দেওয়াল জুড়ে ফাটল দেখা দেওয়ায় উদ্বোধনের দশ মাস পরেও বক্সিরহাট কলেজের ছাত্রী আবাস চালু হয়নি। এ ঘটনায় ছাত্রীদের একাংশ তো বটেই, তাঁদের অভিভাবকরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় নবনির্মিত ওই ছাত্রী আবাস ব্যবহার করা কতটা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে জেলা প্রশাসন। কোচবিহার জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেছেন, “পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট দেখার পর সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বক্সিরহাট কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে বক্সিরহাট কলেজের কাছে থেটারপাট এলাকায় অনগ্রসর কল্যাণ দফতর ওই কাজের জন্য ২৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে। প্রাথমিক ভাবে ওই কাজের জন্য ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ছাত্রী আবাস তৈরি করার তদারকিতে কর্মীর সমস্যা দেখা দেওয়ায় তৎকালীন কলেজ পরিচালন সমিতি কোচবিহার জেলা পরিষদকে টাকা হস্তান্তর করে। এরই পাশাপাশি কলেজের নতুন ক্লাসঘর তৈরির জন্যও একই ভাবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের হাতে টাকা তুলে দেওয়া হয়। |
সেই সময়ে সিপিএম প্রভাবিত কলেজের পরিচালন সমিতি দলের দখলে থাকা জেলা পরিষদের মাধ্যমে ছাত্রী আবাস ও ক্লাসঘর তৈরির জন্য ৪০ লক্ষ টাকা হস্তান্তর করে। ক্লাসঘর তৈরি শেষ হলেও ছাত্রী আবাসের সীমানা প্রাচীর-সহ কিছু কাজ বাকি ছিল। এর পরই রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর তৃণমূলের দখলে আসা কলেজ পরিচালন সমিতি জেলা পরিষদ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ফেরত নেয়। ২০১৩-র ১৬ মার্চ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ছাত্রী আবাসের উদ্বোধন করেন। সে দিনই ছাত্রীবাসের দেওয়াল জুড়ে ফাটল থাকার বিষয়টি সকলের নজরে আসে। তার পর থেকেই ‘উদ্বোধন’ হওয়া ছাত্রী আবাসে তালা ঝুলছে। থমকে গিয়েছে বাকি কাজ। বক্সিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ লাল্টু বর্মন বলেন, “দেওয়াল জুড়ে বড় বড় ফাটল নজরে আসার পরে ৫০ আসনের ওই ছাত্রী আবাস চালু করতে চিন্তা হচ্ছে। টাকা থাকলেও বাকি কাজ করা যায়নি।”
ছাত্রী আবাসটি চালু না হওয়ায় নিম্নমানের কাজ নিয়ে চাপানউতোরে মেতেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কলেজের পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি, বক্সিরহাট ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি স্বপন সাহা বলেন, “ছাত্রী আবাসে এখনও পর্যন্ত যা যা কাজ হয়েছে সবই বামফ্রন্টের আমলে জেলা পরিষদের মাধ্যমে করা হয়েছে। টাকা ফেরত নিলেও নতুন করে কাজ আমরা করিনি। আগে তালাবন্ধ থাকায় দেওয়ালে ফাটলের কথা জানতাম না। উদ্বোধনের দিনই তা নজরে এসেছে। আমরা ওই ব্যাপারে তদন্ত চেয়েছি।”
সিপিএমের সেই সময়ের জেলা পরিষদ কর্তারা নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ মেনে নিতে নারাজ। কোচবিহার জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের নেতা দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। তা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে কলেজ টাকা ফেরত চাওয়ায় তা দিয়ে দিতে হয়। ফলে নিম্নমানের কাজ কারা করেছেন, ফাটলটা আগের নাকি পরের কাজে হয়েছে তদন্ত করে দেখা দরকার।” কলেজ পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলী সদস্য অখিল প্রামাণিক বলেন, “নিম্নমানের কাজ কারা করেছে তা ভাল ভাবে তদন্ত করে না দেখে এ ভাবে আমাদের দায়ী করা ঠিক নয়।” |