মাঘেও শীতের দুর্দশায় খলনায়ক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা
মাঘের শীত এখনও পর্যন্ত বাঘ তো নয়ই। বরং বলা চলে খরগোশ। শীতের মেজাজই বার এতটাই ভিতু-ভিতু! তবে ভেল্কিবাজি বা খেয়ালিপনায় বিগত বর্ষার সঙ্গে তার মিল দেখছেন অনেকে। কেউ কেউ আশায় আশায় প্রশ্ন তুলছেন, বর্ষার মতো নির্দিষ্ট সময়ের পরিবর্তে শীতও কি আরও পরে ধুমধাড়াক্কা ব্যাট চালাবে?
রবিবার, মাঘের পাঁচ তারিখেও অবশ্য তার ইঙ্গিত বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। কেননা শীতের নামগন্ধ নেই বললেই চলে। মাঘের প্রথম সপ্তাহের পরে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে কি না, নিশ্চিত নন আবহবিদেরাও। পৌষ -মাঘে জোরদার ঠান্ডা পড়াটাই বাংলার শীত -ক্যালেন্ডারের চেনা ছবি। কিন্তু বছরের ছবিটা তার থেকে অনেকটাই আলাদা হয়ে গিয়েছে। শীতের এমন চরিত্র -বদল কেন?
গবেষণা শুরু করেছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, বাংলার শীত -ভাগ্যে এমন বিপর্যয়ের পিছনে রয়েছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগর থেকে আসা বায়ুপ্রবাহ )- চরিত্র -বদল। কাশ্মীরে ঘনঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়ার ফলে বদল ঘটছে মধ্য পূর্ব ভারতের বায়ুপ্রবাহেও। এই ঝঞ্ঝা বায়ুপ্রবাহের চরিত্র -বদলের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী কি না, সেটাও দেখছেন তাঁরা।
চলতি মরসুমের গোড়া থেকেই বারবার বাধার মুখে পড়ছে শীত। কখনও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সরাসরি পূর্ব ভারতে বয়ে আসার ফলে উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়েছে। বাধা পেয়েছে শীত। আবার কখনও উত্তুরে হাওয়ার পথে পাঁচিল তুলেছে ঘূর্ণাবর্ত বঙ্গোপসাগরের পুবালি হাওয়া। ফলে দক্ষিণবঙ্গে শুকনো উত্তুরে হাওয়ার জায়গা নিয়েছে জলীয় বাষ্প কুয়াশা। এর ফলে কলকাতা তো বটেই, বীরভূম -বাঁকুড়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেও ঠান্ডার পরিচিত দাপট মেলেনি।
শীত উধাও। শাল বিক্রেতাই খুলে রেখেছেন নিজের গরম পোশাক। রবিবার কলকাতায়। ছবি: সুদীপ আচার্য
আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী বলছেন, “ডিসেম্বরের শেষ থেকেই বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়।” এ বার শুধু বীরভূমেই শৈত্যপ্রবাহ দেখা গিয়েছে। তা - মাত্র এক দিন !
উত্তর এবং পূর্ব ভারতে শীতের দাপটের পিছনে বড় অবদান থাকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার। আবার শীত যে বার স্বমেজাজে বড় ইনিংস খেলতেই পারছে না, তার জন্য ওই ঝঞ্ঝাকেই খলনায়ক সাব্যস্ত করছে হাওয়া অফিস। এটা হচ্ছে কী ভাবে?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সময় -নির্ভর একটা বিশেষ ছন্দের উপরে শীতের মেজাজ নির্ভর করে। ভূমধ্যসাগর থেকে ওই ঝঞ্ঝা আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে হাজির হয়। তার দাপটে বৃষ্টি তুষারপাত হয় ওই রাজ্যে। সেই ঝঞ্ঝা উত্তর ভারত দিয়ে বয়ে যাওয়ার পরে ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়া বয়ে আসে পূর্ব ভারতে। জাঁকিয়ে শীত পড়ে বাংলায়। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার এই সফরে সময়গত ফারাকের বড় ভূমিকা থাকে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “শীত জাঁকিয়ে পড়ার জন্য দু’টি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মধ্যে কয়েক দিনের ফারাক প্রয়োজন। সেই ফাঁকে হিম -হাওয়া বয়ে আসার এবং শীত থিতু হওয়ার সময় পায়।” কিন্তু বার যে সেটা হচ্ছে না, তার কারণ আগে -পরের পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মধ্যে দরকারি ফারাকটা থাকছে না। বার ঝঞ্ঝা হাজির হচ্ছে পরের পর। একেবারে গায়ে গায়ে তাদের হাজিরা চলতে থাকায় হিম -হাওয়ার দীর্ঘ প্রবাহের সময়ই মিলছে না। থিতু হওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না ঠান্ডা। সব মিলিয়েই শীতের কপালে মন্দা !
শুধু পশ্চিমী ঝঞ্ঝার চরিত্র -বদল নয়। সেই সঙ্গে একটা বদল ঘটছে দেশের বায়ুপ্রবাহেও। উত্তর -পশ্চিম ভারতে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। তা সরে আসছে মধ্য ভারতের দিকে। সেই ঘূর্ণাবর্তের টানেই বঙ্গোপসাগরের পুবালি বাতাস পথ ভুলে হাজির হচ্ছে পূর্ব ভারতে। উত্তুরে আর পুবালি হাওয়ার মুখোমুখি যুদ্ধে কনকনে শীত মালুমই হচ্ছে না।
তা হলে কি বার আর জোরদার শীত মিলবেই না?
তেমন আশঙ্কা ঘোরাফেরা করছে দিল্লির মৌসম ভবনের অন্দরেও। আর গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, দিন দুয়েকের মধ্যে উত্তর -পশ্চিম ভারতে ফের একটা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে। তাতে ফের বাধার মুখে পড়বে উত্তুরে হাওয়া।
দেখেশুনে অনেক আবহবিদই বলছেন, বর্ষার মতো শীতের চরিত্রও খামখেয়ালি হয়ে উঠতে পারে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বর্ষা নিজমূর্তি ধরছে নির্দিষ্ট সময়ের পরে। অনেক সময় জুন -জুলাইয়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না। বেশি বর্ষণ হচ্ছে অগস্ট -সেপ্টেম্বরে। বাংলা থেকে বর্ষা বিদায় নিতে নিতে অক্টোবরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে রাজ্য থেকে বর্ষা বিদায় নিয়েছিল অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে।
বর্ষার এই খামখেয়ালিপনা দেখে আবহবিজ্ঞানী পরিবেশবিদদের একাংশ বলেছিলেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন জলবায়ুর মর্জি বদলের ফলেই বর্ষার ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আসছে। বার শীতের চরিত্রে বদল দেখে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তন কি শীতেও থাবা বসাচ্ছে?
এখনও এটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। তবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার চরিত্র -বদলের জন্য ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার আবহাওয়ার চরিত্র নিয়ে গবেষণা জরুরি বলে বলে মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.