|
|
|
|
স্ত্রীকে ফেরাতে না পেরে শ্বশুরকে কুপিয়ে খুন
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
স্ত্রীকে বাড়ি ফেরাতে না পেরে শ্বশুরকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল জামাইয়ের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থানার বাকচা গ্রামে। মৃতের নাম নারায়ণ খালুয়া (৩৮)। রবিবার রাতে নিজের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন নারায়ণবাবু। রাত ১১টা নাগাদ তাঁর জামাই নন্দকুমার থানার বরগোদারগোদা গ্রামের বাসিন্দা গৌতম মণ্ডল বাড়ির মধ্যে ঢুকে গলায় ছুরির কোপ মেরে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা নারায়ণবাবুকে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেন। রাতেই নারায়ণবাবুর মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে গৌতমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ, মঙ্গলবার তাঁকে তমলুক জেলা আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়না থানার বাকচা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ইটভাটার শ্রমিক নারায়ণ খালুয়ার মেয়ে সুন্দরী খালুয়ার সঙ্গে পাশের নন্দকুমার থানার বড়গোদারগোদা গ্রামের যুবক গৌতমের বিয়ে হয়েছিল বছর তিনেক আগে। গৌতম কাঠের ব্যবসা করেন। তাঁদের দেড় বছরের কন্যা রয়েছে। বিয়ের সময় পণ হিসেবে গৌতমকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল সুন্দরীর পরিবারের। কিন্তু দরিদ্র নারায়ণবাবু সেই টাকার পুরোটা দিতে পারেননি। ফলে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই পণের বাকি টাকা চেয়ে সুন্দরীর উপর অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। সইতে না পেরে বছরখানেক আগে সুন্দরী বাপের বাড়িতে চলে আসেন।
কয়েক মাস আগে গৌতম বাড়িতে পৃথক হয়ে স্ত্রী সুন্দরীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেন। তবে সুন্দরীর বাপের বাড়ির লোকজনের এতে সায় ছিল না। নারায়ণবাবুর ভাগ্নে বিশ্বজিৎ রাউত বলেন, “সুন্দরীর উপর নানা ভাবে অত্যাচার করত ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমনকী মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছিল। তাই সুন্দরী আর স্বামীর বাড়িতে ফিরতে চাইছিল না। গৌতম ওকে কয়েকদিন আগে ফোন করেছিল। সুন্দরী তখন বাড়ি ফিরবে না বলে জানিয়েও দিয়েছিল।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে বাকচা গ্রামে মাটির দেওয়াল ও বাঁশের বেড়ার দরজা দেওয়া বাড়িতে ১৫ বছরের ছেলে কার্তিকের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন গৌতমবাবু। একই ঘরে মেঝেয় বিছানা পেতে নারায়ণবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবীর সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন সুন্দরী ও তাঁর দেড় বছরের কন্যা। অভিযোগ, রাত ১১টা নাগাদ গৌতম বাঁশের দরজা খুলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েন। কার্তিক বলে, “রাতে বাবার চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে আলো জ্বালিয়ে দেখি ছুরি হাতে জামাইবাবু ছুটে পালাচ্ছে। বাবার গলার কাছ দিয়ে রক্ত পড়ছে।” আহত নারায়ণবাবুকে প্রতিবেশীরা তমলুক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পথেই নারায়ণবাবুর মৃত্যু হয়।
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলের কিছু দূরে একজোড়া জুতো উদ্ধার হয়। ওই জুতো গৌতমের বলে দাবি করেন সুন্দরীর বাড়ির লোকজন। গৌতমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও জানান তাঁরা। পরে নন্দকুমারের বরগোদারগোদা গ্রামে কাকার বাড়ি থেকে গৌতমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় শ্বশুরকে খুনের কথা গৌতম স্বীকার করেছেন। নারায়ণবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী বলেন, “মেয়ের উপর অত্যাচার হত বলে জামাইয়ের বাড়িতে পাঠানোয় সায় ছিল না। মেয়েও সেখানে যেতে রাজি ছিল না। সেই রাগে জামাই যে এ রকম কাণ্ড ঘটাবে ভাবতে পারিনি।” |
|
|
|
|
|