|
|
|
|
সত্যিটা দ্রুত বের করুন, শিন্দেকে অনুনয় শশীর
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৯ জানুয়ারি |
টুইট করার অভ্যাস নিয়ে ঝামেলায় আগেও কম পড়েননি। সুনন্দা পুষ্করকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। কিন্তু টুইটার এবং সুনন্দা যে একযোগে তাঁর জীবনে এত বড় শনি হয়ে দেখা দেবে, সেটা সম্ভবত ক’দিন আগেও ভাবেননি শশী তারুর। স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে শোক-দুঃখ-অস্বস্তি ছাপিয়ে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির পাঁক থেকে নিজেকে উদ্ধার করাটাই সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠছে মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর।
পাক সাংবাদিক মেহর তরার এবং শশীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে টুইট-বোমা ফাটানোর দু’দিনের মধ্যেই রাজধানীর হোটেলে মিলেছে সুনন্দার দেহ। সংবাদমাধ্যম যথারীতি উপচে পড়ছে শশী-সুনন্দার নানাবিধ রসালো গল্পে। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে চিঠি লিখে শশী অনুনয় করেছেন, তদন্তের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য যথাবিধি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কেন? তারুর লিখেছেন, “মিডিয়া মাত্রাছাড়া ভাবে যে সব গল্প ফাঁদছে, পড়ে শিউরে উঠছি। দয়া করে তদন্তকারীদের দ্রুত কাজ এগোতে বলুন। যাতে সত্যিটা সামনে আসে।”
তারুর নিজে আজ সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে ৫০ মিনিট ধরে নিজের বয়ান দিয়েছেন। সূত্রের খবর, সেখানেও তাঁকে মেহরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। একই ভাবে মেহরও প্রাণপণ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, গোটা ঘটনায় তাঁর কোনও হাত নেই। শনিবার রাতে পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলে তিনি বলেছেন, সবটাই একটা ষড়যন্ত্র। তিনি সেই ষড়যন্ত্রের শিকার মাত্র। কারা, কেন, কী ষড়যন্ত্র করল? মেহর তা স্পষ্ট করেননি। তাঁর মোদ্দা কথা তিনটে এক, শশীর সঙ্গে তাঁর আলাদা কোনও রোম্যান্টিক সম্পর্ক ছিল না। দুই, সুনন্দা গোড়া থেকেই ব্যাপারটাকে নিয়ে খামোখা জলঘোলা করে আসছিলেন। তিন, শশীর সঙ্গে তাঁর ভাল করে আলাপ হওয়ার আগে থেকেই শশী-সুনন্দার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করেছিল। এর মধ্যে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। |
|
তরার দাবি করেছেন, বেশ কিছু দিন আগে তিনি ওমর আবদুল্লার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তখনই সুনন্দা টুইটারে তাঁকে আক্রমণ করতে শুরু করেছিলেন। তার পর একটি লেখায় শশী সম্পর্কে মেহর ভাল ভাল কথা লেখার পর সুনন্দা আরও রেগে যান। মেহরের দাবি, শশীকে মেহরের সঙ্গে কথা বলতে বারণ করে দেন সুনন্দা। টুইটারে মেহর-কে ‘আনফলো’ করার জন্যও চাপ দিতে থাকেন। “আমি জানি না, শশীকে ফোন বা ই-মেল করা নিয়ে ওর (সুনন্দার) কী সমস্যা ছিল! শশীর সঙ্গে আমার যে ধরনের কথা হত, সেটা পৃথিবীর যে কারও সঙ্গেই বলা যায়!” রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুরে মেহর বলেছেন, “গুগ্ল করে দেখুন! মে-জুন মাস থেকেই ওদের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছিল। তখন আমি ওদের জীবনে ছিলাম না।” ম্যারেজ ইজ অ্যাবাউট টু ব্রেক, ট্রাবল ইন প্যারাডাইস, ফেয়ারিটেল ইজ ওভার শশী-সুনন্দাকে ঘিরে এই সব মুখরোচক শিরোনাম তৈরি হওয়ার কারণ অন্য। তিনি কোনও মতেই নন, এমনটাই মেহরের দাবি। তিনি জানিয়েছেন, গত বছর এপ্রিল আর জুন মাসে দু’বার মাত্র শশীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। “এক জন পাকিস্তানি মহিলা এখানে বসে বিয়েটা নষ্ট করে দিতে পারে না।”
