শিশু মৃত্যু ঠেকাতে ‘এসএনসিইউ’ চালু করার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেই উদ্দেশ্য সফল করতে রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালের মতো পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে গড়ে তোলা হয়েছে এই বিভাগ। কিন্তু এই বিভাগ থেকে পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। খোঁজ নিতেই জানা গেল, মূলত বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য চালু করা যাচ্ছে না নতুন এই বিভাগটিকে।
এই অবস্থায় সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা। হুড়ার ধবনি গ্রামের আশালতা হাঁসদা। গত সোমবার তিনি সন্তানের জন্ম দেন। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটির ওজন এক কেজি সাতশো গ্রাম। এসএনসিইউতে রাখতে হবে। সেই মতো তিনি ওই দিন গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পুরুলিয়ায় আসেন। সেখানে এসে জানতে পারেন, ওই বিভাগে শয্যা খালি নেই। চিকিৎসকেরা জানান, শিশু বিভাগে ভর্তি করতে হবে। এসএনসিইউ-তে খালি হলে পরে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হবে। সবিতা মাহাতো। ঝালাদার কর্মাডির বাসিন্দা। দিন চারেক আগে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। একটি সন্তানের ওজন এক কেজি, আর একটির ৯০০ গ্রাম। দু’টিকেই ভর্তি করতে হবে এসএনসিইউতে। না হলে এই শীতে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। একটি শয্যা খালি হওয়ায় একজনের স্থান হল ওই বিভাগে। একই অভিজ্ঞতা বাঘমুণ্ডির রূপবান কালীন্দিরও। |
পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের নতুন এসএনসিইউ। —নিজস্ব চিত্র। |
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচটি শিশুকে ফিরতে হয় শয্যা না পেয়ে। নিওন্যাটাল ইউনিটে রেখে চিকিৎসা করা যথেষ্ট কষ্টের বলে মনে চিকিৎসকেরাই। এক চিকিৎসকের কথায়, “এসএনসিইউ ইউনিটে যে পরিকাঠামো রয়েছে, সেই পরিকাঠামো তো আর নিওন্যাটাল ইউনিটে নেই। এসএনসিইউতে শুধুমাত্র আশঙ্কাজনক অবস্থার শিশু থাকে। যেখানে শুধু বাচ্চাকে রাখা হয়। তাতে সংক্রমণ অনেকটা ঠেকানো যায়। নিওন্যাটালে মা ও শিশু এক সঙ্গে থাকে।”
এই বিভাগের সাফল্যের নিরিখে বেশি শয্যার এসএনসিইউ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য দফতর। বর্তমানে এই বিভাগে ১৮টি শয্যা রয়েছে। তা বাড়িয়ে ৪২ করার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে মাস চারেক আগেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্টে এই হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৫৫টি। পরের মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭তে। অক্টোবরে সেই সংখ্যাও বেড়ে হয় ৭৭। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সেই সংখ্যা খানিকটা কম। তবে সংখ্যা ছিল ৬৮। জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা ওই বিভাগটি দ্রুত চালু করতে চাই।”
উত্তমবাবু চাইলেও বিভিন্ন দফতরের জটিলতায় ওই বিভাগটি এখনও চালু করা যাচ্ছে না। এখনও ‘ফটোথেরাপি’ নামক যন্ত্র আসেনি। যা দিয়ে সদ্যোজাত শিশুদের জণ্ডিসের চিকিৎসা করা যায়। পৃথক বিদ্যুতের সংযোগও প্রয়োজন। সেই সংযোগ এখনও তৈরি করা হয়নি। কেন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না, তার সদুত্তর মেলেনি। জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো তদন্তে যান। তিনি বলেন, “সমস্যা খুঁজে বের করে দ্রুত বিভাগটি চালু করতে বলেছি।” হাসপাতাল সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “পূর্ত দফতর কিছুদিন আগে বিকল জেনারেটর দিয়েছিল। বিদ্যুতের ব্যবস্থা হলে বিভাগটি চালু হয়ে যাবে।” পূর্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “জেনারেটরে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। দু’ একদিনের মধ্যেই ঠিক করে দেব।” খুব শীঘ্রই বিভাগটি চালু হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ। |