নজরে অর্থনীতি, সংস্কারের শেষ চেষ্টায় মনমোহন
বিদায়ের আগে আর্থিক সংস্কারের শেষ চেষ্টা!
খামতি স্বীকার করে মনমোহন সিংহ জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যতখানি আর্থিক সংস্কার করতে চেয়েছিলেন, ততটা করতে পারেননি। তবে শেষ পাঁচ মাসে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একটা শেষ চেষ্টা করবেন, এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন মনমোহন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই এ বার একগুচ্ছ সংস্কারের কর্মসূচি পাকা করে ফেলেছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, পরিকাঠামো, জাতীয় সড়ক ও আবাসন ক্ষেত্রে কাজের গতি আনার জন্য খুব শীঘ্রই একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই তিনটি ক্ষেত্রই অর্থের অভাবে ধুঁকছে। অথচ পরিকাঠামোয় ভর করেই ছোটে অর্থনীতির রথ। এ বার তাই তহবিল তৈরি করে এই ক্ষেত্রগুলিতে লগ্নির সমস্যা মেটাতে চাইছে মনমোহন-সরকার। বড় মাপের আর্থিক সংস্কার না হলেও এই সব সিদ্ধান্তে অর্থনীতিতে গতি আসবে বলেই অর্থ মন্ত্রকের আশা। সব থেকে বড় কথা, রাজনৈতিক বিরোধিতায় এই সংস্কারের কাজ আটকে যাওয়ার আশঙ্কা কম।
দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় (২০১২-’১৭) দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার অর্ধেকই আসবে বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে। কিন্তু গত অর্থবর্ষ থেকেই দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি সংস্থাগুলি পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লগ্নির তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। ফলে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগেও তেমন কোনও নতুন প্রকল্প হচ্ছে না। ঋণদাতা সংস্থাগুলিও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে টাকা ঢালার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে গতি আনতে চাইছেন মনমোহন-চিদম্বরম?
অর্থ বিষয়ক সচিব অরবিন্দ মায়ারাম বলছেন, ঠিকমতো ঋণ মিলছে না বলে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে নতুন লগ্নি হচ্ছে না। তাই ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ট্রাস্ট ফান্ড’ নামের একটি তহবিল তৈরি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই তহবিলে লগ্নিকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করবেন। এ জন্য ভাল সুদও মিলবে। বিদেশি লগ্নিকারীরাও এই ফান্ডে অর্থ লগ্নি করতে পারেন। লগ্নির পুরো অর্থটাই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, হংকংয়ের মতো দেশগুলিতে এই ধরনের তহবিল রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন সফরে গিয়ে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমও সেখানকার লগ্নিকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ, সড়ক, বন্দর, বিমান চলাচলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লগ্নির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
একই ভাবে আবাসন ক্ষেত্রে লগ্নির অভাব মেটাতে ‘রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেশীয় লগ্নিকারীদের উৎসাহ দিতে এই তহবিলে লগ্নির উপর কর ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই তহবিলেও বিদেশি লগ্নি টানতে চাইছে মনমোহন-সরকার। যার জন্য বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়মেও সংশোধন করতে হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করে সেই পথও পরিষ্কার করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছর ধরে এ নিয়ে আলোচনা চললেও কাজ খুব বেশি এগোয়নি। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই কাজ সেরে ফেলতে চাইছে মনমোহন-সরকার। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, নির্মীয়মান আবাসনে অনেকেই বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনে সমস্যায় পড়েছেন। কারণ সময়মতো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের ব্যাখ্যা, তার বদলে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টে বিনিয়োগ করা অনেক কম ঝুঁকির। এই তহবিল থেকে নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। ট্রাস্টের তরফেই লাভজনক আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। সেখান থেকে আয়ের ভাগ পাবেন ট্রাস্টে লগ্নিকারীরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের আর একটি মাথা ব্যাথার কারণ হল জাতীয় সড়ক। লগ্নির অভাবে নতুন সড়ক তৈরির কাজও আটকে থাকছে। যাদের সড়ক তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল, তারা অর্থের অভাবে কাজ শেষ করতে পারেননি। তার জন্য জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু বরাত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ঠিকাদার সংস্থাগুলি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন। কাজে গতি আনতে ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে কিছু সুরাহা দিতে চাইছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কী ধরনের সুরাহা দেওয়া হবে, তা নিয়ে এত দিন পরিবহণ মন্ত্রকের সঙ্গে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিবাদ চলছিল। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেই বিবাদের অবসান হয়েছে। খুব শীঘ্রই জাতীয় সড়ক ক্ষেত্রের জন্য একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।
দীর্ঘ মেয়াদে এই সব সংস্কারের সুফল অর্থনীতিতে পড়লেও, ইউপিএ-র ভোট বাক্সে এর কতখানি সুফল মিলবে, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। ইউপিএ-নেতৃত্বের যুক্তি, দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে যে হতাশার মনোভাব তৈরি হয়েছে, সেটা কাটানোটাই আসল উদ্দেশ্য।
অর্থনীতি সম্পর্কে হতাশা কাটলে, ইউপিএ সম্পর্কেও মানুষের হতাশা কাটতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.