বছেরর নতুন ব্যোমেকশ

ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের ইমেজের সঙ্গে কিন্তু এই একগাল খোঁচা খোঁচা দাড়িটা বেমানান...

আর বলবেন না। যত বার নিজেকে আয়নায় দেখছি, তত বার মনে হচ্ছে এই শেভ করে ফেলি।

এটা কি ব্যোমকেশ বক্সীর লুক নাকি?
নাহ্, না। একটা হিন্দি সিনেমা করছি। নাম ‘চৌরঙ্গা’। অনির-য়ের প্রযোজনায়। অনেকটা শ্যুটিং ওড়িশাতে হয়েছে। একটা রাতের কাজ বাকি আছে। তার জন্যই দাড়ি কামাতে পারছি না। এক দেহাতি অন্ধ পুরোহিতের চরিত্র। কিন্তু চোখে কালো চশমা নেই।

উত্তম কুমার থেকে সুশান্ত সিংহ রাজপুত ব্যোমকেশ জ্বরে তো সব্বাই আক্রান্ত। হঠাৎ করে ব্যোমকেশ চরিত্রে আপনার অভিনয় করাটাও একটা চমক...
(হাসি) পাঁচ-ছ’ বছর আগে থেকে এই ছবির প্ল্যান শুরু করেছিল পরিচালক শৈবাল মিত্র। তখন অন্য প্রযোজক ছিল। সেই প্রযোজনা সংস্থার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ছিল অপর্ণা (সেন)। শৈবাল তখন থেকেই চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছিল। আমি ওর সঙ্গে টেলিভিশনের জন্য একটা সিনেমা করেছি। নাম ‘দ্রোণাচার্য’। এখন ছবিটা প্রযোজনা করছেন গায়ক সৈকত মিত্র। তবে চিত্রনাট্যের ‘ফাইনাল ফাইনাল’ ভার্সান যাকে বলে তা কিন্তু এখনও শেষ হয়নি।

ব্যোমকেশকে নিয়ে তো অনেক সিনেমা হয়েছে। কোনটা আপনার পছন্দের?
আগে ‘শজারুর কাঁটা’ নিয়ে একটা সিনেমা হয়েছিল। সতীন্দ্র ভট্টাচার্য করেছিলেন। সিনেমাটা দেখেছি। তবে খুব ভাল মনে নেই। অঞ্জনের প্রথম ব্যোমকেশটা আমার দেখা। মনে হয়েছিল সেখানে একটা রহস্যের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে ঋতুপর্ণর ব্যোমকেশ আমার দেখা হয়নি। ‘চিড়িয়াখানা’ আর ‘শজারুর কাঁটা’র মধ্যে একটা অর্থপূর্ণ তুলনা হতেই পারে। মানিকদার ‘চিড়িয়াখানা’ দেখে মনে হয়েছিল যে অপরাধ আর ‘সলিউশন’ ছাড়াও ছবিতে কিছু ‘উইয়ার্ড রিলেশনশিপ’ দেখানো হয়েছে কিছু অদ্ভুত মানুষকে নিয়ে। ওই ছবিতে উত্তমকুমার অনেকটাই ওয়েস্টার্নাইজড্। স্যুট-টাইতে তাঁকে দেখেছি। কিন্তু সেই ব্যোমকেশের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড খুব একটা উদ্ঘাটিত হয়নি। সেখানে ব্যোমকেশ প্রধানত একজন গোয়েন্দার চরিত্রে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ চরিত্র হিসাবে তাকে এক্সপ্লোর করার অবকাশ ছিল না। তখনকার পরিবেশে উত্তমকুমারের কাজটা বেশ কনভিন্সিং ছিল। ব্যোমকেশ হিসাবে উনি যে ভাবে কাজকর্ম করেছেন, তা বেশ ‘মিনেসিং’। সেই অ্যাপ্রোচটা আমার পছন্দের।
যদি উত্তমকুমারের সঙ্গে আপনার তুলনা আসে?
একবার টেলিভিশনের জন্য ‘বিচারক’ রিমেক করা হয়েছিল। সেখানে উত্তমকুমারের চরিত্রটা আমি করেছিলাম। তখনও তুলনার প্রসঙ্গটা এসেছিল। তবে আমি মনে করি অভিনেতা হিসাবে দায়বদ্ধতা আমার অভিনীত ছবির চিত্রনাট্য আর পরিচালকের ‘ভিশন’য়ের প্রতি। এর আগে কে ওই চরিত্রটা করেছেন, তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই।

