|
|
|
|
অরবিন্দের ধর্না আজ, নয়া চিন্তা অপহরণের ছক
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৯ জানুয়ারি |
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সামনে আগামিকাল সকালে ধর্নায় বসার হুমকি আগেই দিয়েছিলেন। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দাবি ছিল, সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনায় কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে অভিযুক্ত দিল্লি পুলিশের কর্মী-অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সেই কর্মসূচি বহাল থাকছে। কিন্তু ধর্নার আগের রাতেই ‘দিল্লি বনাম নয়াদিল্লি’ চাপানউতোরের পারদ আরও চড়ল মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি ইয়াসিন ভটকলকে ছাড়ানোর জন্য কেজরিওয়ালকে অপহরণ করা হতে পারে দিল্লি পুলিশের শীর্ষ সূত্রে আজ সন্ধেয় এই দাবি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এবং তার পরেই কেজরিওয়াল টুইটে প্রশ্ন তোলেন, “দিল্লি পুলিশ বা কেন্দ্রীয় সরকার কি আমার নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতি করছে?”
কুর্সিতে বসার পরেই কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, তিনি কোনও নিরাপত্তা নেবেন না। কিন্তু আজ দিল্লি পুলিশের একটি দল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জেড ক্যাটেগরি নিরাপত্তা নিতে অনুরোধ করে। কারণ হিসেবে ওই অপহরণের ছকের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির থেকে দিল্লি পুলিশ যে সতর্কবার্তা পেয়েছে, তা জানানো হয়। কিন্তু রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। এবং সন্ধেয় সেই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই একের পর এক ক্ষুব্ধ টুইট করতে থাকেন তিনি। কেজরিওয়াল লেখেন, “দুপুরে পুলিশ অফিসারেরা আমার সঙ্গে দেখা করে বিপদের আশঙ্কার কথা জানান। এ-ও বলেন, আমি যেন সংবাদমাধ্যমকে কিছু না বলি। এর পরে ওঁরাই গিয়ে সংবাদমাধ্যমে সব ফাঁস করে দিলেন। এ বার তো আমি আরও বেশি করে আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে গেলাম। এ বারে আমার উপরে কেউ হামলা করলে বলা হবে, এটা ভটকলের লোকেদের কাজ।”
এর পরেই আরও চাঁছাছোলা কেজরিওয়ালের টুইট “দিল্লি পুলিশ কি এতই বোকা? নাকি ওরা রাজনীতি করছে? কার নির্দেশে?” অবশ্য কারও কারও সন্দেহ, তাঁকে অপহরণের ছকের কথা বলে কেজরিওয়ালের উপর ঘুরিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে কেন্দ্র, যাতে তিনি নিরাপত্তা নেন। কারণ সত্যিই তাঁকে অপহরণের চেষ্টা হলে ভোটে তার প্রবল ফায়দা তুলবে আপ। কেজরিওয়াল অবশ্য টুইটারে আবার বলেন, কোনও নিরাপত্তা চাই না তাঁর। তিনি প্রাণের ভয় করেন না। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশকে কেজরিওয়ালের টুইট-আক্রমণ এর পরেও দীর্ঘক্ষণ জারি থাকে। তবে প্রসঙ্গ পাল্টে এসে যায় কর্তব্যে গাফিলতি। কেজরিওয়ালদের অভিযোগ মূলত তিনটি এক, মাদক এবং যৌন ব্যবসার চক্র ভাঙতে পদক্ষেপ না করা (যে ঘটনায় চার বিদেশিনিকে হেনস্থা ও পুলিশের উপরে চাপ সৃষ্টির অভিযোগে বেকায়দায় পড়েছেন দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী)। দুই, ডেনমার্কের বাসিন্দা এক মহিলার গণধর্ষণ। তিন, পণের জন্য এক বধূকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তদের ধরতে না পারা। শেষ অভিযোগটি নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন আপ সরকারের আর এক মন্ত্রী রাখি বিড়লা।
সংশ্লিষ্ট পুলিশদের সাসপেন্ড অথবা অন্তত বদলি করার দাবি নিয়ে শুক্রবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে দেখা করেন কেজরিওয়াল। একই সঙ্গে তিনি জানান, কাল সকাল ১০টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ব্যবস্থা না নিলে তিনি নর্থ ব্লকের সামনে ধর্নায় বসবেন। তা মোকাবিলায় দিল্লি পুলিশও প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত নিতে শুরু করে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ জনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ, প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়া চলছে। রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়, ওই তিনটি ঘটনায় দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট দেবেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং-ও। তার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। টুইটারে কেজরিওয়ালও জানিয়ে দেন, মহিলাদের সুরক্ষার দাবিতে তিনি অন্য বিধায়কদের নিয়ে ধর্নায় বসছেন। তবে এলাকায় প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রস্তুতির কারণেই সমর্থকদের ধর্নার জায়গায় না আসার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
তবে কেজরিওয়াল যতই ধর্নায় বসুন, সোমনাথ ভারতীর কাণ্ডে যথেষ্ট বেকায়দায় আপ। বিদেশিনি হেনস্থায় অভিযুক্তদের ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের আজ নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির একটি আদালত। টিভি চ্যানেলে সেই রাতের ফুটেজে আগেই দেখা গিয়েছে, ওই মহিলাদের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে বলে পুলিশ অফিসারদের শাসাচ্ছেন সোমনাথ ভারতী। তাঁর অভিযোগ, ওই বিদেশিনিরা মাদক ব্যবসা ও যৌন ব্যবসায় যুক্ত। ঘটনার পরে ওই বিদেশিনিরাও পুলিশে অভিযোগ করে বলেন, একটি দলের কর্মীরা জোর করে তাদের বাড়ি ঢুকে তাঁদের যৌন নির্যাতন করেছে।
এই ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক স্তরেও সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রের। আজ তাই দিল্লিতে নিযুক্ত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠকে করে বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (পশ্চিম) দীনকর খুল্লার জানান, কোনও বিদেশিকে হেনস্থা করার অভিপ্রায় ভারতের নেই। এই ঘটনাটি ব্যতিক্রম মাত্র। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে সরকার। |
পুরনো খবর: বুঝছি সরকার চালানো কত শক্ত, কবুল অরবিন্দের |
|
|
|
|
|