সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং বরুণ বিশ্বাস খুনে মূল অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীর মৃত্যু হল সেপ্টিসেমিয়ায়। গত ৮ জানুয়ারি আলিপুর জেল থেকে তাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ সেপ্টিসেমিয়ায় মারা যায় বছর পঞ্চাশের সুশান্ত।
২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত গাইঘাটার সুটিয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় নাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুশান্তর তোলাবাজি দিয়ে অপরাধে হাতেখড়ি। তার পরে তার নেতৃত্বেই ঘটে গণধর্ষণ কাণ্ড। নাগবাড়ি এলাকায় সে একটি ঘর তৈরি করেছিল। গড়ে তুলেছিল মোটরবাইক-বাহিনী। ভয় দেখিয়ে মহিলাদের তুলে এনে চালাত অত্যাচার। তার ভয়ে সেই সময়ে পরিবারের মেয়েদের সম্মান রাখতে সুটিয়ার অনেকেই জলের দরে বাড়িঘর বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান।
ধীরে ধীরে সুশান্তর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৈরি হয় জনমত। দলবল-সহ সুশান্তকে গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দা ননীগোপাল পোদ্দার, বরুণ বিশ্বাসদের নেতৃত্বে ২০০২ সালে গড়ে ওঠে ‘সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চ’। ওই বছরই পুলিশ সুশান্তকে গ্রেফতার করে। চারটি গণধর্ষণের মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আরও কয়েকটি মামলা তার বিরুদ্ধে চলছিল। গণধর্ষণ মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। ২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশনের সামনে তিনি খুন হন। তদন্তে নেমে সিআইডি জানায়, বরুণ খুনের মূল পরিকল্পনা সুশান্তরই। দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বসেই সে বরুণকে খুনের ছক কষে। ওই বছরেই সুশান্তকে আলিপুর জেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পর থেকেই সে হৃদরোগে ভুগছিল। গত অক্টোবর মাসে এসএসকেএম হাসপাতালে তার বাইপাস সার্জারি হয়। তবে, সেপ্টিসেমিয়া কী ভাবে হয়েছিল তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি। আলিপুর জেলের অনেকে মনে করছেন, বাইপাস সার্জারির সময় পা থেকে শিরা কাটা হয়েছিল। সেখান থেকে কোনও সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সুশান্ত বিবাহিত। তার দুই মেয়ে। কিন্তু জেলে যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এ দিন সুশান্তর মৃত্যুর খবর ছড়াতেই সুটিয়া এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, “মৃত্যু সব সময়েই দুঃখের। তবে, জেলে থেকে ও যদি নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে নিত, তা হলে ভাল লাগত।” |