পঞ্চায়েত প্রসঙ্গ তুলে সতর্ক করল কমিশন
লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসা উপ-নির্বাচন কমিশনারকে গত পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জানালেন বিরোধীরা। আর সে কথা শুনে বিনোদ জুৎসি জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিলেন, আগামী লোকসভা ভোটে এমন অভিযোগ ওঠার সুযোগ যেন না-থাকে।
বুধবার নিউ টাউনে ৯টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জুৎসি। সেখানে সিপিএমের রবীন দেব, সুখেন্দু পানিগ্রাহী-সহ বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির নেতারা, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া, বিজেপি-র তপন শিকদাররা সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ও পুর নির্বাচনে শাসক দলের গা-জোয়ারি এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন। তাঁরা বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যা দশা, তাতে লোকসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির সময় থেকেই কমিশন দায়িত্ব না-নিলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। বিজ্ঞপ্তি জারির দিন থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান তাঁরা।
সর্বদল বৈঠকের পরে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন জুৎসি। সবার শেষে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের জুৎসি বলেন, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে সব অভিযোগ উঠেছে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি নিতে হবে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যা হয়ে গিয়েছে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট থেকে ডিএম-এসপিদের ভাল ও মন্দের শিক্ষা নিতে বলেছি। রাজনৈতিক দলগুলি ২০০৯ ও ২০১১ সালের ভোট নিয়ে কমিশনের প্রশংসা করেছে। আমরা ওই দু’বারের থেকেও ভাল ভোট করতে চাই।”
হিডকো ভবনে সর্বদল বৈঠকে বিনোদ জুৎসি। ছবি: সুমন বল্লভ।
প্রশাসনের একটি অংশের ব্যাখ্যা, বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপ-নির্বাচন কমিশনার যে ভাবে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন তাতে এটা পরিষ্কার যে, পঞ্চায়েত ভোটে যে সব এলাকায় গোলমাল হয়েছিল, সেই সব এলাকার উপরে গোড়া থেকেই নজর রাখতে চায় কমিশন। বস্তুত পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখেই এ দিন জেলা প্রশাসনকে ‘স্পর্শকাতর এবং গোলমালের আশঙ্কাযুক্ত’ বুথ বাছাই করতে বলেছেন জুৎসি। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলাশাসকের কথায়, “জুৎসি বলেছেন, আমি জানি পঞ্চায়েত ভোটে অনেক স্থানীয় বিষয় এসে পড়ে। সেই মতো কিছু এ দিক-ও দিক হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এ বার তেমন কিছু যাতে না হয়, সে জন্য কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এ ব্যাপারে আপনাদের উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”
পঞ্চায়েত ভোটে অনিয়ম এবং গা-জোয়ারির অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল। সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “রাজ্যের মানুষ এখন নিজের ভোট নিজে দিতে পারছেন। গত পঞ্চায়েত ও পুর নির্বাচনে এক জনের ভোট অন্য কেউ দিয়েছেন এমন কোনও ঘটনা সংবাদমাধ্যম দেখাতে পারেনি।”
তবে আসন্ন লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ করার নির্দেশই এ দিন প্রশাসনিক কর্তাদের দিয়ে গিয়েছেন জুৎসি। ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ বারও গত লোকসভা ভোটের মতোই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। গত বার প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না-থাকলেও, প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে অন্তত ৩ জন জওয়ান মোতায়েন ছিল। এ বারও সম্ভবত তেমনই ব্যবস্থা করতে চায় কমিশন। পাশাপাশি, হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে যে ভাবে মোবাইল ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছিল, এ বার তার উপরেও জোর দেওয়া হবে। বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে কেএলও, মাওবাদী প্রভাবিত জেলাগুলিতে। বাংলাদেশের অস্থিরতার জন্য বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে সীমান্তবর্তী ৮টি জেলার ডিএম-এসপিকে। তিন-চার বা পাঁচ দফায় ভোট হলে কী পরিমাণ বাহিনী লাগবে, তার হিসেব তৈরি রাখতে বলা হয়েছে তাঁদের।
এ ছাড়া, সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকায় দাগি অপরাধী এবং যাদের নামে অতীতে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন থেকেই অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীদের খরচ এবং কালো টাকার ব্যবহার নিয়েও যে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, তা জানিয়ে জুৎসি বলেন, কিছু দিনের মধ্যেই কমিশনের নজরদারি দল ঘুরতে শুরু করবে। তার আগে কমিশনের অফিসারেরা রাজনৈতিক দলগুলিকে কর্মশালায় ডেকে এ সম্পর্কে বিশদে জানিয়ে দেবেন।
ভোটার তালিকা নিয়েও জুৎসি জানান, এ রাজ্যে অসংখ্য নাম বাদ পড়েছে। সেই কারণে এখন থেকে জেলাশাসকের অনুমতি ছাড়া আরকোনও নাম বাদ দেওয়া যাবে না। ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে কোনও নাম বাদ দেওয়ার আগে দিল্লি থেকে কমিশনের অনুমতি নিতে হবে। উপ-নির্বাচন কমিশনার ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, “আপনার কাছে সচিত্র পরিচয়পত্র আছে মানেই ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, এমন নয়। এখনই খোঁজ নিন। যদি নাম না-থাকে, নাম তোলাতে যান। মনোনয়নের শেষ দিন পর্যন্ত নাম তোলা যাবে।”

ভোট-প্রস্তুতির ফরমান
• লোকসভা নির্বাচন হবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে।
• ভোটারকে প্রভাবিত করে, এমন কাজ রুখতে ব্যবস্থা এখন থেকেই।
• ভয় দেখাতে পারে বা আগে দেখিয়েছে, এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
• কমিশনের নির্দেশিকা মেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবেন জেলাশাসক।
• নাম তোলা সহ-ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে হেল্পলাইন।
• নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত হবে পর্যবেক্ষকের সামনে।
• ভোটের মুখে সিল করা হবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.