|
|
|
|
যান্ত্রিক গোলযোগে বন্ধ ডাকঘর, তমলুকে হয়রানি
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
যান্ত্রিক বিভ্রাটের জেরে গত বৃহস্পতিবার থেকে অচল ইন্টারনেট ব্যবস্থা। তার জেরে ব্যাহত হচ্ছে তমলুকে জেলা সদরের প্রধান ডাকঘরের কাজকর্ম। হয়রানির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে তমলুক প্রধান ডাকঘরের হেড পোস্টমাস্টার শুধাংশুশেখর রায় বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকে ডাকঘরের ইন্টারনেট ব্যবস্থার সার্ভারে গোলযোগ দেখা দিয়েছে। তার ফলে ডাকঘরের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই যান্ত্রিক গোলযোগ মেরামতির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মী কাজ করলেও এখনও তা শেষ হয়নি। দফতরের নিয়মানুযায়ী
এখন পুরনো পদ্ধতিতে কাজ করা যাবে না। ফলে গ্রাহকদের অসুবিধা হচ্ছে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক প্রধান ডাকঘরের অধীনে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। চিঠিপত্র পাঠানো ও গ্রহণ করা ছাড়াও এই গ্রাহকরা ডাক বিভাগের বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমা দেন ও তোলেন। ফলে প্রধান ডাকঘরের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার বেশি আর্থিক লেনদেন হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রধান ডাকঘরের বিভিন্ন বিভাগের কম্পিউটারের কাজকর্মের একমাত্র সার্ভারে যান্ত্রিক গোলযোগ চলছে। ফলে প্রায় অচল হয়ে গিয়েছে প্রধান ডাকঘর। এর ফলে ডাক পরিষেবা-সহ বিভিন্ন স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমা দিতে অথবা তুলতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। সোমবার সকালে ওই ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায় অফিসের প্রবেশ পথে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে ‘সার্ভার’ বিকল থাকায় পরিষেবা আপাতত বন্ধ। |
বন্ধ তমলুকে জেলার প্রধান ডাকঘর।—নিজস্ব চিত্র। |
ডাকঘরের ভিতরে কাউন্টারে কর্মী নেই। রেজিস্ট্রি ডাকে ও স্পিড পোস্টে চিঠি এবং মানি অর্ডার পাঠানো, ডাকঘরের বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা জমা দেওয়া ও তোলার জন্য গ্রাহকরা এসেও ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ডাকঘরের বিভিন্ন স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পের এজেন্টরাও অফিসের সামনে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ দিন তমলুক দেওয়ানি আদালতের ল’ ক্লার্ক বিশ্বজিৎ রায় ১২টি চিঠি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠানোর জন্য প্রধান ডাকঘরে এসেছিলেন। নোটিস দেখে তাঁকেও ফিরে যেতে হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “বিভিন্ন ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতরে এই চিঠি পাঠানোর জন্য এসেছিলাম। কিন্তু ডাকঘরের কাজ বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিঠি পৌঁছতে অসুবিধা হবে।” তমলুক ডাকঘরে কিষান বিকাশ পত্রের মাধ্যমে ৪ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মাধবচন্দ্র রাউত। কিছুদিন আগে তাঁর সেই টাকা দ্বিগুণ হয়েছে। মাধববাবু বলেন, “টাকার জন্য গত বৃহস্পতিবার থেকে ডাকঘরে এসে ঘুরে যাচ্ছি। কিন্তু এখানে যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য টাকা পাচ্ছি না। জানি না আর কতদিন এখানে আসতে হবে।”
ডাকঘরের যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য বিপাকে পড়েছেন ডাকঘরের মাসিক আয় যোজনার (মান্থলি ইনকাম স্কিম) প্রতি মাসের সুদের টাকা তুলতে আসা বহু অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ও প্রবীণ বাসিন্দাও। এ দিন ডাকঘরে ওই প্রকল্পের টাকা তুলতে এসেছিলেন তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্করআড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী চক্রপাণি সান্ধকী। তিনি বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকে টাকা তোলার জন্য ডাকঘরে আসছি। আর প্রতিদিনই বলা হচ্ছে এখনও যান্ত্রিক সমস্যা ঠিক হয়নি। তাই কাজ করা যাচ্ছে না।”
যান্ত্রিক গোলযোগ মেরামতিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া বা বিকল্প পদ্ধতিতে গ্রাহক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব আছে বলে অভিযোগ তমলুক স্মল সেভিংস এজেন্ট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক সুবিনয় মাইতির। সুবিনয়বাবুর অভিযোগ, “গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রধান ডাকঘরের সার্ভার খারাপ। তা মেরামতির জন্য যাঁকে পাঠানো হয়েছে তিনি সারাতে পারছেন না। ফলে এতদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। আরও আগেই দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে এই যান্ত্রিক গোলযোগ মেরামতির কাজ করা যেত।” তাঁর বক্তব্য, “তমলুক প্রধান ডাকঘরে ডাকবিভাগের স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পের অধীনে ১৪০ জন এজেন্ট রয়েছেন। তাছাড়া বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির আর্থিক কেলেঙ্কারির পর থেকে সাধারণ মানুষ ফের ডাকবিভাগের সঞ্চয় প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু ডাকবিভাগের এইসব সমস্যার কারণে আমাদেরও নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|