সুচিত্রা সেন চলে গেলেন। কোনও দিন তাঁর সঙ্গে কাজ করার কথা উঠেছিল?
আমাদের মধ্যে বয়সের বেশ বড় ব্যবধান ছিল। তাই কাজের সুযোগ আসেনি। সত্তরের মাঝামাঝি উনি যখন ছবি করা প্রায় ছেড়ে দিচ্ছেন, তখন আমি বেশি ছবি করছিলাম না। আর আমার যোগাযোগটা ছিল প্যারালাল সিনেমার সঙ্গে। মূলস্রোতের সিনেমার সঙ্গে আমি ইনভল্ভড ছিলাম না। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে আমার পরিচয় আমার বন্ধুর মা হিসেবে। ওঁর বাড়িতে গিয়েছি, একাধিকবার ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। তখন হয়তো উনি চল্লিশের কোঠায়। ভীষণ ওয়ার্ম, কিন্তু রিজার্ভড। সিনেমা নিয়ে কোনও দিন কথা হয়নি।

আবার ব্যোমকেশ প্রসঙ্গে ফেরা যাক। এখন তো হিন্দিতে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ও একটা ব্যোমকেশ করেছেন। তার প্রযোজক আবার যশরাজ। ব্যোমকেশদের ভিড়ে হারিয়ে না যাওয়ার টোটকাটা কী?
প্রত্যেকটা ব্যোমকেশ নিজের স্পেসেই থাকবে। দিবাকরের কাজ দেখার ঔৎসুক্য আছে। কিন্তু আমাদের ব্যোমকেশের সঙ্গে তার কোনও প্রতিযোগিতা বা সংঘাত থাকবে না। আমাদের সিনেমাতে অপরাধ আছে, রহস্যের সমাধানও আছে। আর বড় ভাবে কলকাতা আছে। ২০১৪-র কলকাতা। এটা পিরিয়ড সিনেমা নয়। একটা ভীষণ ‘নইয়ার’, ‘ডার্ক’ কলকাতা আছে। শহরটাই এখানে একটা বড় চরিত্র। যেটা হয়তো মূল গল্পতে সে ভাবে নেই। গল্পের কাঠামো, ঘটনা শরদিন্দুর লেখাকেই অনুসরণ করবে। তার সঙ্গে এখনকার সামাজিক সম্পর্ককে ধরতে চেষ্টা করব আমরা। পরোক্ষ ভাবে এখনকার রাজনীতিও এসে যাবে সেখানে। তাই সিনেমাটা শুধু মাত্র একটা ক্রাইম থ্রিলার বা ডিটেকটিভ ছবি হবে না।

ব্যোমকেশের বয়স তো এই সিনেমাতে ষাটের কোঠায়...
এখানে ব্যোমকেশ বেশ প্রবীণ। অবসর জীবন থেকে বেরিয়ে এসে অনিচ্ছাসত্ত্বেও কেন সে এই কেসটা হাতে নিল? আসলে চারপাশটাতে এমন কিছু ঘটেছিল যা দেখে তার মনে হয় যে হয়তো থিংস আর নট রাইট। একটা খুন হয়। তখন ব্যোমকেশের মনে হয় যে শুধু খুন নয়, আরও বড় কিছু হয়তো ঘটছে। সাম সোশ্যাল ম্যালিস। শারীরিক ভাবে সক্রিয় না থেকেও সে একটা রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করছে। খানিকটা আর্মচেয়ার ডিটেকটিভ। শার্লক হোমসকে নিয়ে তৈরি বিভিন্ন সিনেমার মধ্যেও তার এই পার্সোনাটা দেখেছি। আমাদের সিনেমাতে অভিনয় করছে কঙ্কনা সেন শর্মা, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

