দেশি-বিদেশি পর্যটক ছাড়াও এ বার পড়ুয়াদের টানতে উদ্যোগী হল রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম। নিগম সূত্রের খবর, কালিম্পঙের হিলটপ অতিথি নিবাস চত্বরে কেবল ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘ডরমেটরি’ ব্যবস্থা দিয়ে রাজ্যে প্রথমবার ওই ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। রাজ্য পর্যটন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্মদেব দাশগুপ্ত বলেন, “পর্যটক মানেই পেশাদার বা চাকুরিজীবী হতে হবে এমন কোনও কথা নেই। ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ সারা বছরই পড়াশুনো বা নিছক ঘোরার জন্য বিভিন্ন এলাকায় যান। সেই দিকটি মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা হচ্ছে।” পরে রাজ্যের অন্যত্রও এই ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হবে নিগম। এ মাসেই আবাসটির উদ্বোধনের আশ্বাসও দিয়েছেন নিগম কর্তারা।
নিগম কর্তারা জানাচ্ছেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষামূলক ভ্রমণ ছাড়াও অনেক ছাত্রছাত্রী বেড়াতে ভালবাসেন। কিন্তু তাঁদের সেই ইচ্ছার অন্তরায় হয় হোটেল-লজের মোটা অঙ্কের ভাড়া। সেই অসুবিধা দূর করতে এই ডরমেটরির ভাড়ার অঙ্কও হবে কম। নিগমের অফিসারেরা জানান, অনেক পড়ুয়াই পকেটমানির টাকা জমিয়ে ঘুরতে আসেন। তাই দিন পিছু ৪০০-৫০০ টাকায় যাতে তাঁরা কালিম্পঙের মতো শৈলশহরে থাকতে পারেন তা মাথায় রেখেই ভাড়ার তালিকা করা হচ্ছে। স্কুল কলেজে থেকে বুকিং ছাড়াও দল বেঁধে ছাত্রছাত্রীরাও এখানে এসে থাকতে পারবেন। স্কুল বা কলেজের পরিচয়পত্র দেখে ভাড়া দেওয়া হবে। ফাঁকা থাকলে সাধারণ পর্যটকদেরও তা ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। আগামী দিনে দার্জিলিং, কোচবিহার, ডুয়ার্স, দিঘা, পুরী বা সুন্দরবনের মত এলাকায় এই ব্যবস্থা করা যায় কি না তা দেখার কাজও শুরু হয়েছে। ভীষ্মদেববাবুর কথায়, “কালিম্পঙে সাধারণ পর্যটকদের জন্য অতিথি নিবাস রয়েছে। তবে ছাত্রছাত্রীদের জন্য কম বাজেটের থাকার ব্যবস্থা ছিল না। সেই দিকটিই মাথায় রেখেই নতুন অতিথি আবাস তৈরি হচ্ছে।এই মাসেই সেটি উদ্বোধন করার চেষ্টা চলছে।”
নিগম সূত্রের খবর, প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে কালিম্পং হিলটপ অতিথি নিবাস চত্বরের একটি পুরনো শেডকেই ঘরের আকার দেওয়া হচ্ছে। আপাতত ৩২ শয্যার ডরমেটরি চালু হবে। সঙ্গেই থাকবে শৌচাগার, খাবার জায়গা। কালিম্পং হিলটপের মতো মনোরম এলাকায় সরকারি উদ্যোগে নবনির্মিত এই আবাস গোটা রাজ্যের তো বটেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে নিগম কর্তাদের আশা।
কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ভাড়া থেকে আয়ে কি কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ চালানো সম্ভব? উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিগমের একাংশ অফিসার জানাচ্ছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে কেবলমাত্র লাভের কথা মাথায় রেখেই এগোনো হবে না। ছাত্রদের পর্যটনের আর্থ-সামাজিক দায়িত্বের বিষয়টিও দফতরের নজরে রয়েছে। কালিম্পঙের মতো অন্যত্রও নিগমের অতিথি নিবাস চত্বরেই এই ধরনের প্রকল্প হবে। কর্তাদের দাবি, সেক্ষেত্রে খরচের চাপ অতটা পড়বে না।
পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কালিম্পঙে প্রতিবছর রাজ্যের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা ঘুরতে আসেন। শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্যও কালিম্পং চেনা গন্তব্য। অনেকেই ট্রেকিং, তিস্তা নদীতে র্যাফটিংয়ের জন্য আসেন। কিছুদিন ধরে শুরু হয়েছে প্যারাগ্লাইডিং, মাউন্টেন বাইকিংয়ের মতো নানা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমও। এ ছাড়া অর্কিড ক্যাকটাস, কমলালেবু, স্ট্রবেরি-সহ রকমারি ফুলের জন্য কালিম্পং বিখ্যাত। এ ছাড়া অনেক পর্যটকই কালিম্পংকে কেন্দ্র করেই লাভা, লোলেগাঁও, রেশি, আলগাড়া বা পেদং ঘোরেন।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল বলেন, “প্রতি মরসুমেই সাধারণ পর্যটকদের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের বুকিংয়ের চাপ থাকে। সংখ্যাটা এখন কম হলেও প্রতি বছরই তা বাড়ছে। এই বিষয়টা মাথায় রেখে নিগমের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে পাহাড়ের পাশাপাশি সমুদ্র এবং ডুয়ার্সেও এই ধরণের ব্যবস্থা থাকলে খুব ভাল হবে।” ভীষ্মদেববাবুও জানান, ধাপে ধাপে উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গেও কম খরচে ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। |