|
|
|
|
অভিযানে যাওয়ার লোক নেই, চোলাইয়ের রমরমা |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
বিষাক্ত চোলাই খেয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ৫০ জন। সাড়ে চার বছর আগে কাঁকটিয়া ও রামতারক বাজারে মর্মান্তিক ওই ঘটনার পোস্টার দিয়ে এখনও সতর্কতামূলক প্রচার চালায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আবগারি দফতর। কিন্তু বৃথাই সে প্রচার। বাজার-হাট ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় চোলাই মদের ঠেকগুলির রমরমা দিনদিন বেড়েই চলেছে। দামি দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল মদ তৈরির কারখানাও চলছে রমরমিয়ে। আবগারি দফতর কী করছেপ্রশ্ন তোলার উপায় নেই। কারণ তাদের অবস্থা আক্ষরিক অর্থেই সৈন্যবিহীন সেনাদলের মতো। চোলাই বিরোধী অভিযান চালানোর কথা যাদের, সেই কনস্টেবলের অধিকাংশ পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। দফতরের বিভিন্ন ব্যারাকগুলিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরের (এএসআই) চেয়ার খালি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা আবগারি দফতরের সুপার তপনকুমার মাইতি অবশ্য বলেন, “লোক কম থাকায় কাজে কিছুটা সমস্যা হলেও বেআইনি মদ তৈরি ও বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। দফতরের শূন্য পদগুলিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা হচ্ছে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।”
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, ময়না, পাঁশকুড়া, চণ্ডীপুর, মহিষাদল, ভগবানপুর, নন্দকুমার, খেজুরি, এগরা প্রভৃতি এলাকায় মূলত চোলাই মদ তৈরির ভাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে ভগবানপুর ও ময়নার কিছু এলাকায় নকল দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ তৈরি হয়। জেলা আবগারি দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ময়নায় বার বার আভিযানের জেরে নকল মদ তৈরির কারবার আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। কিন্তু ভগবানপুরের চড়াবাড় এলাকায় বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল মদ তৈরির ব্যবসা ক্রমশ বাড়ছে। এই সব নকল বিদেশি মদ নন্দীগ্রাম, খেজুরির প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি হয়। আবার তমলুক থানার কুরপাই, পাঁশকুড়া থানার রাধাবল্লভচক, দক্ষিণ গোপালপুর, কেশাপাট, চণ্ডীপুর থানার বরাহচণ্ডী, মহিষাদলের পূর্ব শ্রীরামপুর প্রভৃতি এলাকায় চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রির রমরমা কারবার চলে এক প্রকার সংগঠিত ভাবে। বেআইনি চোলাই ঠেকের ব্যবসায়ীরা কতটা সংগঠিত, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য দিবাকর জানাকে মারধরের ঘটনায়। জেলা সদর তমলুক থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে কাঁকটিয়া বাজারের চোলাই ঠেকের কারবারিরা দলীয় অফিসের সামনেই দিবাকরবাবুর উপরে হামলা চালিয়েছিল। আবগারি দফতরের বক্তব্য, এই সব এলাকায় আচমকা অভিযান চালিয়ে মাঝে-মধ্যে কিছু লোককে গ্রেফতার করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় মদ তৈরির সরঞ্জাম। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই জামিন পেয়ে চোলাই মদের কারবারি ফের অবৈধ ব্যবসা শুরু করে। নিয়মিত অভিযান না হওয়ায় তা নজরে আসে না।
নিয়মিত অভিযান হয় না কেন? আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “অভিযানে যাবে কে? লোকই তো নেই। অধিকাংশ ব্যারাকে দু’-এক জন করে কনস্টেবল। এই লোকবল নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালানো তো দূরের কথা, নজরদারিই ঠিক ভাবে করা যায়না।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ১০টি আবগারি ব্যারাক (থানা) রয়েছে। এগুলিকে হিসাবে ধরে জেলায় আবগারি দফতরের মোট সাব-ইনস্পেক্টর (এসআই) পদের সংখ্যা ১৫। এখন রয়েছেন ১১ জন। একই ভাবে জেলায় অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) থাকার কথা ২৪ জন। রয়েছেন মাত্র দু’জন। আর জেলায় মোট কনস্টেবল থাকার কথা ৯৬ জন। বর্তমানে আছেন মাত্র ২০ জন। অর্থাত্ জেলার অধিকাংশ আবগারি ব্যারাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর ও কনস্টেবল পদ শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকী জেলার ১০টি আবগারি ব্যারাকের জন্য গাড়ি রয়েছে মাত্র ৫টি। আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “জেলায় বেআইনি মদের বিরুদ্ধে অভিযানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কনস্টেবলদের। কিন্তু গোটা জেলার অধিকাংশ ব্যারাকে মাত্র দু’একজন করে কনস্টেবল রয়েছে। ফলে খবর পেলেও তত্ক্ষণাত্ অভিযানে যেতে পারে না তারা। পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রেও দুই দফতরের মধ্যে সমন্বয়ে ঝামেলা হয়।” কাঁকটিয়ার এক ব্যবসায়ী অবশ্য বলেন, “কনস্টেবল থাকুক আর না থাকুক, আবগারি দফতর কোনও দিনই তার কাজ ঠিক ভাবে করেনি। এখানে আগেও অবৈধ চোলাইয়ের ব্যবসা চলত। এখনও চলে। আবগারি দফতরের সঙ্গে ভাঁটি মালিকদের আঁতাত না থাকলে এই ভাবে প্রকাশ্যে অবৈধ কারবার চলা সম্ভব হত না।” |
|
|
|
|
|