অনুমোদন নেই, পলিটেকনিকে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রাংশ
রিকাঠামোগত ত্রুটির কারণে বাতিল হয়েছে সরকারি অনুমোদন। তাই ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে কেশিয়াড়ির সিধু-কানহু-বিরসা সরকারি পলিটেকনিক কলেজ।
রাজ্যের কারিগরি শিক্ষার প্রসারে প্রতি মহকুমায় পলিটেকনিক কলেজ গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন-এর (এআইসিটিই) অনুমোদন না থাকায় বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ওই পলিটেকনিক কলেজ। ধুলোয় পড়ে নষ্ট হচ্ছে কলেজের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ।
কারিগরি শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে কেশিয়াড়ি হাইস্কুলের একটি অংশে এই পলিটেকনিক কলেজটি চালু হয়। কলেজের অনুমোদন দেওয়ার সময় এআইসিটিই জানায়, কলেজের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করতে হবে। ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ওই কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তিও হয়। ২০১০ সালে কেশিয়াড়ির গুড়গুড়ি গ্রামে কলেজের ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালেও নিজস্ব ভবন তৈরি না হওয়ায় ওই কলেজের অনুমোদন বাতিল করে এআইসিটিই। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। আগের দু’টি শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়ারা উত্তীর্ণ হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে কলেজ।

বন্ধ সিধু-কানহু-বিরসা পলিটেকনিক কলেজ।
২০১৩ সালে কেশিয়াড়ির গুড়গুড়ি গ্রামে কলেজের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। তারপর এআইসিটিই-র প্রতিনিধিদল কলেজ পরিদর্শনে এসে কলেজে পরিকাঠামোর আরও বেশ কিছু ঘাটতি রয়েছে বলে জানায়। প্রতিনিধি দল জানায়, কেশিয়াড়ি-কুলবনি প্রধান রাস্তা থেকে গুড়গুড়ি গ্রামে কলেজে যাওয়ার সংযোগকারী মোরাম রাস্তা পাকা করতে হবে। তাছাড়া কলেজে উন্নতমানের পরীক্ষাগার ও কলেজ ভবনের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কথাও জানায় প্রতিনিধিদল। কলেজ ভবন তৈরিতে দেরি হওয়ার কারণ কী? প্রশ্নের উত্তরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অধ্যাপক অশোককুমার দে বলেন, “২০১৩ সালে আমি কলেজের দায়িত্ব নিয়েছি। তার আগে কলেজ ভবন তৈরিতে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কলেজের নিজস্ব তিনতলা ভবন নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে কলেজের পরীক্ষাগার আধুনিক মানের করা হয়েছে। পাশাপাশি কলেজের ছাত্রী নিবাস ও কর্মী আবাসন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে এখনও কেশিয়াড়ি-কুলবনি থেকে কলেজ ভবন সংযোগকারী রাস্তা মোরামের রয়ে গিয়েছে। কলেজের চারপাশের সীমানা প্রাচীরেরও একাংশের কাজ বাকি রয়েছে। ফলে, এআইসিটিই-র অনুমোদন আটকে রয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অধ্যাপক অশোকবাবু বলেন, “এআইসিটিই পরিকাঠামোয় যে ঘাটতির কারণে অনুমোদন বাতিল করেছিল তার অধিকাংশই আমরা সংশোধন করেছি। তবে কলেজের সীমানা প্রাচীর ও সংযোগকারী রাস্তাটি পিচ করার কাজ এখনও বাকি রয়েছে। সেটিও শীঘ্রই হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। আশা করি সব কাজ হলে এ বছরই কলেজের অনুমোদন পেয়ে যাব।” জানা গিয়েছে, স্থানীয় কয়েকজন জমি দিতে আপত্তি করায় কলেজের সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। বিডিও অসীমকুমার নিয়োগী বলেন, “জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের দাবি মেনে নেওয়ায় জমি-জট মিটে গিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় কলেজের সীমানা প্রাচীরের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। আর মোরাম রাস্তাটি পিচের করতে টেন্ডার ডাকা হয়েছে।”

ধুলোয় পড়ে নষ্ট হচ্ছে বহুমূল্য যন্ত্রাংশ।
ওই কলেজে অধ্যাপক ও কর্মী মিলিয়ে মোট ৬৯টি পদ রয়েছে। তবে তার মধ্যে রয়েছেন এখন মাত্র ১৬ জন। যার মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন ৯ জন। কলেজ বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকার মেকানিক্যাল শপ, ইলেক্ট্রিক্যাল শপ, সিভিল শপের যন্ত্রাংশগুলিও পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কলেজের মেকানিক্যাল বিভাগের ফোরম্যান রঙ্গনাথ দত্তের কথায়, “সাধ্যমতো কলেজের পরীক্ষাগারের দামি যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করি। এখন আমাদের সকলের একটাই দাবি কলেজ ফের চালু হোক।” কলেজের সিভিল বিভাগের অধ্যাপক অঞ্জন আচার্য বলেন, “কলেজে এসে এ ভাবে ক্লাস না করে বসে থাকতে আমাদেরও ভাল লাগে না। তাই দ্রুত কলেজের অনুমোদন ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।”
জেলায় একমাত্র সরকারি পলিটেকনিক কলেজ রয়েছে ঝাড়গ্রামে। তা-ও অনেক দূরে। তাই কেশিয়াড়ির এই কলেজটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বারিদা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূষণ নায়েক বলেন, “জেলায় সরকারি পলিটেনিক কলেজ বলতে ঝাড়গ্রাম। কিন্তু সেটি এই এলাকা থেকে অনেক দূরে। তাই এত ভাল পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এই কলেজটি বন্ধ থাকায় আমরা আশাহত। সরকার এই কলেজ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নিক।” স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক বিরাম মাণ্ডি বলেন, “২০০৯ থেকে চালু হওয়া ওই কলেজের এই দুর্দশার কথা আমার জানা নেই। এই বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা দফতর ও এআইসিটিই-র সঙ্গে কথা বলব।” তবে কলেজের এই দুরবস্থার জন্য রাজ্যের বিগত বাম সরকারকেই দায়ী করে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “বিগত সরকারের আমলে যথাযথ পরিকাঠামো না গড়েই কলেজের অনুমোদন দিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বাম আমলেই এই কলেজের অনুমোদন বাতিল হয়। ওই কলেজটির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে এআইসিটিই-কে ফের পরিদর্শনের জন্য আসতে বলা হবে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই ওই কলেজ অনুমোদন ফিরে পাবে।”

—নিজস্ব চিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.