে যেতেন, সন্ধ্যাবেলা আবার ফিরে আসতেন। তবে ঘটনার দিন রাতে ফেরার কথা ছিল না। তাই তাঁরা আর ওই তরুণীর কোনও খোঁজও করেননি সে রাতে।
ওই তরুণীর বক্তব্য, তিনি যে সে দিন ইটাহারের বাড়ি যাবেন, তা কৃষ্ণ জানত। তিনি বলেন, “তাই সে যখন কালীবাড়ি মোড় থেকে আমাকে ভ্যানে তোলে, কোনও সন্দেহ হয়নি। ভ্যানে উঠে দেখি কৃষ্ণের সঙ্গে আরও তিন বন্ধু রয়েছে। তারা আমাকে ২০ মাইলের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ভ্যানের মধ্যেই কৃষ্ণ ও বন্ধুরা আমাকে জোর করে মদ খাইয়ে এক এক করে ধর্ষণ করেছে।”
ওই তরুণীর মা হাসপাতালে মেয়ের কাছেই রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ যারা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।” |