থানার বন্ধ আলমারি থেকে লোপাট হয়ে গিয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। যে থানায় এই ঘটনা, সেই ভক্তিনগর থানার ফুলবাড়ি এলাকায় সোমবার উদ্বোধন হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গের শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’র। তার ঠিক আগে এই টাকা লোপাটের বিষয়টি জানাজানি হতে শিলিগুড়ি তো বটেই, রাজ্য পুলিশ মহলেও আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি জি এম পি রেড্ডি ঘটনায় যুক্তদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে টাকা লোপাটের বিষয়টি ধরা পড়ে। ডিজি-র নির্দেশের পরে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি চুরির মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু থানার নগদ টাকা দেখভালের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, সেই পুলিশকর্মীদের কারও বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাতের মামলা দায়ের করা হয়নি কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ মহলেই। এমনকী, থানার যে অফিসার-কর্মীদের হেফাজত থেকে টাকা লোপাট হয়েছে, তাঁদের হাতেই তদন্তের ভার যাওয়ায়, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নেও নানা কানাঘুষো চলছে।
যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেছেন, “থানা থেকে ১০ লক্ষ টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়তেই মামলা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের জেরাও করা হচ্ছে। সময় হলেই সরকারি টাকা আত্মসাতের ধারাও প্রয়োগ করা হবে।”
পুলিশ-বিধি অনুযায়ী, নানা তল্লাশি অভিযানে নেমে পুলিশ যে টাকা বাজেয়াপ্ত করে, তা জমা রাখার জন্য এক জন অফিসারকে দায়িত্ব দিতে হয়। প্রতিটি থানার এক অফিসারকে ‘ক্যাশিয়ার’-এর দায়িত্ব দেন অফিসার-ইন-চার্জ তথা ওসি। ভক্তিনগর থানাতেও তেমন এক অফিসার দীর্ঘদিন ওই দায়িত্ব রয়েছেন। টাকা যেখানে থাকে, সেই আলমারির চাবিও তাঁর কাছেই থাকে। গত সোমবার ভক্তিনগর থানার ‘ক্যাশিয়ার’ দাবি করেন, তিনি আলমারির চাবিটি টেবিলে রেখে আদালতে গিয়েছিলেন। ফেরার পরে চাবিটি পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি ওসি-কে জানান। বহু খুঁজেও চাবি না পেয়ে আলমারি ভাঙা হয়। তখন আলমারিতে কিছু টাকা মেলে। কিন্তু নথি মিলিয়ে দেখা যায়, ১০ লক্ষ টাকা নেই। উপরন্তু, সারদা-কাণ্ডের সময়ে তল্লাশিতে যে বিপুল অর্থ মিলেছিল, সেই টাকারও হিসেব মিলছে না।
নানা সময়ে যাঁরা দীর্ঘদিন থানার দায়িত্ব সামলেছেন, সেই অফিসারদের মতে, কিছু পুলিশকর্মী বড় মাপের গাফিলতি না করলে বা সরাসরি টাকা লোপাটের ঘটনায় জড়িত না থাকলে, এমন হওয়া কার্যত অসম্ভব। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে থানায় থাকা টাকার হিসেব মিলছে না। পরে থানারই মালখানা থেকে ইঁদুরে কাটা নোটের বান্ডিল উদ্ধার হয়েছে। আবার কিছু পুলিশ-কর্তার বক্তব্য, বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা স্বল্পমেয়াদে জমা করে সুদ আদায়ের ঘটনাও অতীতে ঘটেছে। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সন্দিহান তাঁরা। আবার পুলিশকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, থানায় বাজেয়াপ্ত করা টাকার পরিমাণ বেশি হলে, আদালতের অনুমতি নিয়ে তা ট্রেজারিতে জমা করা বাধ্যতামূলক।
ভক্তিনগর থানায় কেন তা করা হয়নি? ওসি তীর্থসারথি নাথ এবং থানার ‘ক্যাশিয়ার’— দু’জনেরই বক্তব্য, “বিষয়টি নিয়ে যা বলার, পুলিশ কমিশনারই বলবেন।” |