ঠাঁই নেই গুন্ডার, দুলাল-পাড়ায় কড়া বুদ্ধ
পলক্ষ ছিল তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। দমদমে সেই মঞ্চ থেকেই নাম না-করে জোড়া খুনে অভিযুক্ত নেতা দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর অনুগামী এবং নিজের দলের একাংশকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! তাঁর সাফ বার্তা বাম জমানায় গুন্ডামি করে যাদের জেলে যেতে হয়েছে, বেরিয়ে এসে ফের সিপিএম করতে চাইলে তাদের কোনও ঠাঁই দলে হবে না!
কাশীপুর-বেলগাছিয়া, সিঁথি এলাকায় বিরোধীদের উপরে শাসক তৃণমূলের তাণ্ডবের অভিযোগে এখন সরব বামেরা। কিছু দিন আগেই ‘সন্ত্রাসে’র প্রতিবাদে চিড়িয়া মোড় থেকে বিমান বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের মিছিলে হামলাও হয়েছিল। তারই প্রতিবাদে রবিবার দমদমের সেভেন ট্যাঙ্কস এলাকায় কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের সমাবেশে গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। এই এলাকাই এক সময়ে দুলাল ও তাঁর দলবলের বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। দমদমে জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুলালের দুই শাগরেদ বাপি ও কৃষ্ণ সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছে। হাইকোর্টে তাদের জামিনের আবেদনের উপরে মূলত সওয়াল করেছিলেন সিপিএমের আইনজীবী নেতা নিশীথ অধিকারী, যিনি আবার প্রায় এক যুগ আগে ওই ঘটনার সময়ে রাজ্যের আইনমন্ত্রী ছিলেন! এই ঘটনায় দমদম ও সংলগ্ন এলাকার সিপিএম নেতারাই আতঙ্কে আছেন। দুলাল বা তার অনুগামীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সক্রিয় হলে এলাকার পরিস্থিতি আবার জটিল হয়ে উঠবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। এই মর্মে এলাকায় ব্যানারও পড়েছে।
মুখোমুখি। পোস্টারে বর্তমান। মঞ্চে প্রাক্তন। রবিবার দমদমে বামফ্রন্টের এই সভা
থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানালেন, দলে গুন্ডার স্থান হবে না। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই এ দিন মঞ্চে বিমানবাবুকে সাক্ষী রেখেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু বলেছেন, “আমি সব খবর রাখি না। তবে কিছু কিছু খবর কানে আসে! শুনছি, দু-এক জন নাকি জামিন পেয়েছে। বেরিয়ে তারা নাকি আবার পার্টি করবে! এটা কখনওই হতে পারে না! আপনাদের বলে যাচ্ছি, মাতব্বরি-গুন্ডামিতে যারা অভিযুক্ত, তাদের কোনও জায়গা পার্টিতে নেই!” সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, অভিযুক্তদের পাশাপাশি দলের যে অংশ তাদের মদত দেওয়ার কথা ভাবছে, তাদের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রত্যাশিত ভাবেই, বামেদের মিছিলে হামলা এবং ওই এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের আক্রমণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু সেই কথা বলতে গিয়েই নাম না-করে টেনে এনেছেন অতীতের দুলাল-কাণ্ডের প্রসঙ্গ। বলেছেন, “আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেন, এই এলাকায় আপনারা কি কোনও অন্যায় করেননি? আমি স্বীকার করতে বাধ্য, আমাদের সময়েও কিছু উচ্ছৃঙ্খলতা, গুন্ডামি হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। তাদের জেলে পাঠানো হয়েছিল।” দলের একাংশের বাধা উপেক্ষা করেই সেই সময়ে দুলালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু। সেই ঘটনার দিকেও ইঙ্গিত করে এ দিন বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, “আমাকে শুনতে হয়েছিল, নিজের পার্টির লোকজনকে জেলে ঢুকিয়ে দিলেন? আমি বলেছিলাম, কিছু করার নেই! যারা পার্টির নাম করে এ সব করে বেড়াবে, তাদের ছাড়া যাবে না!”
এলাকা জুড়ে এমনই পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
বস্তুত, কৌশলে বুদ্ধবাবু এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাম জমানায় দুলালদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা তাঁর সরকার নিয়েছিল, তৃণমূল জমানায় শত অভিযোগেও প্রশাসন তেমন কোনও পদক্ষেপ করছে না।
দমদম রোড বরাবর একেবারে চিড়িয়া মোড় বা ভিতরে ৫০ ফুট রাস্তা ধরে সিঁথি গোটা তল্লাট মুড়ে দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের পতাকা এবং তৃণমূল নেত্রীর বিরাট কাট-আউটে! দমদম রোড দিয়ে এ দিন অটো চলাচল করতে দেখা গিয়েছে আইএনটিটিইউসি-র পতাকা মাথায় নিয়ে! এমনকী, বুদ্ধবাবুর মঞ্চের কয়েক হাতের মধ্যে তাঁদেরই দিকে মুখ করে লাগানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর জোড়হস্ত কাট-আউট! এমন ঘটনায় উত্তেজনার ইন্ধন এবং অসৌজন্যই দেখেছেন সিপিএম নেতারা। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “বিমান বসুর মিছিলে ঢিল ছুড়ে ওঁরা স্বাগত জানিয়েছিলেন! বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সভায় স্বাগত জানালেন তৃণমূল নেত্রীর ছবি দিয়ে! ভয় পেলে লোকে এ সব করে!” মিছিলে আক্রমণ এবং যাবতীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ ভরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিমানবাবু, মনোজ ভট্টাচার্য, বরুণ মুখোপাধ্যায়, প্রবীর দেব, দিলীপ সেন-সহ গোটা বাম নেতৃত্বই। মিছিলে হামলা, এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ এবং এ দিন সমাবেশ-চত্বরকে ‘তৃণমূল’ করে তোলার জন্য বাম নেতারা সকলেই আঙুল তুলেছেন কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেনের দিকে। মিছিলে আক্রমণের পরে যিনি দলে সতর্কিত হয়েছিলেন। তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনুবাবু এ দিন অবশ্য পরে অভিযোগ করেছেন, বুদ্ধ-বিমানের সভায় এসে ‘বহিরাগতে’রা তৃণমূলের ফ্লেক্স ছিড়ে, বুলেভার্ডে সৌন্দর্যায়নের স্ট্যান্ড ও বাতিস্তম্ভ ভেঙেছেন। তৃণমূলের কর্মীদের শাসানো, নিগ্রহও করা হয়েছে। সিঁথি থানায় তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.