ব্যোমকেশের ছবিতে কঙ্কনা আছে শুনে অনেকের কৌতূহল যে উনি বোধ হয় সত্যবতী...
না। ফিল্মে সত্যবতীর ভূমিকাকে আরও একটু প্রসারিত করার ইচ্ছে আছে আমাদের। সে চরিত্রে অভিনেত্রী এখনও নির্বাচিত হয়নি। ছবিতে একটা নাটকের দল রয়েছে। কৌশিক সেন সেই দলের পরিচালক। কঙ্কনা সেই দলের সঙ্গে যুক্ত। অভিনেত্রীর ভূমিকায়। কঙ্কনাকে সাধারণত যে সমস্ত বাংলা ছবিতে দেখেছি, সেগুলো মোটামুটি ভাবে বলা যায় নায়িকাকেন্দ্রিক অথবা কঙ্কনাকেন্দ্রিক। এখানে সেটা নয়। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। এই ছবিতে কঙ্কনা একটা ‘অনসম্বল’ কাস্টের অঙ্গ। অজিতের চরিত্রে থাকবেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এ ছবিতে এক জন সফল শিল্পপতির ভূমিকায়। ওর একটা কারখানা রয়েছে। একজন ব্যুরোক্র্যাট কাম ফিক্সার আছে। সেটা করছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। সঙ্গীত পরিচালনা করছেন তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। ব্যোমকেশের চরিত্রের একটা ব্যাকস্টোরি তৈরি করছি আমরা। ঋতুর সঙ্গে যখন ‘নৌকাডুবি’ করেছিলাম, তখন আমার চরিত্রটার একটা ব্যাকস্টোরি তৈরি করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের চরিত্র সম্পর্কে এটুকু জানতাম, সেই মানুষটি কন্যা-অন্ত প্রাণ। কাজ বলতে সে হয় চা খাওয়াচ্ছে, না হয় নিজে খাচ্ছে। আমরা একটা ব্যাকস্টোরি তৈরি করি। ঠিক করা হয় যে চরিত্রটা ছবি তুলতে ভালবাসে।

কী ব্যাকস্টোরি তৈরি করলেন?
‘শজারুর কাঁটা’তে ব্যোমকেশের বয়স হয়েছে। কিন্তু সে যখন গোয়েন্দাগিরি বেশি করত, তখন তার কি অন্য
কোনও পেশা ছিল? সে কি অভিজাত বাঙালি? নাকি খুুব পাশ্চাত্যমনস্ক? ক্যালকাটা ক্লাবের মেম্বার? নাকি বেঙ্গল ক্লাবের? গল্ফ খেলতে ভালবাসত? ব্যোমকেশের চরিত্রের এই দিকগুলো নিয়ে আমরা ভাবছি।


কী ঠিক করলেন? আপনাদের কল্পনার ব্যোমকেশ কি পার্ক স্ট্রিটে জ্যাজ শুনত? নাকি সে অনেক বেশি রাবীন্দ্রিক?
আমাদের ব্যোমকেশ রাবীন্দ্রিক নয়। খানিকটা কসমোপোলিটন। সে রিটায়ার্ড। শব্দজব্দ করে।

সুডোকু করে না?
সুডোকু নয়। ক্রসওয়ার্ড। সে সাহিত্যমনস্ক। অদ্ভুত অদ্ভুত খবর ওর নখদর্পণে। খুব সম্ভবত ইন্টারনেট নিয়ে নাড়াচাড়া করে। তবে তার ওপর যে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল তা নয়। হয়তো বা ক্যালকাটা ক্লাব বা বেঙ্গল ক্লাবের মেম্বার। হয়তো বেঙ্গল ক্লাবের লাইব্রেরিতে যায়। কিন্তু সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র হয়তো সে নয়। মোস্ট প্রব্যাবলি বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিল। ব্যোমকেশের ব্যাকগ্রাউন্ডটা মানিকদার ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে মেলে।
এই ব্যোমকেশ কি সিগারেট খায়?
না, কিন্তু হয়তো পাইপটা থাকে। তবে তাতে আসক্ত নয়। সেটা একটা প্রপ।

আর সাজপোশাক?
ব্যোমকেশ যখন বাইরে যায়, ধরুন লালবাজার, তখন পশ্চিমি পোশাকে। কিন্তু বাড়িতে একদম সাধারণ বাঙালি মধ্যবিত্তের মতোই ওর সাজ। শীতকালে বড়জোর একটা
ড্রেসিং গাউন।

কাকাবাবু তো ট্যুইট করেছেন ‘মিশর রহস্য’-য়ে। ব্যোমকেশেরও কি সেই অভ্যেস থাকবে নাকি?
না।

ব্যোমকেশের এত সব ব্যাক স্টোরি কল্পনা করছেন। সেখানে ফেলুদার ইমেজটা অনেকটাই স্ট্যাটিক...
ফেলুদা এত বহুলপঠিত, এত জনপ্রিয় যে, অন্য ভাবে ইন্টারপ্রেট করার খুব একটা স্কোপ নেই বা ছিল না। ফেলুদার একটা চিত্র বাঙালির মনে রয়েছে। সেখান থেকে দূরে সরে যাওয়া বিপজ্জনক। তাই হয়তো এই ইন্টারপ্রিটেশনটা করা হয়নি। এটা লজিক্যাল স্টেপ বলেই আমার ধারণা।

