কেএলও দমনে দুই জেলায় দুই কৌশল
বিপদটা একই ধরনের। সন্দেহের তিরও বিশেষ একটি জঙ্গি সংগঠনের দিকে। তবু কেএলও - বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের দু’টি জেলায় দু’রকম রণকৌশল নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ।
জেলার নাম মালদহ। নিরন্তর পুলিশি অভিযান চলছে হবিবপুর, বামনগোলায়, বিশেষত সেখানকার বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলিতে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের সঙ্গে নিয়মিত তথ্য আদানপ্রদানও করছে পুলিশ। আইজি (উত্তরবঙ্গ ) জাভেদ শামিম সম্প্রতি টানা তিন দিন ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন মালদহে। এই পুলিশি তৎপরতার পাখির চোখ এক জনই। বামনগোলার বাসিন্দা মাধব মণ্ডল ওরফে মালখান সিংহ। কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা কেএলও - সাংগঠনিক সম্পাদক। সাম্প্রতিক কালে কেএলও জঙ্গি সন্দেহে মালদহে ধৃতদের প্রায় সকলেই মালখানের ঘনিষ্ঠ। তাদের অনেকেই জেলার দাগি দুষ্কৃতী।
জেলা জলপাইগুড়ি। মালখানেরই সংগঠনের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ওই জেলায় যে -পুলিশি অভিযান চলছে, তা কিন্তু ভিন্ন ধরনের। অসম ঘেঁষা জঙ্গলগুলিতে স্ট্র্যাকো, স্পেশ্যাল সিকিওরিটি ফোর্সের মতো জঙ্গি দমনে প্রশিক্ষিত বাহিনী দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। সেখানে পুলিশের মাথাব্যথা মালখানের মতো কোনও বিশেষ এক জন নয়। বরং বেশ কয়েক জন। তারা নামনি অসমের বাসিন্দা। সম্প্রতি রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (আইবি )- খবর ছিল, গোসাঁইগাঁও থেকে চার জন কেএলও জঙ্গির একটি দল নাশকতা ঘটানোর জন্য কুমারগ্রাম হয়ে আলিপুরদুয়ারে ঢোকার ছক কষছে। খবর পাওয়া মাত্র অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্ভাব্য কয়েকটি জঙ্গলপথে নাকাবন্দি রেখেছিল জলপাইগুড়ি পুলিশ। এই ধরনের অভিযান চালানোর সঙ্গে সঙ্গে জেলার রাজবংশী যুবকদের মনও পড়ে নিতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
বাংলার পশ্চিমাঞ্চলে মাওবাদী প্রভাবিত জঙ্গলমহলের তিন জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া পশ্চিম মেদিনীপুরে উগ্র বামপন্থা দমনে পুলিশকে এই ধরনের পৃথক কৌশল নিতে হয়নি। কেএলও - ক্ষেত্রে দু’রকম পন্থা কেন?
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কেএলও - মোকাবিলায় আমাদের মালদহে এক ভাবে আবার জলপাইগুড়ি জেলায় অন্য ভাবে এগোতে হচ্ছে। তবে জলপাইগুড়ির কৌশল নেওয়া হচ্ছে কোচবিহারেও।”
কী সেই বাস্তব পরিস্থিতি?
পুলিশের বক্তব্য, মালদহে কেএলও - যাবতীয় কার্যকলাপ আবর্তিত হচ্ছে শুধু মালখানকে ঘিরে। গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে মালদহের বামনগোলার কালিকাপুরে একটি বাসের উপরে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালানোর ঘটনায় মালখান নিজে ঘটনাস্থলে ছিল। গত ১৭ জুন হবিবপুরে নৃপেন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গুলি চালিয়ে খুন কিংবা ২৫ জুন গাজোলে বোমাবাজির মতো ঘটনার পিছনেও ছিল মালখানের মাথা। ঘটনার পরে সে এবং তার শাগরেদরা হবিবপুর বা বামনগোলার সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে কিংবা বিহারের কিষানগঞ্জ হয়ে গা -ঢাকা দিচ্ছে নেপালে।
কিন্তু সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় অসমের বাসিন্দা কেএলও জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ি শহরের অদূরে পাহাড়পুর -বজরাপাড়ায় সাইকেলে ঝোলানো ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি বিস্ফোরণে ছ’জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কেএলও - প্রথম ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডান্ট হিরণ্য ওরফে অনাথই মূল চক্রী বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। গোয়েন্দাদের মতে, হিরণ্যেরই নির্দেশে পবনের মতো কেএলও জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এই হিরণ্য, পবন সকলেই নামনি অসমের বাসিন্দা।
গোয়েন্দারা জানান, পুলিশি নজরদারি তীব্র হলে ওই কেএলও জঙ্গিরা নিজেদের রাজ্য অসম বা পড়শি দেশ ভুটানে চলে যাচ্ছে। পুলিশকর্তাদের মতে, ডুয়ার্সে নাশকতা বন্ধ করতে হলে অসম সরকারকেও কেএলও এবং তাদের মদতদাতা এনডিএফবি (সংবিজিত গোষ্ঠী ) , আলফা, রাভা ভাইপার আর্মির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুক্রবার রাতে কোকরাঝাড়ের সেরফাংগুড়িতে বাস থামিয়ে পাঁচ যাত্রীকে গুলি করে হত্যা এবং শনিবার রাতে কোকরাঝাড়েরই বগরিবাড়িতে এক বাঙালি ব্যবসায়ীকে বাড়িতে ঢুকে খুনের পরে অসম পুলিশ কিছুটা কঠোর হবে বলে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দাদের আশা।
জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের মতো জেলায় কামতাপুরী আন্দোলনের পুরনো ধারা আছে এবং রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষের বসবাস। তাই সেখানে যে শুধু সশস্ত্র অভিযানে সমস্যা মিটবে না, তা মেনে নিচ্ছেন পুলিশকর্তারা। এক গোয়েন্দা -কর্তার বক্তব্য, আত্মসমর্পণের পরেও কেএলও জঙ্গিদের সন্তোষজনক পুনর্বাসন হচ্ছে না। জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে ওই জঙ্গি সংগঠনের সাম্প্রতিক সক্রিয়তা কেন, সেটা বুঝতে এই বিষয়টিও বিবেচনার আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “মালদহে মালখানকে ধরতে পারলে এক লহমায় সেখানকার কেএলও -সমস্যা অনেকটাই কমবে। জলপাইগুড়িতে কিন্তু তা নয়। সেই জন্য কেএলও দমনে অভিন্ন রণকৌশল নেওয়াও সম্ভব নয়।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.