দিদিমণির সংসারে স্বেচ্ছায় যোগ মহিলাদের

‘দোল দোল দোল
কিসের এত গোল?
খোকা আসছে বিয়ে করে
সঙ্গে ছ’শো ঢোল...’

একটা করে লাইন প্রথমে দিদিমণি বলছেন। আর সেটা শুনে সমস্বরে ফিরিয়ে দিচ্ছে খুদের দল। পরনে নীল-সাদা ইউনিফর্ম, লাল সোয়েটার। শীতের মিঠে রোদ্দুর গায়ে মেখে শিশুদের প্রথম পাঠ শুনতে শুনতে যেন জেগে ওঠে গঙ্গানারায়ণপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বলতে অবশ্য ঘোর আপত্তি গ্রামের মানুষের। তাঁদের কথায়, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আবার কী কথা! ও তো আমাদের দীপিকা দিদিমণির সংসার গো।” সংসারই বটে! একজন কর্মী, ৯৩ জন শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মা মিলে আরও ২১ জন।
গঙ্গানারায়ণপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।
ওই কেন্দ্রে দিদিমণি ও সহায়িকাদের সবরকম সাহায্য করেন গ্রামের মহিলারাই। খিচুড়ি রান্না, বাসনপত্র পরিষ্কার, শিশুদের খাবার পরিবেশন ও ঘরদোর ঝকঝকে রাখেন তাঁরাই। অন্তঃসত্ত্বা পারভিনা বিবি বলেন, “এ সব কাজ আমরা করব না তো কে করবে? দিদিমণির মতো এ তো আমাদেরও আর একটা সংসার।”
‘চাল চুরি’ কিংবা ‘পচা চালের খিচুড়ি’ নিয়ে অভিযোগ শুনতে শুনতে যখন আর পাঁচটা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র জেরবার তখন দিদিমণির সংসারে সদস্য সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বছর পাঁচেক আগে দীপিকা বিশ্বাসকে অন্য কেন্দ্রে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। পরের দিন থেকে শিশুদেরও আর দেখা মেলেনি। বাধ্য হয়ে পাঁচ দিন পর নিজের পুরনো সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল দীপিকাদেবীকেই।
বহরমপুর-হরিহরপাড়া রাজ্যসড়ক লাগোয়া নিশ্চিন্তপুর মোড় থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উজিয়ে তারপর গঙ্গানারায়ণপুর গ্রাম। তফসিলি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত প্রত্যন্ত ওই গ্রামে দু’ দশক আগেও ছিল দুর্বৃত্তদের দাপট। লোকজন ওই তল্লাটকে তখন ‘চম্বল’ নামেই চিনত। এখন সেই পরিস্থিতি বদলে গেলেও গ্রামের হতশ্রী অবস্থা অবশ্য বিশেষ পাল্টায়নি। আজও গ্রীষ্মে মেঠো রাস্তায় ওঠে ধুলোর ঝড় আর বর্ষায় জমে থাকে হাঁটু সমান কাদা।
দীপিকাদেবী বলেন, “আমার সহায়িকা রাশেদা বিবি মারা গিয়েছেন বছর খানেক আগে। তাঁর মেয়ে রৌশনারা বিবি বিনা পারিশ্রমিকে সাহায্য করছেন। আর আছেন গ্রামের মায়েরা। আমরা সবাই মিলেমিশে ২০০১ সাল থেকে কেন্দ্রটি চালাচ্ছি।” অঙ্গনওয়াড়ির সুপার ভাইজার মিনু বেগমের অধীনে রয়েছে মোট ৪৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। তার মধ্যে গঙ্গানারায়ণপুর কেন ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত গড়তে পারল? মিনু বেগম বলেন, “পুরো কৃতিত্বটাই দীপিকাদেবীর। তিনি এখানকার মা ও শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছেন বলে ওই অসাধারণ কাজ করতে পেরেছেন। গোটা জেলায় গঙ্গনারায়ণপুরকে আমরা মডেল করতে চাই।”
প্রত্যন্ত ওই গ্রামের বছর তিন-চারেকের শিশুরা অনায়াসে বলতে পারে নিজেদের নাম, ঠিকানা। পড়া-পড়া খেলতে খেলতে মেঘনা, ইয়াসিন, সুস্মিতা, বিলকিসরা বলে, “জানো তো, আমরা নিঃশ্বাস নিই নাক দিয়ে। আর জিভ দিয়ে স্বাদ।”
হাত নয়, এই কেন্দ্রের শিশুরা খিচুড়ি খায় চামচ দিয়ে। গ্রামের শেফালি প্রামাণিক, মুর্শিদা বিবি, শাহনাজ বিবিরা বলছেন, “আমরা কেবল জন্ম দিয়েছি। ছেলেমেয়েদের পালন তো করেন ওই দিদিমণিই। বাড়িতে ওদের দস্যিপনায় অস্থির হয়ে যাই। অথচ দিদিমণির কাছে গেলেই ওদের থেকে ভাল ছেলেমেয়ে আর ভূ-ভারতে পাওয়া যাবে না। ইস্কুলে একদিন না গেলেই দিদিমণি বাড়িতে এসে খোঁজ নিয়ে যান।”
স্থানীয় মহিলারা জানান, “রাস্তাটা পাকা আর এই কেন্দ্রে একটি শৌচালয়ের ব্যবস্থা করলে খুব ভাল হয়।” আইসিডিএস প্রকল্পের জেলা আধিকারিক রজত মজুমদার বলেন, “শৌচালয় ও রাস্তার জন্য পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে বলা হয়েছে।” স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল কাদির বলেন, “রাস্তা নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। শৌচালয়ের ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতির কাছে আবেদন করা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.