ব্যোমকেশকে নিয়ে এতটা স্বাধীনতা নেওয়ার সাহস কেন দেখাচ্ছেন পরিচালকরা?
ব্যোমকেশকে নিয়ে ফেলুদার মতো অতটা ক্লিয়ার বা বদ্ধমূল ধারণা নেই পাঠকদের।

শার্লক হোমস-য়ের সম্পর্কে তো তা রয়েছে। তবু বিশ্বজুড়ে বারবার পরিচালকরা সেই ইমেজকে ভেঙেছেন। সমকামিতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এমনকী এক টিভি সিরিজের জন্য অভিনেত্রী লুসি লিউ করেছেন ড. ওয়াটসনের চরিত্র! কিন্তু ফেলুদাকে নিয়ে এ রকম কিছু কেউ ভাবতেই পারবেন না...
ফেলুদার টেক্সটটা সাম্প্রতিক। আমার মনে হয় রিইন্টারপ্রেট করার সময় আসেনি। এই সেদিন শুনলাম একটা প্রজেক্ট হচ্ছে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন লেখকদের দিয়ে শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোকে রি-রাইট করতে বলা হয়েছে।

তা হলে কি বলবেন যে ব্যোমকেশ, শার্লক হোমস-য়ের তুলনায় ফেলুদার ক্ষেত্রে আমাদের রক্ষণশীলতা বেশি?
হ্যাঁ... অন্যান্য যে চরিত্রগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো লেখা হয়েছে অনেক বছর আগে। এখনকার জেনারেশনের কাছে তাই সেগুলো অতটা পরিচিত নয়। সে জন্যই হয়তো ইন্টারপ্রিটেশন সম্ভব হচ্ছে। দেড়-দু’দশক পরে হয়তো ফেলুদাকে নিয়েও ইন্টারপ্রিটেশন হবে। তবে এটা বলব যে, মানিকদা যখন ফেলুদা লিখেছিলেন, তখন তার মেজাজটা সমকালীন ছিল। হয়তো ২০৩০-য়ে ফেলুদা বানালে আবার তাকে সমকালীন করতে হবে।

ব্যোমকেশ তো না হয় হল, কোনও দিন ইচ্ছে ছিল ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করার?
হ্যা।ঁ তবে সেটা ‘বার্নিং ডিজায়ার’ ছিল না। এর আগে আনন্দবাজার পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম আমার একটা থ্রিলার করার ইচ্ছে আছে, যেখানে অনেক অ্যাকশন থাকবে। ফেলুদা করার সুযোগ হলে হয়তো ওই ধরনের থ্রিলারের কিছু কিছু ‘এলিমেন্টস’ সেখানে থাকত। ৭০-য়ের দশকের শেষের দিকে মনে হয়েছিল যদি ফেলুদা করা যায়! বয়সের দিক থেকে করা যেত। কিন্তু তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ইক্যুয়ালস্ ফেলু মিত্তির।

কোনও দিন সত্যজিৎ রায়-কে ফেলুদা করার ইচ্ছেটা জানিয়েছিলেন?
না। ফ্র্যাঙ্কলি, এই ধরনের কোনও সম্ভাবনা মাথায় আসেনি।

ফেলুদা না হলেও প্রোফেসর শঙ্কুর ভূমিকায় তো আপনাকে দেখা যাবে...
হ্যা।ঁ তবে বাবু (সন্দীপ রায়) এখন তো আবিরকে নিয়ে ফেলুদা তৈরিতে ব্যস্ত। আমার মনে হয়, প্রোফেসর শঙ্কু বানাতে পরের বছর হয়ে যাবে।

ব্যোমকেশ থেকে ফেলুদা হয়ে যাচ্ছেন আবির। আপনি আবার ব্যোমকেশ থেকে প্রোফেসর শঙ্কু। ব্যোমকেশ কেমন যেন একটা ‘স্টেপিং স্টোন’ গোছের চরিত্র হয়ে যাচ্ছে?
আবিরের কথা বলতে পারব না। আমার এই স্টেজে স্টেপিং স্টোনের প্রয়োজন নেই। কোনও দিন ছিল না। আজও নেই। এমনও হতে পারে যে, কোনও ছবিতে তিন মিনিটের রোল করব।

