জল প্রকল্প বাতিল হওয়ার প্রতিবাদে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কুলটিতে। টানা ৭২ ঘণ্টা অবস্থান-বিক্ষোভ করেছে ডিওয়াইএফ। সোমবার তাদের কয়েকশো সদস্য-সমর্থক পুরপ্রধানের হাতে একটি প্রতিবাদপত্রও তুলে দেন। পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, প্রকল্প বাতিল নয়, প্রায় দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দে নতুন একটি জল প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে।
পঁয়ত্রিশ ওয়ার্ডের কুলটি পুর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা বহু দিনের। দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইস্কো এবং ইসিএল নিজেদের আবাসন এলাকায় জল সরবরাহ করেন। সামাজিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গ হিসাবে আশপাশের কিছু এলাকাতেও তাঁরা জল সরবরাহ করেন। এ ছাড়া বাকি এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের। বরাকরে পানীয় জলের সমস্যা অনেক দিনের। এই সঙ্কট মেটাতে প্রায় ২৫ বছর আগে সেখানে একটি পৃথক জলপ্রকল্প তৈরি হয়। বরাকর নদীতে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে জল তুলে তা এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। সঙ্কট অবশ্য এখনও পুরোপুরি মেটেনি। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলের চাহিদাও বেড়েছে। |
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মানবেড়িয়া, কুলটির বিডিও পাড়া, দক্ষিণ-রানিতলা, শিয়ালডাঙা, কেন্দুয়াবাজার, চিনাকুড়ি, বেজডিহি, শীতলপুর, রানিসায়ের, মিঠানির কিছু অংশ, নিয়ামতপুরের বিষ্ণুপ্রিয়া কলোনি ইত্যাদি এলাকায় জলের সঙ্কট চরমে। বাসিন্দারা জানান, সাধারণত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে পানীয় জলের হাহাকার শুরু হয়ে যায়। বর্ষা না আসা পর্যন্ত রেহাই মেলে না। প্রত্যন্ত এলাকা তো বটেই, শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদেরও কমবেশি চার কিলোমিটার পথ উজিয়ে জল জোগাড় করে আনতে হয়। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, রাত জেগে কলের তলায় লাইন দিয়েও দিনে ছ’বালতির বেশি জল মেলে না। এক বালতি জলের জন্য প্রায়ই প্রতিবেশীদের মধ্যে বচসা-মারপিট বেধে যায়। সমাধান চেয়ে বাসিন্দারা বহু বার রাস্তা অবরোধ করেছেন। টানা ২৪ ঘণ্টা জি টি রোড আটকে বিক্ষোভও হয়েছে।
শেষমেশ ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক কুলটির জন্য ১৩৩ কোটি টাকার একটি জল প্রকল্প অনুমোদন করে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেটি তৈরি হয়নি। অবশেষে সম্প্রতি প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কুলটি জুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাজের সব স্তরের মানুষ। এলাকার শিক্ষাবিদ শ্যামাপদ চট্টরাজ বলেন, “কুলটির নাগরিকদের পানীয় জলের সমস্যা মিটত। |
কেন প্রকল্প করা গেল না, বুঝলাম না। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠাব।” এলাকার উদ্যোগপতি গিরিধারিলাল অগ্রবালের কথায়, “এত দিন ধরে প্রকল্পটি পড়ে থাকল। তৈরি করা গেল না। এটা পুর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা। কী ভাবে সমস্যা মেটানো হবে জানি না। প্রয়োজনে আমরাই কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখব।” সাহিত্যিক নন্দদুলাল আচার্যের বক্তব্য, “আমাদের দুর্ভাগ্য, প্রকল্পটি হাতে পেয়েও পুরসভা সেটি তৈরি করতে পারলেন না। এখন কী ভাবে জলের সঙ্কট মিটবে, তারাই ঠিক করুক।”
এই অবস্থায় প্রকল্পের রূপায়ণ চেয়ে ডিওয়াইএফ নিয়ামতপুরে গত ৭২ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ-অবস্থান করেছে। সোমবার পুরসভায় বিক্ষোভ করে পুরপ্রধানকে প্রতিবাদপত্র দেয় তারা। এই বিক্ষোভের পাল্টা আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূলও। এলাকায় পথসভা করে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন নেতা-কর্মীরা। দলের ব্লক নেতা সুব্রত সিংহের দাবি, “সিপিএমের হাতে থাকাকালীন এডিডিএ-র অনমনীয় মনেভাবের জন্যই এই জল প্রকল্পের রূপায়ণ হয়নি।” ডিওয়াইএফের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে কুলটির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কে কোথায় কী বলেছেন, আমি জানি না। আমি বলছি, জল প্রকল্প বাতিল হয়নি। উল্টে, ২৬৪ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রের কাছে আজই পাঠাচ্ছি।” তবে এই নতুন প্রকল্পের ব্যাপারে বিশদ কিছু তিনি জানাননি। |