|
|
|
|
দাগি প্রার্থী নয়, জানালেন দুর্নীতি-বিরোধী মুখ রাহুল |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি
২০ জানুয়ারি |
এর আগে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রীদের বাঁচাতে কেন্দ্রের আনা অর্ডিন্যান্সকে ‘ননসেন্স’ বলেছিলেন। ফলে বাতিল হয়ে গিয়েছিল অর্ডিন্যান্স। এ বার নিজের দুর্নীতি-বিরোধী ভাবমূর্তিকে জোরদার করতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। দলীয় নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, লোকসভা ভোটে দলের কোনও ‘দাগি’ সাংসদ বা নেতাকে প্রার্থী করা যাবে না।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে রাহুল জানিয়েছেন, বর্তমান কংগ্রেস সাংসদদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের কাউকেই ফের প্রার্থী করা যাবে না। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কোনও নেতাকেও টিকিট দেবে না দল। তা সে যত ‘বড় মাপের’ নেতাই হোন!
রাহুল শিবির জানাচ্ছে, সে দিক থেকে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনশল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়, সুরেশ কলমডীর মতো নেতাদের এ বার টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমনকী কয়লা কেলেঙ্কারির পর কংগ্রেসের টিকিট না-ও পেতে পারেন শিল্পপতি তথা হরিয়ানার সাংসদ নবীন জিন্দলও। এ ছাড়াও তালিকায় এমন কিছু নেতা রয়েছেন, যাঁরা জাতীয় স্তরে খুব বেশি পরিচিত নন।
লোকসভায় এখন কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ২০৪। রাহুল শিবির সূত্রে বলা হচ্ছে, দুর্নীতির অভিযোগ বা সে ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে এর মধ্যে অন্তত ১০% দলীয় সাংসদকে এ বার প্রার্থী করা হবে না। একই ভাবে স্থানীয় স্তরে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কারণে এ বার টিকিট দেওয়া হবে না আরও কমবেশি ৪০ সাংসদকে।
তবে টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন রাহুল। কেন? রাহুলের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রের এক মন্ত্রী আজ বলেন, “এ বারের লোকসভা ভোটে দুর্নীতি একটি বড় বিষয়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে নিজস্ব ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাইছেন রাহুল। এর পরেও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কেউ কংগ্রেসের টিকিট পেয়ে গেলে বিষয়টিকে হাতিয়ার করবে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি। তাই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন রাহুল।” পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বকে সতর্ক করে রাহুল জানিয়েছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেখে নিতে হবে, অভিযোগের কোনও ভিত্তি রয়েছে, নাকি কংগ্রেসের নেতা বা সাংসদকে ফাঁসাতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে। চিন্তা বাড়িয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে আম আদমি পার্টির (আপ) উত্থানও। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই দিয়ে শুরু করেই আপ আজ দিল্লির গদিতে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এর ফলে কংগ্রেস-বিজেপি উভয়ের কাছেই প্রার্থী বাছাই করা এ বার বড় চ্যালেঞ্জ। দুই দলের কেউ কোনও ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ নেতাকে প্রার্থী করলে জাতীয় স্তরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”
দুর্নীতির বিষয়টি ছাড়াও প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাহুল কিছু নিয়মকানুনও বেঁধে দিয়েছেন। প্রথমত, কেন্দ্র বা রাজ্য স্তরের কোনও বড় নেতার সুপারিশে কাউকে প্রার্থী করা চলবে না। কংগ্রেস রাজনীতিতে এই রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। কিন্তু এ বার রাহুলের নির্দেশ, যদি কোনও নেতা তাঁর অনুগামীকে প্রার্থী করার জন্য সুপারিশ করেন, তা হলে তাঁকে লিখিত দিতে হবে। যাতে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের জন্য তিনি দায়বদ্ধ থাকেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোট থেকেই এই শিক্ষা নিয়েছেন রাহুল। কারণ, দুই রাজ্যে প্রার্থী তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরের কিছু নেতা প্রভাব খাটিয়েছিলেন। তাতে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হন। দুই রাজ্যে কংগ্রেসের পরাজয়ের সেটা অন্যতম কারণ বলেই মনে করছেন দলের নেতারা। দ্বিতীয়ত, রাহুল জানিয়েছেন, গত দুই লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে পরাস্ত কোনও নেতাকে এ বার আর প্রার্থী করা যাবে না। তৃতীয়ত, গত লোকসভা ভোটে এক লক্ষের বেশি ব্যবধানে পরাস্ত প্রার্থীরা টিকিট পাবেন না। চতুর্থত, যোগ্যতা বিচার করে যথাসম্ভব তরুণ ও মহিলাকে এ বার প্রার্থী করতে হবে। এই সব নিয়মকানুন বেঁধে দিয়ে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য ইতিমধ্যে রাজ্যওয়াড়ি কমিটি গড়েছেন রাহুল। পশ্চিমবঙ্গে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দেকে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা তৈরির ব্যাপার নিয়ে কাল প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে প্রাথমিক কথা হবে। তাই সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে সম্পাদক শাকিল আহমেদ খান ওই বৈঠকে থাকবেন। সেই সঙ্গে রাহুল জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ জন প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করে দেবে দল। |
|
|
|
|
|