|
|
|
|
মানুষ আগ্রহী ভাল নাটকে পারস্পরিক দোষারোপে নয় |
দেবেশ-অর্পিতার চিঠির উত্তরে
বিভাগীয় সম্পাদক
আনন্দplus |
শ্রী মণীশ মিত্র-র পরিচালনায় ‘অর্ঘ্য’ নাট্যদলের ‘শেক্সপিয়ার্স ট্র্যাজিক হিরোজ’ নাটকে ‘ওথেলো’র একটি দৃশ্যে ‘নগ্নতা’ নিয়ে প্রবীণ নাট্যশিল্পী শ্যামল ভট্টাচার্য-র ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্য এবং তার জেরে ৪ জানুয়ারি ২০১৪, আনন্দবাজার পত্রিকায় খবরে প্রকাশ পেল যে মণীশবাবু ৩ জানুয়ারি ২০১৪ ভোরবেলা শ্যামলবাবুকে ফোন করে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছেন। আমাদের মনে হয়েছিল কাজটা অনুচিত। শ্যামলবাবু একইসঙ্গে ঘটনাটা আমাদের জানান ও হাওড়ার শিবপুর থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেন (ফোন নম্বরসহ) কারণ ওঁকে মারধরের ভয়ও দেখানো হয়েছিল।
আমরা তিনজন এই বিষয়টির প্রতিবাদ করে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি চিঠি লিখি। ৭ জানুয়ারি ২০১৪-য় তা প্রকাশিত হয়।
সেই চিঠিটা ছিল: ‘মণীশ মিত্র পরিচালিত ‘অর্ঘ্য’ নাট্যদলের ‘শেক্সপিয়ারস ট্র্যাজিক হিরোজ’ নাটকে ‘ওথেলো’র একটি দৃশ্যে নগ্নতা রয়েছে। নাটকের বিজ্ঞাপনেও সে কথা আছে। প্রবীণ নাট্যশিল্পী ও নির্দেশক শ্যামল ভট্টাচার্য এই নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন, যার জেরে শ্যামলবাবুর কাছে ৩ জানুয়ারি ভোর ৬.৫১, ৬.৫৮ এবং পরে ৭.৩১-য়ে তিনটি ফোন আসে। শ্যামলবাবুর দাবি অনুযায়ী আলাদা আলাদা তিনটে নম্বর থেকে মণীশ মিত্র মহাশয় ফোন করে ওঁকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন, মারধর এমনকী খুন করার হুমকি পর্যন্ত দেন। বিপর্যস্ত শ্যামলবাবু হাওড়ার শিবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ফোন নম্বরগুলোও উনি পুলিশকে জানিয়েছেন। মণীশ মিত্র মহাশয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখবে এমন আশ্বাসও মিলেছে। (‘নাট্যপরিচালকের বিরুদ্ধে খুনের হুমকির অভিযোগ,’ আ বা প. ৪-১) অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বাইরেও কিছু কথা থাকে।
বেশ কিছু কাল ধরেই বাংলা থিয়েটারের কিছু মানুষের মধ্যে এক রকমের অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় নানান সাক্ষাৎকার, লেখা ও মন্তব্য শালীনতার সীমা অতিক্রম করছে। একটি ‘নাটক’ নির্দেশক কী ভাবে উপস্থাপনা করবেন, তার পূর্ণ স্বাধীনতা তাঁর আছে। কিন্তু বহু সময় শিল্পচর্চার নানা প্রয়োগপদ্ধতি নিয়েও প্রবল সমালোচনা হয় এটাই সুস্থ স্বাভাবিক ঘটনা। প্রসঙ্গত, মণীশবাবুও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নাট্য প্রযোজনাকে খুবই কঠিন ভাষা ও ভঙ্গিতে আক্রমণ করেছেন। সেই ‘সমালোচনা’ করার স্বাধীনতাও তাঁর আছে। |
|
|
কৌশিক সেন |
সুমন মুখোপাধ্যায় |
|
এ যদি সত্য হয়, তা হলে শ্যামল ভট্টাচার্য মহাশয়েরও সেই সুযোগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্য। বহু দর্শক বাংলা নাটক দেখতে আসছেন এ রকম একটা সময়ে এমন ঘটনা আশঙ্কাজনক। আমরা মনে করি, থিয়েটারে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ‘সত্য’ উন্মোচিত হোক। মণীশ মিত্র ও তাঁর দল সাফল্যের সঙ্গে নাট্যচর্চায় রত থাকুন। উল্টো দিকে যে কোনও ব্যক্তিরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেন অন্যায় ভাবে দমিয়ে দেওয়ার প্রয়াস না হয়।’
এর পর আমরা পড়ি শ্রী মণীশ মিত্রের একটি সাক্ষাৎকার (১০ জানুয়ারি) এবং সম্প্রতি ১৭ জানুয়ারি শ্রীমতী অর্পিতা ঘোষ ও শ্রী দেবেশ চট্টোপাধ্যায়-এর একটি যৌথ চিঠি ছাপা হয়।
সব কিছু পড়ে আমাদের মনে হয়েছে যে, তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের চিঠির (যেটা ৭ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল) মূল জায়গাটা থেকে সকলের দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন কিছু কথা তুলছেন যা অপ্রাসঙ্গিক। ‘তাপসী মালিকের’ প্রসঙ্গে, কে আদ্যন্ত সিপিআই(এম), কে কবে কার সম্পর্কে কী বলেছেন স্মৃতি হাতড়ালে তো কত কথাই মনে পড়ে। কিন্তু আমাদের প্রেরিত পত্রের বিষয়বস্তুর সঙ্গে এ সবের সম্পর্ক কী?
