শেষরক্ষা হল না। নিজেদের দাবি-দাওয়া না মেটায় পরপর দু’দিন বিড়ি শ্রমিকরা সরকারি শ্রমিক মেলায় আসেননি এক জনও বিড়ি শ্রমিক। তাই সোমবার মেলার শেষ দিনে বাস-ম্যাটাডরে সমর্থকদের নিয়ে এসেছিল আইএনটিটিইউসি। কিন্তু বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের স্টলে ছিলেন না এক জনও সরকারি আধিকারিক। ফলে হতাশ হয়ে ফিরলেন বিড়ি শ্রমিকরা।
এর পরেই তৃণমূল শ্রমিক নেতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় শ্রমদফতরের এক মহিলা কর্মীর মধ্যে প্রকাশ্যে বাক্য বিনিময় হয়। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের এক মহিলা কর্মীকে মেলা চত্বরে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আইএটিটিইউসি জেলা সভাপতি মানব বন্দোপাধ্যায়। প্রকাশ্যেই তিনি চিৎকার করে বলেন, “আপনাদের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তিন দিন ধরে মেলা চলছে অথচ সরকারি কারও দেখে মেলেনি। বিড়ি শ্রমিকরা তাদের সমস্যা নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। কিন্তু স্টল ফাঁকা দেখে সবাই বাড়ি ফিরে গিয়েছে। শ্রমিকদের প্রশ্নের জবাব কে দেবে?” |
কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের ওই মহিলা কর্মী প্রণতি মণ্ডল দাবি করেন, “আমি রোজ মেলায় এসেছি। কাউকে না পেয়ে চলে গিয়েছি।” আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “তিনদিন ধরে সর্বক্ষণ মেলায় আছি। স্টলটি তিনদিন ধরে ফাঁকা পড়ে থাকায় উল্টে আমাদের কৈফিয়ত দিতে হয়েছে।” শ্রম দফতরের সহাকারি কমিশনার দেবু কর বলেন, “কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের কেউ মেলায় আসেননি। দু’দিন ধরে স্টল ফাঁকাই পড়ে ছিল।”
শনিবার মালদহ শহরের রামকৃষ্ণ পল্লীর মাঠে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু রাজ্যের প্রথম শ্রমিক মেলার উদ্বোধন করেন। শ্রমিক মেলায় জেলার আড়াই লক্ষ বিড়ি শ্রমিকদের কেউ হাজির না হওয়ায় চরম অস্বস্তিতে রাজ্যে ও জেলা শ্রম দফতরের কর্তারা। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীর কাছে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল আইএনটিটিইউসির জেলা নেতাদের। ব্লকের বিড়ি শ্রমিক নেতাদের গাড়ি ভাড়া করে বিড়ি শ্রমিকদের শ্রমিক মেলায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন সংগঠনের জেলা সভাপতি মানববাবু। সোমবার, মেলার শেষ দিনে বাস, ম্যাক্সিট্যাক্সি, ম্যাটাডর ভাড়া রতুয়া, কালিয়াচক থেকে প্রায় শ’তিনেক বিড়ি শ্রমিককে মেলায় নিয়ে আসেন মানববাবুরা।
রতুয়া ২ ব্লকে তৃণমূলের সংগঠন আইএনটিটিইউসির বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের নেতা আবদুল মতিন এ দিন বলেন, “দু’টি বাস ভাড়া করে ও ট্রেনে করে মেলায় বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে এসেছি।” কিন্তু দূর থেকে মেলায় এসে বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের স্টলটি ফাঁকা দেখে বিড়ি শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন। পুরাতন মালদহের কালুয়ারি গ্রামের তহমিনা বিবি বিড়ি শ্রমিক কার্ড হাতে নিয়ে বলেন, “একজনকে ৫০০ টাকা দিয়ে তবে এই কার্ড পেয়েছি। কার্ডটি আসল কিনা তা পরীক্ষা করাতে মেলায় এসেছিলাম। স্টলে কাউকেই পেলাম না।” বলাটুলির বিড়ি শ্রমিক তানজারা বিবি বলেন, “বিড়ি শ্রমিকের কার্ড না হওয়ায় সরকারি সুবিধা পাচ্ছি না। কালিয়াচকে কার্ড করাতে গেলে দালাল টাকা চায়। ভেবেছিলাম মেলায় কার্ড করাব। কিন্তু লোক কোথায়?” |