বঞ্চনার নালিশ ভিত্তিহীন, মমতাকে চিঠি জয়রামের

১৮ জানুয়ারি
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ শুনে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, “নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে সরকার।” কিন্তু সেখানেই থেমে থাকলেন না কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। বরং রাজ্যের অভিযোগ যে ‘ভিত্তিহীন’, তা তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজ চিঠি পাঠালেন তিনি। সেই সঙ্গে কার্যত এই প্রশ্নও তুললেন যে, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে নানা পঞ্চায়েতে ৭৩৮ কোটি টাকা পড়ে থাকলেও কী ভাবে বঞ্চনার অভিযোগ তুলছে রাজ্য!
রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এই নেতা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, “গত দু’বছরে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রের থেকে অভূতপূর্ব সাহায্য পেয়েছে। তা সে একশো দিনের কাজ প্রকল্প হোক বা গ্রাম সড়ক যোজনা কি গ্রামীণ জীবিকা প্রকল্প। তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” তাঁর সাফ কথা কোনও রাজ্যকেই প্রকল্পের জন্য অর্থ জোগাতে সমস্যা নেই, যদি সেই রাজ্য প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত শর্ত পালন করে। এবং মুখ্যমন্ত্রীও নিশ্চয়ই মানবেন যে, এমনি এমনি অর্থ জোগানো যায় না। তা প্রকল্প রূপায়ণের সাফল্যের ওপর কিছুটা হলেও নির্ভরশীল।
প্রসঙ্গত, গত পরশু নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রতবাবু বলেছিলেন, একশো দিনের প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের কাছে ১২০০ কোটি টাকা চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্র মাত্র একশো কোটি টাকা ধরিয়েছে। তার ফলে রাজ্যে ওই প্রকল্প রূপায়ণের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও কাজ থমকে রয়েছে। শ্রমিকদের মজুরিও দেওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রের এই আচরণকে বিমাতৃসুলভ বলে বর্ণনা করেন সুব্রতবাবু। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, গ্রাম সড়ক প্রকল্পের জন্য এখনও এক টাকাও দেয়নি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।
কিন্তু জয়রাম রমেশই বা ছাড়বেন কেন? রাজ্যের কোনও প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলেই তিনি পরক্ষণে সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। কোনও অসুবিধে বা অভাব থাকলে জানতে চান। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজ্যের ত্রুটি হলে কথা শোনাতেও ছাড়েন না। বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ যাবৎ জয়রাম যা চিঠি পাঠিয়েছেন, তা একত্র করলে একটি পত্রাবলিও হয়ে যেতে পারে।
তবে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয়রাম যে চিঠি লিখেছেন, তাতে আদ্যন্ত ক্ষোভেরই সুর। তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে এমএনআরইজিএ (একশো দিনের কাজ) প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র পর্যাপ্ত অর্থ জোগাচ্ছে না অভিযোগ তুলে আপনি শুনলাম দুই বর্ষীয়ান মন্ত্রী অমিত মিত্র ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে বলেছেন। এতে আমি খুবই আহত হয়েছি। কিন্তু এই প্রসঙ্গে গত ১৭ ডিসেম্বর আপনাকে লেখা আমার চিঠির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এবং ওই চিঠির একটি প্রতিলিপি আপনাকে পাঠিয়েও দিচ্ছি।”
গত মাসে পাঠানো ওই চিঠিতে জয়রাম অভিযোগ করেছিলেন ১০০ দিনের প্রকল্প বাবদ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা রাজ্যের কাছে পড়ে রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সেই টাকা খরচ করতে পারেনি। আর আজ পাঠানো চিঠিতে জয়রাম বলেন, এটা ঠিকই যে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজ্য সরকারের তরফে চিঠি দিয়ে আরও কিছু বরাদ্দ অনুমোদনের আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র সেই অনুরোধ রক্ষা করতে পারেনি কারণ, এ ব্যাপারে শর্ত অনেকটা শিথিল করা সত্ত্বেও তা পূরণ করতে পারেনি রাজ্য সরকার।
ওই সব শর্তের কথা চিঠিতে উল্লেখ করে জয়রামের বক্তব্য, গত অর্থবর্ষের হিসেব-নিকেশ এখনও জমা দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। দ্বিতীয়ত, ৫২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে এখনও ৭৩৮ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ প্রকল্প রূপায়ণের হালও ভাল নয়।
জয়রামের চিঠির প্রসঙ্গে শনিবার সুব্রতবাবু বলেন, “জয়রাম নিজেই এ নিয়ে রাজনীতি করছেন। ২৬০০ কোটি টাকা আমরা পেয়েছি। তার ৮০ শতাংশ খরচ করার পরেই আবার টাকা চেয়েছি। খরচের হিসেবও দেওয়া হয়েছে। সে সব দেখেই তো উনি ১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছেন। সুতরাং উনি যা বলছেন, তা যুক্তিতে টেঁকে না।” সুব্রতবাবুর বক্তব্য, অর্থ মন্ত্রকই পঞ্চায়েত মন্ত্রকের ১৪ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। তাই রাজ্যগুলিকে টাকা দিতে পারছেন না জয়রাম। ২২ তারিখ দিল্লি এসে এ ব্যাপারে তিনি জয়রামের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান সুব্রতবাবু।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, গত দু’বছরে পশ্চিমবঙ্গকে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজ্য প্রকৃতপক্ষে কতটা এগিয়েছে, প্রকল্পওয়াড়ি কত টাকা রাজ্যের কাছে পড়ে রয়েছে সে ব্যাপারে একটি সবিস্তার রিপোর্ট প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন জয়রাম। লোকসভা ভোটের আগে সম্ভবত সেই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানোর পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদেরও ঘরোয়া ভাবে পাঠাবেন তিনি, যাতে অমিতবাবু-সুব্রতবাবুদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে পাল্টা আক্রমণ শানানো যায়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.