খিদিরপুরের নিগৃহীতা তরুণীর জন্য কাউন্সেলিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তরুণী ঘুমোতে পারছেন না। খেতে চাইছেন না। কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না। এই পরিস্থিতিতে মনোবিদের সাহায্য নেওয়ার কথাই ভাবা হচ্ছে। যে চিকিৎসক দল তাঁকে পরীক্ষা করছেন, সেই দলের এক সদস্য বুধবার বলেন, “সংক্রমণের ভয় ঠেকাতে কড়া অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। শারীরিক যন্ত্রণাও কড়া ওষুধে অনেকটা কমেছে। কিন্তু মানসিক ভাবে ওই তরুণী পুরোপুরি বিধ্বস্ত। আমাদের কাছে সেটাই সবচেয়ে চিন্তার বিষয়।”
এই অবস্থায় তরুণীকে বুধবারও জেরা করতে পারেননি গোয়েন্দারা। সেই কারণে তদন্তের অগ্রগতিও কিছুটা থমকে গিয়েছে। তবে ধৃত মহম্মদ হামিদ ওরফে রাজকে নিয়ে এ দিন ঘটনার পুনর্নির্মাণ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার রাতেই তাকে হাওড়া স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় ধৃতকে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয়েছে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহের কাজও।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ বারবার একাই অপরাধ করেছেবলে দাবি করছে। তবে ওয়াটগঞ্জের যে গ্যারাজে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সেখানে আরও কয়েক জন রাতে ঘুমোন। সেই কারণে এখনও গণধর্ষণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। যদিও এক গোয়েন্দা-কর্তার বক্তব্য, “জেরায় রাজ যা জানিয়েছে, তার সঙ্গে সিসিটিভির ফুটেজের কিছু মিল পাওয়া যাচ্ছে।”
কী রকম? পুলিশের কাছে রাজের দাবি, ধর্ষণের পর তরুণীকে নিয়ে একটি ট্যাক্সি চেপে হাওড়া স্টেশনে গিয়েছিল সে। বাস্তবেও হাওড়ায় রাজ ও তরুণীর অস্তিত্ব সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। এই ঘটনার সূত্রে এ দিন হাওড়া স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ধৃতকে। ভোর পৌনে চারটে নাগাদ কোথায় ট্যাক্সি থেকে নেমে কোন প্ল্যাটফর্মে তরুণীকে পৌঁছে দিয়েছিল সে, সবই পুলিশকে জানিয়েছে রাজ।
খিদিরপুরের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সূত্রে তদন্তকারীরা জেনেছিলেন, রাজ ও নির্যাতিতা তরুণী রবিবার
রাতে ওই এলাকার একটি হোটেলে নরম পানীয় খেয়েছিলেন। সেই হোটেলেও এ দিন রাজকে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্যারাজে যাওয়ার আগে সে
ওই তরুণীকে নিয়ে সুধীর বসু
রোডে তার এক পরিচিতের বাড়ি গিয়েছিল। সেখানেও এ দিন তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওয়াটগঞ্জ এলাকায় রাতে লোকজন চলাফেরা করে। সেই অবস্থায় তরুণীকে নিয়ে রাজ গ্যারাজে কী ভাবে ঢুকল, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন তদন্তকারীরা। এই ধন্দ কাটানোর জন্য রাজকে নিয়ে এ দিন ওই গ্যারাজেও গিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। রাত একটা নাগাদ কোন দিক দিয়ে গ্যারাজে ঢুকে কী ভাবে গোটা ঘটনা ঘটেছিল, তা গোয়েন্দাদের দেখায় সে। ওই গ্যারাজে চার জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। রবিবার তাঁরা সন্ধ্যা সাতটার সময় চলে গিয়েছিলেন। রাতে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব থাকলেও কেন তাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে ওই নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, যে ট্রাকের ভিতরে ধর্ষণ
করা হয়েছিল, তার ভিতর থেকে এ দিন রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কর্তারা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ধৃতের শরীর থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক দল।
নির্যাতিতা তরুণীর সহকর্মীদের সঙ্গেও বারবার কথা বলছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, রাতে সাড়ে ন’টায় মল থেকে বেরিয়েছিলেন তরুণী। রাত সওয়া দশটা পর্যন্ত তিনি যাদবপুর থানার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এর পরে ওই মলের এক মহিলা সহকর্মী ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়ার সময় ওই তরুণীকে গাড়িতে তুলে নেন। ওই মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে আরও এক মহিলা ছিলেন। দুই মহিলার মধ্যে
এক জন গড়িয়াহাটে নেমে যান। আর এক জনের গন্তব্য ছিল এন্টালির সিআইটি রোড। গড়িয়াহাট থেকে সিআইটি রোডে যাওয়ার পথে তরুণী পার্ক সার্কাসে নেমে যান। পুলিশ জেনেছে, পার্ক সার্কাস থেকে আর একটি শাট্ল্ ট্যাক্সিতে চেপে তরুণী খিদিরপুরে পৌঁছন। এক গোয়েন্দাকর্তা জানিয়েছেন, “তরুণীর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন থেকেও এই পথের সমর্থন মিলেছে।”
এই সময়ের মধ্যে কি তরুণীর সঙ্গে রাজের মোবাইলে কোনও যোগাযোগ হয়েছিল?
গোয়েন্দাপ্রধান এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজও যোগাযোগ হওয়ার কথা জানায়নি। বরং জেরায় সে জানিয়েছে, ফ্যান্সি মার্কেটের সামনে আচমকাই তরুণীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।
তার পরে কেন তরুণী রাজের সঙ্গে গেলেন, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি তদন্তকারীদের কাছে।
|