কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। সোমবার মালদহ মহিলা কলেজের গেটে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থকরা ‘অবরোধ’ করে রাখায় এসএফআই বা ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা মনোনয়ন তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তিনদিন পার হয়ে গেলেও সোমবার জলপাইগুড়ির প্রসন্নদেব মহিলা (পিডি) কলেজে ফলাফল ঘোষণা করতে পারল না জেলা প্রশাসন। এসএফআইয়ের অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাপে পড়ে, কলেজের ফলাফলকে প্রভাবিত করতেই প্রশাসন ফল ঘোষণা পিছিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার পিডি কলেজের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের হামলা, সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠে। ভোট গণনা শেষ হলেও, ছাত্রী বিক্ষোভ এবং বহিরাগতদের চাপের জেরে গভীর রাত পর্যন্ত মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফলাফল জানাতে পারেননি বলে অভিযোগ। তৃণমূলের একাংশ নেতাও কলেজে বিক্ষোভে সামিল হয় বলে অভিযোগ। তারপরেই প্রশাসনের তরফে সোমবার ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। যদিও, এ দিন কলেজের অধ্যক্ষ জানান, আগামী ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। অধ্যক্ষ শান্তি ছেত্রী বলেন, “একটি আসনে টাই হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি সেই আসনের জন্য টস করার পরে ফলাফল জানানো হবে।” |
এসএফআইয়ের অভিযোগ, সংসদের মোট ৪০টি আসনের ২২টি আসনে তাঁদের প্রার্থীরা জয়লাভ করার পরে যুব তৃণমূলের নেতা কর্মীরা কলেজে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। রাত দেড়টা পর্যন্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখে চাপ দিয়ে অধ্যক্ষের কাছ থেকে ২০টি আসনে তাঁদের প্রার্থীদের ‘উইনিং সার্টিফিকেট’ লিখে নিয়ে যান। এসএফআই-র প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয় ইউনিট কমিটির সম্পাদক রক্তিমা সাহা চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কলেজের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার পাশাপাশি ফল ঘোষণাকেও প্রভাবিত করছে।” যদিও, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কলেজ ইউনিট কমিটির সভাপতি ডালিয়া ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও চাপ তৈরি করা হয়নি। প্রশাসনের নির্দেসের সব হয়েছে। দলের কোনও বিষয়ই নেই.” অন্যদিকে, এ দিন জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজে এদিন ছাত্র সংসদ গঠন করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংসদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সৌরভ সরকার।
এ দিন মালদহ মহিলা কলেজের মূল প্রবেশপথ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ অবরুদ্ধ করে রাখে বলে অভিযোগ করে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দে বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আজকে সকাল থেকে বহিরাগতদের নিয়ে মহিলা মহাবিদ্যালয়ের মূল গেট আটকে রেখেছিল। একাধিকবার পুলিশকে বলেছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও সহযোগিতা করেনি। ফলে আমাদের কোনও প্রার্থী মনোনয়ন তুলতে পারে নি।” ছাত্র পরিষেদের জেলা সভাপতি বাবুল শেখ বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ মহিলা কলেজে আমাদের প্রার্থীদের ঢুকতে দেয়নি।” যদিও, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “এসএফআই ও ছাত্র পরিষদ প্রার্থী না পেয়ে এখন নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে মিথ্যে অভিযোগ করছে।”
অন্যদিকে, পুলিশি ঘেরাটোপে এ দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট কোএড কলেজে মনোনয়নপত্র দাখিল করল ছাত্র পরিষদ। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় কলেজ চত্বরে উত্তেজনাও ছিল। তবে এসএফআই এবং পিএসইউয়ের বাম ছাত্র মোর্চার সমর্থকরা মনোনয়ন জমা দেননি বলে জানা গিয়েছে। ফলে ওই কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে যাচ্ছে বলেই তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হয়েছে। কারণ কলেজের ৫২টি আসনের মধ্যে শেষদিনে মাত্র ১২টি আসনে ছাত্রপরিষদ মনোনয়ন দাখিল করেছে। অন্যদিকে, বালুরঘাট গার্লস কলেজে ১৮টি আসনের মধ্যে বামছাত্র মোর্চা এ দিন ৪টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এসএফআইয়ের জেলা কমিটির সদস্য অভিষেক দাস অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের লাগাতার হুমকি, হামলা, মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেও কোনও ফল না পাওয়ায়, আমরা নির্বাচন থেকে সরে এসেছি।” সিপিএমের প্রাক্তণমন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসও একই অভিযোগ করেছেন। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র দাবি করেন, “কোনও ছাত্র ওদের প্রার্থী হতে চাইছেন না।” জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মনোনয়ন পেশকে কেন্দ্র করে কোনও অশান্তির খবর নেই।” |