|
|
|
|
মমতাকে পেতে আবার বার্তা দিলেন মোদী
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৯ জানুয়ারি |
সরাসরি নয়। তবে পুরনো সঙ্গী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন পেতে ফের পরোক্ষে তাঁকে বার্তা দিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী।
দিল্লিতে দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠকের শেষ দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুললেন মোদী আর তা করতে গিয়ে টেনে আনলেন দেশের পূর্বপ্রান্তের কথা। তাঁর ব্যাখ্যা, দেশের পশ্চিম প্রান্তে উন্নয়ন হলেও পূর্ব এখনও উন্নয়নের জন্য আকুল। প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি যে সবার আগে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির দিকেই বেশি নজর দিতে চান, তা-ও জানিয়েছেন মোদী। এই প্রসঙ্গে ইউপিএ তথা কংগ্রেসকে বিঁধতেও ছাড়েননি তিনি। |
|
জাতীয় পরিষদের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী। রবিবার দিল্লিতে পিটিআইয়ের তোলা ছবি। |
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, মোদী এ দিন তাঁর বক্তব্যে যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির নাম নিয়েছেন, তার পিছনে সুনির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে। এই সব রাজ্যেই বিজেপি তুলনামূলক ভাবে দুর্বল। বিজেপি যতই ২৭২টিরও বেশি আসন জয়ের কথা বলুক, তা যে বাস্তবে যথেষ্ট কঠিন, তা মেনে নিয়েছেন দলের অনেক নেতা। এই পরিস্থিতিতে দু’শো বা তার কিছু বেশি আসন পেলেও কেন্দ্রে সরকার গড়তে গেলে যে নতুন শরিকদের পাশে টানা প্রয়োজন, তা বিলক্ষণ মানেন ওই নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, সে কারণেই উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে মমতা, নবীন পট্টনায়কের মতো এনডিএ-র পুরনো শরিকদের বার্তা দিয়ে রাখলেন মোদী।
এই মুহূর্তে নানা বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে মমতার নিত্য দিন যে বিবাদ বাধছে, তা-ও বিলক্ষণ জানা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মোদীর অভিযোগ, গত এক দশকে আঞ্চলিক দলগুলির প্রত্যাশা পূরণকে বোঝা হিসেবে দেখেছেন মনমোহন সিংহ। কিন্তু তিনি নিজে যে হেতু একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাই অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের সমস্যাটা বোঝেন।
নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশে বাহরাইচে এক সভাতেও মমতার প্রশংসায় মুখর হয়েছিলেন মোদী। ওই সভায় তৃণমূল নেত্রীকে ‘মমতা দিদি’ বলে সম্বোধন করে মোদী বলেছিলেন, ‘মমতা দিদি নিজের রাজ্যের জন্য লড়াই করেন, আর্থিক প্যাকেজের জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করে রাজ্যের সাধারণ মানুষের উন্নয়নের চেষ্টা করেন। অথচ এই রাজ্যের এসপি, বিএসপি নেতারা সিবিআইয়ের মামলার জন্য দিল্লির সাহায্য চেয়ে দরবার করেন’!
গত বছরও কলকাতায় গিয়ে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে দুষে পরোক্ষে মমতার প্রশংসাই করেছিলেন মোদী। বলেছিলেন, “গুজরাতে কংগ্রেসের বন্ধুরা যে গর্ত করে গিয়েছেন, তার জন্য আমাদের দশ বছর গিয়েছে। বাংলায় তো ৩৪ বছর ধরে গর্ত করা হয়েছে! মানুষ যাঁকেই এই দায়িত্ব দেবে, তাঁর না জানি কত বছর লাগবে। এখন যা হচ্ছে, আশা করি গর্ত বোজানোর জন্যই হচ্ছে।”
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধারাবাহিক ভাবে মমতাকে কাছে টানার বার্তা দিলেও রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তাতেই যাওয়ার কথা বলছেন। দিল্লিতে জাতীয় পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “মোদীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তৃণমূল ও বিজেপির কাছাকাছি আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই।” একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “সামনে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে শক্তিশালী করে কেন্দ্রে সরকার গড়তে সাহায্য করাই আমাদের লক্ষ্য।”
মমতাকে নিয়ে বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে থাকার কথা দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের। ব্রিগেডের সেই সভায় মোদী কী অবস্থান নেন, সেটাই এখন দেখার। |
আশ্বাসের রামধনু |
• চতুষ্কোণ বুলেট ট্রেন
• সব রাজ্যে আইআইটি, আইআইএম, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল
• একশো নয়া শহর, স্মার্ট সিটি, হেল্থ সিটি, টুইন সিটি
• কন্যা বাঁচাও, কন্যা শিক্ষা, দেশ তৈরিতে সামিল গৃহবধূ, মহিলাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদল
• মূল্যবৃদ্ধি রুখতে পণ্য সরবরাহে প্রযুক্তি, দাম ধরে রাখতে নয়া তহবিল
• রোজগার বাড়াতে উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশে বেচা, বিশ্ব বাজার ধরা
• কালোবাজারি রুখতে সাজা, বিশেষ আদালত, কালো টাকা উদ্ধার করে সামাজিক খাতে ব্যয়
• গ্যাস গ্রিড চালু করে সস্তায় গ্যাস
• কৃষি পরিকাঠামোর সঙ্গে নদীর সংযুক্তি, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো
• পরিবেশ রক্ষা |
|
আডবাণীর সতর্কবাণী |
নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা। মোদী ও রাজনাথ সিংহ জুটিরও তারিফ। তবুও সতর্কবার্তা শোনালেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী।
মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী ঘোষণা করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা। আজ দলের জাতীয় পরিষদ বৈঠকের শেষ দিনে দু’জনেই মোদীর তারিফ করলেন। যে ভাবে মোদী আক্রমণাত্মক ভাবে সভা করছেন, তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন আডবাণী। কংগ্রেসের লাগাতার অপপ্রচার সত্ত্বেও যে ভাবে মোদী সংযমী থেকেছেন, তারও তারিফ করলেন সুষমা। কিন্তু একই সঙ্গে কর্মীদের উদ্দেশে আডবাণী সতর্ক করে বললেন, “এই উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস আমি আগে কখনও দেখিনি। কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাস যেন না হয়। জিতব ধরে নিয়ে পরিশ্রম করা বন্ধ যেন না হয়।” এর পরেই কংগ্রেস যে ভাবে সংখ্যালঘুদের মোদীর ভয় দেখাচ্ছে, তারও সমালোচনা করলেন। আডবাণীর মতে, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একাত্ম মানবতাবাদে জাতি-ধর্ম-ভাষার ভেদ করেনি।” তাঁর কথায়, “প্রশাসন, উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘুর বিভাজন অপ্রাসঙ্গিক। কংগ্রেস নিছক ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে। আমরা সকলের উন্নয়নের কথা বলছি।” |
|
|
|
|
|