জাল ছড়াচ্ছে সন্ত্রাস, হুঁশিয়ারি নারায়ণনের
দেশে গত দু’বছরে জঙ্গি-হামলার ঘটনা কমেছে। তা দেখে সন্ত্রাসবাদে লাগাম পড়ানো গিয়েছে বলে ধরে নিলে বিরাট ভুল হবে বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন। তাঁর মতে, দেশ জুড়ে লস্কর-ই-তইবা ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জাল এখনও সক্রিয়। আগামী দিনে তাই নাশকতার সংখ্যা ও তীব্রতা, দুই-ই বাড়তে পারে। প্রস্তুত থাকতে হবে আত্মঘাতী হামলা রোখার জন্যও। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে আজ এ ভাবেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে থেকে শুরু করে দেশের সমস্ত নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানদের সতর্ক করে দিলেন নারায়ণন।
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান থাকার সময়ে নারায়ণনই সেই সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবসে বিশেষ বক্তৃতা চালু করেছিলেন। তাঁকেই আজ ডাকা হয়েছিল এনআইএ-র পঞ্চম প্রতিষ্ঠা দিবসে সংস্থার প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল আর ভি রাজু স্মৃতি বক্তৃতা দিতে। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এই বক্তৃতায় নারায়ণন হুঁশিয়ার করে দেন, “আল-কায়দা শেষ হয়ে গিয়েছে, এর কোনও প্রমাণ নেই। বাস্তব হল, বিশ্ব জুড়েই সন্ত্রাসবাদ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাশিয়া-সহ এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু অংশে। আল-কায়দার মতো সংগঠন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ায় একগুচ্ছ নতুন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি আল-কায়দার থেকেও বিপজ্জনক।”
ভারতের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নয়াদিল্লির চিন্তা আরও বেশি বলে নারায়ণনের মত। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “অগ্নিগর্ভ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কী পরিস্থিতি, তার উপর দেশের পরিস্থিতি নির্ভর করছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সরকারের দুর্বলতা এবং নানা রকম সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি চিন্তার কারণ। এই দু’টি দেশে তালিবানের শক্তি কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং আফগানিস্তানে তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণ এবং তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের বিনা শর্তে আলোচনায় বসার ইচ্ছা আমাদের পক্ষে সব থেকে খারাপ হতে পারে।” নারায়ণনের বক্তব্য, ভারতকে বিপাকে ফেলতে জেহাদিদের এখনও সাহায্য করছে পাকিস্তান। আরও চিন্তার কারণ হল, পাক-সেনার নয়া নীতি। যেখানে ইটের বদলে পাটকেল ছোড়ার কথা বলা হয়েছে। যার অর্থ সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত কোনও ব্যবস্থা নিলে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের কথা ভাবতেও পিছ-পা হবে না ইসলামাবাদ।
বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতির নিরিখে ভারতের সমস্যার কথা বিশদে ব্যাখ্যা করেন নারায়ণন। তাঁর বক্তব্য, এখন আল-কায়দার উপ-সংগঠনগুলি সব থেকে বেশি শক্তিশালী। তার ফলে লস্কর, জইশ-ই-মহম্মদ বা বাংলাদেশের হুজি-র মতো আঞ্চলিক সংগঠনগুলিরও শক্তি বাড়ছে। পশ্চিম এশিয়া এবং ভবিষ্যতে আফগানিস্তান এই সংগঠনগুলির নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠবে। এটাই ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর চিন্তার বিষয়।
নারায়ণন সতর্ক করে দিয়েছেন, আগামী দিনে কী ভাবে, কোথায়, কখন জঙ্গি-হামলা হবে, তা কোনও নীতি মেনে ঠিক হবে না। তার ফলে গোয়েন্দাদের পক্ষেও হামলার সময় ও অবস্থান আগেভাগে আঁচ করা মুশকিল হবে। খুব বেশি হলে হামলার ধরনটা কী হবে, তা আন্দাজ করা যেতে পারে। ২৬/১১-র মুম্বই-হামলার সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে ছিলেন নারায়ণন। তাঁর বক্তব্য, সে সময়ও হামলা হবে আঁচ করা গিয়েছিল। তাজের মতো হোটেলে হামলা হবে, এমনটাও আন্দাজ করা গিয়েছিল। কিন্তু কোথায়, কবে, কী ধরনের হামলা হবে, তা বোঝা যায়নি। ওই হামলার পরেই এনআইএ তৈরি হয়েছিল। তাই এনআইএ-র বিশেষ ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে নারায়ণনের বার্তা, “এনআইএ-কে তার ক্ষমতা ও গণ্ডির বাইরে ব্যবহার করার ঝোঁক কমাতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এনআইএ-কে সব কিছুর তদন্তেই নামিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সরকারের মধ্যে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.