পর পর ছ’বছর পদ্মা-মেঘনার ইলিশ সে ভাবে পাতে পড়েনি এ বাংলার মানুষের। এ বার অবাধে তা আনতে তৎপর হল দিল্লি। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সারন বুধবার বাংলাদেশের মৎস্য ও জলসম্পদমন্ত্রী মহম্মদ শায়েদুল হকের সঙ্গে দেখা করে ভারতে ইলিশ রফতানির ওপর সব রকম বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
দেশের বাজারে ইলিশের জোগান বাড়িয়ে দাম মধ্যবিত্তের আয়ত্বে রাখার কারণ দেখিয়ে ২০০৭-এ ইলিশ ও অন্য মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করেছিল সেই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর পরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ইলিশ রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও সাইজ অনুযায়ী ইলিশের রফতানি-দর বেঁধে দেয়। দেড় কিলোগ্রামের ওপরের ইলিশের দর বাঁধা হয় ১২ ডলার, এক কিলো থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ১০ ডলার, ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কিলো পর্যন্ত ৮ ডলার ও ৮০০ গ্রামের নীচে ৬ ডলার। অর্থাৎ বড় সাইজের একটি ইলিশের কেনা দামই পড়ে কিলোপ্রতি ৭৪৫ টাকা, মাঝারি সাইজের ক্ষেত্রে ৬২০। তার পরে বরফের দাম ও পরিবহণ ব্যয় যোগ করে এ বাংলার বাজারে তা বিক্রি করা মাছ ব্যবসায়ীদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। সামান্য কিছু ছোট মাপের ইলিশ আমদানি হলেও বাজারে তা পড়া মাত্রই বিকিয়ে গিয়েছে।
ঢাকার নীতির ফলে এ বাংলার ইলিশপ্রেমীরাই শুধু বঞ্চিত হননি, আমদানি-রফতানির সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর রুটি-রুজি লাটে উঠেছে। এ দিকে চোরাচালান হয়ে বহু ইলিশ ভারতে আসতে থাকায় তার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হয় ঢাকা। প্রতি বছরই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ইলিশের রফতানি-দর কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি।
ঢাকায় বাংলাদেশের মৎস্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভারতীয় হাইকমিশনার বুধবার বলেন, বাংলাদেশের ইলিশ ভারতে খুবই জনপ্রিয়। দু’দেশের মানুষের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কৃষ্টি-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। দিল্লি চায়, ঢাকা এ বিষয়ে তাদের নীতি পরিবর্তন করুক, যাতে বাংলাদেশের ইলিশ অবাধে ভারতের বাজারে পৌঁছতে পারে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত তিনি ভারতকে জানিয়ে দেবেন। |