নাটক না দেখে ফেসবুকে শ্যামলবাবুর যা মন্তব্য তা একান্তই তাঁর নিজস্ব, আমাদের চিঠিতে ওঁর বক্তব্যর সমর্থনে একটা শব্দও নেই। তাছাড়া নাটক না দেখে ফেসবুকে মন্তব্য করা যদি শ্যামলবাবুর অন্যায় হয়ে থাকে, তবে দেবেশ-অর্পিতার পত্রে সাম্প্রতিক একটি নাট্যপ্রযোজনা সম্পর্কে লেখা হল, “সরকারবিরোধী আনুগত্যের তাড়না থেকে প্রাণিত।” যত দূর জানি ওঁরা দু’জনেই প্রযোজনাটি দেখেননি। তা হলে? কেমন করে বুঝলেন প্রযোজনাটি সরকারবিরোধী তাড়নায় নির্মিত? নিশ্চয়ই কোনও রকম ধারণার দ্বারা চালিত হয়ে ওই মন্তব্য। |
|
বিস্তারিত... |
আমরা কিন্তু মনে করি এমন ‘মনে হওয়ার’ মধ্যে ভুল থাকতে পারে, কিন্তু তা অস্বাভাবিক নয় অস্বাভাবিকতা তখনই তৈরি হতে পারে, যখন ওই মন্তব্য পড়ে ওই নাটকের নির্দেশক ফোন করে দেবেশবাবু বা অর্পিতাদেবীকে হুমকি দিতেন মারধরের বা কটু কথা বলতেন। শ্যামল ভট্টাচার্য তাঁর ক্ষমতা ও সাধ্য অনুযায়ী নাট্যচর্চা করেছেন, নানান প্রতিকূল পরিবেশে যেমন ভাবে নাট্যচর্চা হয়, হয়ে এসেছে দীর্ঘদিন। তেমনই আরও বহু নাট্যজনদের সঙ্গে তাঁর মতো করে কাজ করেছেন এবং সত্যিই সাম্প্রতিক কালে উনি বা ওঁর নাট্যদল নিয়মিত অভিনয় করেন না বা ইদানীং তাঁর কোনও উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাও নেই কিন্তু তাঁর মন্তব্যের প্রতিবাদ হিসেবে কি তাঁকে ফোন করে হুমকি দেওয়া যায়? ভয় দেখানো যায়?
মাননীয় পাঠকদের অনুরোধ, ৭ জানুয়ারি প্রকাশিত আমাদের পত্রটি আরও একবার পাঠ করুন। সেখানে মণীশবাবুর নাটক বিষয়ে কোনও কথা নেই বরং তাঁর ‘শিল্প স্বাধীনতা’কে পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র টেলিফোনে ভয় দেখানো এবং মারধরের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে এবং আশা ব্যক্ত করা হয়েছে যাতে ঘটনাটির প্রকৃত সত্য সামনে আসে। এর মধ্যে কোনও দ্বিধা নেই, ভানও নেই।
কোনও সন্দেহ নেই এই মুহূর্তে বাংলা নাটক দেখতে প্রচুর মানুষ আগ্রহী হচ্ছেন তাঁরা একটা ভাল প্রযোজনা, ভাল অভিনয়, ভাল নাটক দেখতে চান। তাঁরাই অতীতে ঠিক করেছেন কোন প্রযোজনা দেখবেন বা দেখবেন না, আমাদের এই পারস্পরিক দোষারোপের বিষয়ে তাঁদের যতটা না আগ্রহ, আমাদের কাজ নিয়ে তাঁদের আগ্রহ আরও বেশি এই আশা নিয়েই বাংলা থিয়েটার পথ চলবে। তাঁরাই আমাদের যথার্থ নাট্যস্বজন।
সুমন মুখোপাধ্যায়,
বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক সেন
(এর পর এ বিষয়ে আর কোনও চিঠি প্রকাশিত হবে না) |
|
|
|
|
|