রবিবার সন্ধ্যায় সিপিএমের সভা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বারুইপুর থেকে অটো করে সীতাকুণ্ডু মোড়ে নামার পরে দুষ্কৃতীরা তাঁকে এলাকার একটি মাঠে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট ও প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, লোহার রড এবং লাঠি দিয়ে মারের ফলেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সইফুল মোল্লার (২৫) মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার সারা বাংলায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই।
এই ঘটনার পরে পুলিশ মোস্তাফা সাঁপুই ওরফে মস্ত নামের এক যুবককে গ্রেফতার করছে। তাকে জেরা করে ওই ঘটনায় আরও চার জন জড়িত বলে জেনেছে বলে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “নিহতের পরিবারের তরফে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।” প্রাথমিক তদন্তের পরে খুনের কারণ হিসাবে পুলিশ জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলবাজি ও সইফুলের এলাকায় জনপ্রিয়তা এই দু’টি বিষয়ই কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নিহত সইফুলের বাড়ি থেকে ঘুরে এসে বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রও সোমবার বলেছেন, এলাকার মানুষের নানা উপকারে ঝাঁপিয়ে পড়তেন সইফুল। তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকার জন্যই এলাকার মানুষ তাঁকে ভালবাসতেন। সেই ছাত্রকেই নৃশংস ভাবে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশকে যেতেও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। সেই সময়েও সইফুল জীবিত ছিলেন। সূর্যবাবুর মন্তব্য, “বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশের দিন যত কাছে আসছে, এই ধরনের আক্রমণের মাত্রাও বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই, এ ভাবে পারবেন না! ব্রিগেড আবার ইতিহাস গড়বে!” প্রসঙ্গত, রবিবার বারুইপুরে সূর্যবাবুর সভা থেকে ফেরার পথেই খুন হন সইফুল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি চৌধুরীমোহন জাটুয়া অবশ্য দাবি করছেন, “ওই ছেলেটি দুষ্কৃতী। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করত। তাই স্থানীয় লোকজন পিটিয়েছে।” তবে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সইফুলের নামে জেলার কোথাও কোনও অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ নেই। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও থানায় কোনও মামলাও নেই।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, রবিবার একটি অটো করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ওই সভাস্থল থেকে দু’কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডু মোড়ে নামেন সইফুল। সেখানেই ছিল চার-পাঁচ জন দুষ্কৃতী। তারাই সইফুলকে জোর করে রাস্তার পাশের একটি মাঠে টেনে নিয়ে যায়। তার পরে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে সইফুলকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। এলাকাটি নির্জন হওয়ায় প্রথমে কেউ টের পায়নি। পরে ‘বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে মাঠের পাশের কয়েকটি বাড়ির লোকজন বেরিয়ে আসেন। সইফুলের বাবা মুবারক আলি এ দিন বলেন, “ছেলেকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে পাড়া থেকেই শুনেছিলাম। ওই সময় বেশ কয়েক বার ছেলের মোবাইলে ফোনও করেছিলাম। কিন্তু সাড়া পাইনি।”
এই ঘটনার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু, প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী নিহতের বাড়ি গিয়ে তাঁর বাবা ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। ভাইদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। পরে সূর্যবাবু বলেন, “ওরা নতুন প্রজন্মের ভাল ছেলেদের এই ভাবে খুন করছে কেন? দরকার হলে আমাদের আক্রমণ করুক!”
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই হত্যার প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার গোটা দেশে প্রতিবাদ দিবস পালন করবে এসএফআই। |