কোথায় ব্যোমকেশ... কোথায় প্রোফেসর শঙ্কু! অসুবিধা হয় না একটা ইমেজ ভেঙে নতুন করে আর একটা তৈরি করতে?
যে কোনও পেশাদার অভিনেতার কাজের অঙ্গ একটা চরিত্র থেকে আরেকটা চরিত্রে চলে যাওয়া। এটা তো সিঁড়ি ভাঙার ব্যাপার নয় যে, একটা চরিত্র থেকে আর একটা চরিত্রে উত্তীর্ণ হতে হবে। ভিন্ন ধরনের চরিত্র নিজের মতো করে গড়তে হবে অভিনেতাকে। আর একটা প্র্যাকটিক্যাল জিনিস হল, ব্যোমকেশ আর শঙ্কু রিলিজ করার মধ্যে অনেকটা ব্যবধান থাকবে। যে কোনও অভিনেতার এটা নিয়ে পুলকিত হওয়া উচিত।

এই বয়সে এসে ব্যোমকেশ, প্রোফেসর শঙ্কু করছেন। রাত দু’টোর সময় বারো ডিগ্রি টেম্পারেচারে খোলা আকাশের নীচে শু্যটিং করছেন। টেলিভিশনে শো অ্যাঙ্কর করছেন। ক্রিয়েটিভ আপসার্জের রহস্যটা কী?
মনে পড়ে যাচ্ছে ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে মানিকদার সঙ্গে ‘গণশত্রু’তে কাজ করার একটা ঘটনা। সৌমিত্রদা, শুভেন্দুদা, দীপঙ্কর আর আমি ছিলাম। অনেক আড্ডা-আলোচনা, অভিজ্ঞতা দেওয়া-নেওয়া চলছিল। সৌমিত্রদা তখন বলেছিল, “তোর পঞ্চাশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর অনেক ব্যস্ত হবি।” এটা নাকি ওর-ও হয়েছিল। আমাদের দেশে বেশি বয়সের অভিনেতাদের আক্ষেপ হয় যে, আমেরিকা, ইউরোপের অভিনেতাদের মতো তাদের মুখ্য চরিত্র হিসেবে ভাবা হয় না। এটা একটা দিক। অন্য দিক হচ্ছে, সব ইন্ডাস্ট্রিরই কয়েকজন প্রবীণ অভিনেতার প্রয়োজন হয়। যেটা আমরা ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল-দের ক্ষেত্রে দেখেছি। হয়তো সেই প্রয়োজনটা আমি এখন পূরণ করছি।

তা হলে কি বলা যায়, এখন আপনার অভিনয় জীবনের দারুণ একটা ইন্টারেস্টিং ফেজ?
নিশ্চয়ই। খুব অল্প বয়সে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের সঙ্গে কাজ করেছি। সেটা আমার কাছে একটা বিশাল প্রিভিলেজ। এখন যে রকম বৈচিত্র পাচ্ছি কাজের মধ্যে, তা আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং আর স্যাটিসফাইং। কাজগুলো আমার খুবই পছন্দের। তবে অনেক কাজকে আমি ‘না’ বলে দিই। যে কাজগুলো করি, সেগুলো নিয়ে আমার একটা দায়িত্ববোধ এসে যায়। তাই ‘চৌরঙ্গা’, ‘নকশাল’, রাত দু’টো, ব্যোমকেশ, প্রোফেসর শঙ্কু আর ‘প্রধানমন্ত্রী’। একই সময়ে এই কাজগুলো হচ্ছে সেটা কাকতালীয়। এগুলো হওয়ার পরে হয়তো দু’বছর আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যাব। লোকে বলবে, এই লোকটা আনএমপ্লয়েড। তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। কারণ অভিনয় করা ছাড়াও আমার অন্য অনেক কিছু করার আছে। আর তখন সে সবগুলোই আমি করব।
সত্যান্বেষীরা

উত্তমকুমার
‘চিড়িয়াখানা’ আর ‘শজারুর
কাঁটা’র মধ্যে তুলনা হতেই পারে

রজিত কপূর
ব্যোমকেশের চরিত্রকে বিশেষ
করে গড়ার ক্ষমতা রাখে

আবির চট্টোপাধ্যায়
যুবক ব্যোমকেশ হিসাবে ওর কথা
মনে করতে অসুবিধা নেই


সুজয় ঘোষ
খুব অপ্রত্যাশিত কাস্টিং

সুশান্ত সিংহ রাজপুত
এখনও পরিচয়ের সুযোগ হয়নি

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.