পরীক্ষার হলে বসে পরপর তিনটি আলাদা প্রশ্নপত্রের সমাধান করতে পারতেন তিনি। আর তাঁর করা উত্তর মোবাইল ফোন মারফৎ নিমেষে ছড়িয়ে পড়ত বিভিন্ন পরীক্ষার্থীর কাছে।
তিনি, কৃষ্ণেন্দু ভাণ্ডারী, বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির স্নাতক। সিআইডি -র দাবি, কৃষ্ণেন্দু একইসঙ্গে প্রশ্ন জালিয়াতি চক্রেরও চাঁই। আদতে গোঘাটের বাসিন্দা এই যুবককে শনিবার শিয়ালদহ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি রাজ্য আবগারি দফতরের চাকরির পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। তাঁর কাছে উন্নত প্রযুক্তির ঘড়ি মোবাইল -সহ ৬টি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ মিলেছে। রবিবার ধৃতকে কৃষ্ণনগর আদালত পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত দেয়।
কৃষ্ণেন্দুর শিক্ষাগত যোগ্যতা জেনে রীতিমতো তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। অঙ্কের তুখোড় ছাত্র কৃষ্ণেন্দু জয়েন্টে ভাল ফল করেছিলেন। সেই সুবাদেই তাঁর বেসুতে ভর্তি হওয়া। বি .টেক পরীক্ষাতেও তিনি ভাল ফল করেন বলে সিআইডি সূত্রের খবর। কিন্তু তার পরেও কোনও সংস্থায় যোগ দেননি। কয়েকটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করেছিলেন। জেরায় কৃষ্ণেন্দু জানিয়েছেন, বছর দুই আগে পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের চাঁইদের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর।
সিআইডি -র দাবি, জেরায় কৃষ্ণেন্দু জানান, পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢুকতেন তিনি। তড়িঘড়ি অঙ্ক এবং ‘রিজনিং’ বিষয় সমাধান করে তা জালিয়াতি চক্রের চাঁই গৌরকৃষ্ণ বিশ্বাস ও সুব্রত বিশ্বাসের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। চাকরির পরীক্ষায় পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের আলাদা প্রশ্নপত্রের সেট দেওয়া হয়। যাতে সব সেট -ই কৃষ্ণেন্দুর হাতে পড়ে, সে জন্য একই খামে কৃষ্ণেন্দু এবং চক্রের তিন সদস্যের আবেদনপত্র জমা দেওয়া হত। ফলে, চার জনের আসন পাশাপাশি পড়ত। চার জনের কাছে আলাদা সেটের প্রশ্ন থাকত। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, “পরীক্ষা হলে কী ভাবে আসন পড়ে, কী ভাবে প্রশ্নপত্রের বণ্টন হয়সবই ওই চক্রের নখদর্পণে ছিল।”
সিআইডি জানিয়েছে, প্রথমে নিজের প্রশ্নপত্রের সমাধান করে, তার কোড নম্বর দিয়ে তা গৌরকৃষ্ণ ও সুব্রতর কাছে পাঠাতেন কৃষ্ণেন্দু। তার পরে অন্যদের প্রশ্ন সমাধান করে সেগুলির উত্তরও এসএমএসে পাঠিয়ে দিতেন। গৌরকৃষ্ণ ও সুব্রতর কাছ থেকে তা চলে যেত অন্য পরীক্ষার্থীদের কাছে। জেরায় কৃষ্ণেন্দু জানিয়েছেন, পরীক্ষা -পিছু ৩০ হাজার টাকা পেতেন তিনি। ২০১৩ সালেই এ ভাবে ১২টি পরীক্ষায় বসেছিলেন। গত ১ ডিসেম্বর রাজ্য আবগারি দফতরের চাকরির পরীক্ষার দিনে প্রথম এই জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসে। পরীক্ষা -কেন্দ্র থেকে ধরা পড়ে পাঁচ জন। তদন্তে নেমে সিআইডি বালুরঘাট থেকে দুই ব্যাঙ্ককর্মী গৌরকৃষ্ণ বিশ্বাস ও সুব্রত বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে। এরা চক্রের চাঁই। পরে গ্রেফতার করা হয় চাকরির পরীক্ষার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দুই কর্ণধার সৌমেন মাঝি ও সুখেন দাসকে। সিআইডি জানিয়েছে, এই ঘটনায় কৃষ্ণেন্দু -সহ মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডি সূত্রের খবর, জালিয়াতি চক্রের চাঁইদের মোবাইল ঘেঁটে কৃষ্ণেন্দুর নম্বর মিলেছিল। সেই নম্বরের নানা তথ্য খতিয়ে দেখে কৃষ্ণেন্দুর গতিবিধি জানতে পারেন গোয়েন্দারা। |