সমস্যার মূলে মেহর থাকুন বা না-ই থাকুন, শশী-সুনন্দার সম্পর্ক যে যথেষ্ট গণ্ডগোলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তার সাক্ষ্য অবশ্য আরও মিলেছে। বৃহস্পতিবার রাতেও দু’জনের কথা কাটাকাটি হয়েছিল বলে হোটেল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে দিল্লি পুলিশ এবং এইমস সূত্রে প্রাথমিক অনুমান, খালি পেটে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনই হয়তো সুনন্দার মৃত্যুর কারণ। এমন অপ্রত্যাশিত আঘাতে তিনি যে যথেষ্টই ভেঙে পড়েছেন, সে কথা গোপন করেননি শশী। শিন্দেকে জানিয়েছেন, তদন্তের জন্য সব রকম সহযোগিতা প্রথম পাতার পর করতে তিনি প্রস্তুত। তাঁর কথায়, “ঘনিষ্টদের সঙ্গে যখন শোক ভাগ করে নেওয়ার কথা আমার, সেই সময়েই আমাদের মর্যাদাহানি করা হচ্ছে। সত্য সামনে এলে সেটা অন্তত বন্ধ হবে।”
কিন্তু ঘটনা হল, সুনন্দার সঙ্গে সম্পর্কের শুরু থেকেই শশীকে একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। ৫৭ বছরের শশী এবং ৫২ বছরের সুনন্দা, দু’জনেরই এটা তৃতীয় বিয়ে। কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের মেয়ে সুনন্দার প্রথম বিয়েটা টেঁকেনি। দ্বিতীয় বিয়ে কেরলের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। দু’জনের একটি পুত্রসন্তানও হয়। ১৯৯৭ সালে এই স্বামী পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। সুনন্দা তার পর কানাডা চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এক ব্যাঙ্কারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে শোনা যায়। কয়েক বছর পর সুনন্দা দুবাই আসেন এবং একটি রিয়েল এস্টেট সংস্থায় কাজ করতেও শুরু করেন। শশীর সঙ্গে তাঁকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা যেতে শুরু করে ২০০৯-এর শেষ থেকে।
সুনন্দার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার আগে শশীর রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক বলতে ছিল, বেফাঁস টুইট করার অভ্যাস। এআইসিসিতে সনিয়া কী বলেছেন, টুইট করে দিয়েছিলেন। সরকার ব্যয়সঙ্কোচের ডাক দেওয়ার পর বলে ফেলেছিলেন, এ বার থেকে তো (বিমানের) ‘ক্যাটল ক্লাসে’ যাতায়াত করার পালা! কিন্তু যে ঘটনার জেরে শশীকে প্রথম বার মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়, সেটা আইপিএল-বিতর্ক। ২০১০-এর এপ্রিলে ৭০ কোটি টাকায় কোচি টাস্কার্স দলটি কেনে রঁদেভু স্পোর্টস ওয়র্ল্ড নামে একটি সংস্থা। এই বেচাকেনার ঠিক ১৮ দিন আগে ওই সংস্থার মাথায় বসেছিলেন সুনন্দা। শশীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বাজার তখন গরম। অভিযোগ ওঠে, সুনন্দাকে শিখণ্ডী করে শশীই কলকাঠি নাড়ছেন। শশী মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। তার পরই অগস্ট মাসে সুনন্দাকে বিয়ে করেন তিনি। অভিজাত পার্টি মানেই মধ্যমণি তখন শশী-সুনন্দা। তাঁদের প্রকাশ্য মাখোমাখো প্রেম দ্রুত গালগল্পের বিষয় হয়ে ওঠে। নরেন্দ্র মোদী টুইটে ‘৫০ কোটির গার্লফ্রেন্ড’ বলে সুনন্দাকে ব্যঙ্গ করলে পাল্টা জবাব ভালবাসার জয়গানে ভরিয়ে দেন শশী।
আর সুনন্দা? রগচটা মেজাজের জন্য বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। কখনও বিমানবন্দরে কাউকে চড় মারছেন, কখনও নামী সাংবাদিকের মুখে মদ ছুড়ে দিচ্ছেন। ক’দিন আগেও দুবাইয়ে একটি ডিনার পার্টিতে সুনন্দা ফের এক সাংবাদিকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে শোনা গিয়েছিল। তবে মেহর তরারকে ঘিরে সুনন্দার টুইট-যুদ্ধের কাছে সে সবই ফিকে। শশীর অ্যাকাউন্ট থেকে একের পর এক টুইট বর্ষিত হচ্ছিল মেহরের প্রতি। সবই প্রেম-ভালবাসার কথা। শশী প্রথমে বলেছিলেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাকড’ হয়েছে। তার পরই সুনন্দা জানান, হ্যাকার নয়। তিনিই স্বামীর অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটগুলো করেছেন। মেহরের স্বরূপ প্রকাশ করাই তাঁর উদ্দেশ্য।
সুনন্দার অভিযোগ ছিল, মেহর এক জন আইএসআই এজেন্ট। ভোটের আগে শশীকে ফাঁদে ফেলতে চাইছেন। চুপ করে থাকেননি মেহরও। সুনন্দার ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে মস্করা করে বলেছিলেন, নিজের বিয়েকে সম্মান করতে নিজেই জানেন না সুনন্দা। তাই এ সব ‘নোংরা’ কথা বলছেন।
ভাবমূর্তি বাঁচাতে ফের এক বার টুইটারেরই সাহায্য নিয়েছিলেন শশী। বৃহস্পতিবার টুইট করেই জানিয়েছিলেন, ‘‘আমরা সুখী দম্পতি।” শুক্রবার সুনন্দার মৃত্যু সেই দাম্পত্য শেষ করে দিল। |
|
|
|
|
|