দিল্লির হুঁশিয়ারিতে রাজ্যে ভেজাল আটকাতে কমিটি
ত দিন বসেছিল ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে। এ বার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সতর্কবার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
সাজানো-গোছানো ফুড কোর্ট বা রাস্তার ধারের চাকাওয়ালা স্টল, দেশি-বিদেশি ওজনদার মেনু হোক কিংবা স্রেফ রোল-চাউমিন অনুমোদনের তোয়াক্কা না-করে বিভিন্ন জায়গায় অবাধে বিভিন্ন খাবার বিক্রি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে সেই খাবারের গুণমান নিয়ে। অথচ সরকারের নজরদারি করার সামর্থ নেই। কারণ, নজরদার নেই। খাস কলকাতায় খাবারের ভেজাল ধরার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে ইনস্পেক্টর সাকুল্যে দু’জন। পুরসভার ফুড ইনস্পেক্টরের সংখ্যা ২৩। সব মিলিয়ে কলকাতার সমস্ত হোটেল-রেস্তোরাঁ, এমনকী রাস্তার হাজারো স্টলে নিত্য বিকোনো যাবতীয় খাদ্যের মান যাচাইয়ের জন্য হাতে গোনা ২৫ জন!
স্বাভাবতই, অনিয়ম ঘটলেও দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া প্রশাসনের বিশেষ কিছু করার থাকে না। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের হুঁশিয়ারির পরে এই সম্বল নিয়েই অভিযানে নামছে স্বাস্থ্য দফতর। বিভিন্ন দফতরকে নিয়ে তৈরি হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের একটি স্টিয়ারিং কমিটি। এবং নিজের ঘর দিয়েই শুরু হচ্ছে নজরদারি। কী ভাবে?
স্থির হয়েছে, নবান্ন থেকে মহাকরণে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের যত ক্যান্টিন, প্রথমে সেখানকার খাবারের গুণমান যাচাই করা হবে। দফতর-সূত্রের খবর: সব ক্যান্টিনের খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে কলকাতা ও শিলিগুড়িতে, স্বাস্থ্য দফতরের ল্যাবে। প্রথম দফায় রাজ্য সরকারের তৈরি পানীয় জল, দুধ, সর্ষের তেল, মধু, সসেজ-সালামি, মাংস ইত্যাদির গুণমানও পরীক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে পরীক্ষার আতসকাচের তলায় আসবে স্কুলের মিড-ডে মিল।
আর তার পরে হানা দেওয়া হবে সাধারণ খাদ্য বিক্রেতাদের ডেরায়। কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ এসেছে, মুনাফার লোভে বহু ক্ষেত্রেই খাদ্যের গুণমানের সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের হর্তাকর্তারাও বিলক্ষণ জানেন, অভিযোগটা নেহাত ঠুনকো নয়। সম্প্রতি নবান্নের এক বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ক’দিন আগে এক বিশেষ সংস্থার তৈরি রঙিন মিষ্টি সম্পর্কে অভিযোগ এসেছিল। নালিশ ছিল, মিষ্টিটিতে ব্যবহৃত রং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। দফতরের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অভিযোগ সত্যি। আইনমাফিক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে সতর্ক করা হয়েছে।
অর্থাৎ, খাবারে যে ভেজাল চলছে, তার হাতে গরম প্রমাণ সরকারের কাছে মজুত। উপরন্তু নজরদারির ঢিলেমিতে এই সর্বনাশা প্রবণতা দিন দিন বাড়বে বলেই প্রশাসকেরা মনে করছেন। বস্তুত নবান্নে পাঠানো কেন্দ্রের তথ্য রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী (ফুড বিজনেস অপারেটর, সংক্ষেপে এফবিও)-র সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি। অথচ সরকারের অনুমোদন নিয়েছেন বড়জোর ১৯ লক্ষ। চার শতাংশেরও কম! যার মানে, বাকি ৯৬% ব্যবসায়ী সরকারি সম্মতি-নজরদারির বালাই ছাড়া খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত ও বিক্রি করে চলেছেন। সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণও নেই ওঁদের উপরে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, সরকারি অনুমোদনহীন এই সব ব্যবসায়ীর একাংশই মূলত খাদ্যের গুণগত মানে আপস করছেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। সমস্যার মোকাবিলায় দিল্লি এখন চাইছে, আগামী ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখের মধ্যে সমস্ত এফবিও-কে অনুমোদনের আওতায় আনতে। খাদ্যমান সংক্রান্ত ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট’ মোতাবেক, বার্ষিক ব্যবসার অঙ্ক ১২ লক্ষ টাকার কম হলে খাদ্য-ব্যবসায়ীকে রেজিস্ট্রি করতে হবে। টার্নওভার ১২ লক্ষের বেশি হলে লাইসেন্স লাগবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজ্য লাইসেন্স দেবে। তবে আমদানি-রফতানিতে যুক্ত বড় ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে হবে কেন্দ্রের কাছ থেকে।
পাশাপাশি নিম্নমানের খাবার বিক্রি রুখতে লাগাতার অভিযান চালানোর পক্ষপাতী কেন্দ্রীয় সরকার। এ জন্য তারা রাজ্যগুলোর উদ্যোগ চাইছে। কেন্দ্রের ক্যাবিনেট-সচিব অজিত শেঠ সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি লিখে এ ব্যাপারে অবিলম্বে স্টিয়ারিং কমিটি গড়ার পরামর্শ দেন। সেই মতো মুখ্যসচিবকে মাথায় রেখে ও রাজ্যের ফুড কমিশনার গৌতম ঘোষকে আহ্বায়ক করে স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি হয়েছে গত ১৭ ডিসেম্বর, যাতে খাদ্য থেকে শুরু করে ক্রেতা-সুরক্ষার মতো ১৩টি দফতরের সচিবকে রাখা হয়েছে।
কমিটি না হয় তৈরি হল। কিন্তু কর্মীর এত আকাল থাকলে অভিযান চলবে কী করে?
আসল জায়গাতেই ফাঁপরে পড়েছে রাজ্য সরকার। খাদ্যের গুণমান ঠিকঠাক যাচাই করতে হলে পশ্চিমবঙ্গের ৩৪১টি ব্লক ও ১২৬টি পুর-এলাকায় প্রতিটিতে কম করে এক জন ফুড ইন্সপেক্টর দরকার। প্রতি জেলায় থাকতে হবে অন্তত এক জন নোডাল অফিসার। কলকাতা শহরেও চাই আরও বেশি ইন্সপেক্টর। বাস্তব ছবিটা অবশ্য এর ধারে-কাছেও যাচ্ছে না। ১৯টি জেলার মধ্যে ১৪টিতে নোডাল অফিসারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তা, নিজেদের রোজকার কাজ সামলে ওই দিকে নজর দেওয়ার সময় যাঁদের নেই বললেই চলে। পাঁচ জেলায় নোডাল অফিসারই নেই। ইন্সপেক্টর নেই কোনও ব্লকে। কলকাতা-বাদে অন্য সব পুর-এলাকায় মোট ইন্সপেক্টরের সংখ্যা স্রেফ ১১।
এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য দফতর অবিলম্বে আরও লোক চাইছে। তাদের তরফে অর্থ দফতরকে জানানো হয়েছে, খাবারের ভেজাল ধরতে সত্যিই যদি অর্থবহ অভিযান চালাতে হয়, তা হলে আরও মোট ৪৭৭ জন লাগবে।
সেই ফাইল আপাতত অর্থ দফতরেই পড়ে আছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.