কড়া চিঠি রমেশের, পিছনে কি রাজনীতি
১৭ ডিসেম্বর
বার গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে চিঠি গেল কলকাতায়। জয়রাম রমেশ এই চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানালেন, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে রাজ্যের অগ্রগতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। বরং এতটাই খারাপ যে, একশো দিনের মধ্যে এ বছর এখন পর্যন্ত রাজ্যের মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছেন মাত্র ১৮ দিন। এই কথা বলার পাশাপাশি তিনি আরও একশো কোটি টাকা বরাদ্দের কথাও জানিয়েছেন। তবে সেই টাকা খরচ করার ক্ষেত্রে জুড়ে দিয়েছেন পাঁচ দফা শর্তও। এর আগেও একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। কখনও নরমে, কখনও গরমে। তবে মাত্র কয়েক মাস আগে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে তিনি কিন্তু সন্তোষজনক কথাই বলেছিলেন। বলেছিলেন, “ওঁরা সত্যিই চেষ্টা করছেন।” সেই জয়রামের এ বারের চিঠির সুর কিন্তু বেশ কড়া। রাজ্যে একশো দিনের কাজ প্রকল্পটির অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, মানুষ গড়ে যে কাজ পেয়েছেন, তা অস্বাভাবিক কম। সে জন্যই বিভিন্ন পঞ্চায়েতের হাতে মোট ৫৮৪ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে সতর্ক করার পরেও তিনি কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের (যারা মোটামুটি প্রকল্প রূপায়ণ করেছে) কথা ভেবে অন্তর্বর্তিকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একশো কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা জানিয়েছেন। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন শর্তগুলিও।
প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ কেন একশো দিনের কাজ নিয়ে কড়া জয়রাম? এর নেপথ্যে কি রাজনীতি, নাকি কেন্দ্রের আর্থিক সঙ্কট?
আর্থিক সঙ্কট যে রয়েছে, সে কথা জয়রামের মন্ত্রক সূত্রেই জানা গিয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের খরচের বহর কমাতে গিয়ে বেশ কিছু সামাজিক প্রকল্পে কোপ দিতে চেয়েছে পি চিদম্বরমের অর্থ মন্ত্রক। বিষয়টি নিয়ে জয়রামের মন্ত্রকের সঙ্গে তীব্র বিতণ্ডা হয়েছে অর্থ মন্ত্রকের। তার পরে আজ এই চিঠি। আর্থিক সঙ্কটের কথা কার্যত মেনে নিয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, সরকারের আর্থিক ঘাটতি কমানোর জন্য ইদানীং খুবই কড়াকড়ি হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াটি তারই অঙ্গ বলা যেতে পারে। জয়রামের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও এই প্রসঙ্গটি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “শোনা যাচ্ছে, চিদম্বরম একশো দিনের প্রকল্পের টাকা জোগাতে পারছেন না। তাই এখন রাজ্যের ঘাড়ে ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াচ্ছেন জয়রাম।”
রাজ্যে তৃণমূল সরকারের কাজ নিয়ে জয়রামের এই অসন্তোষ প্রকাশের নেপথ্যে রাজনৈতিক কোনও কারণ রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও আজ তুলছেন অনেকে। কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ কিছু দিন আগে পর্যন্ত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না। প্রকাশ্যে কখনও না বললেও তাঁদের মধ্যে জয়রামও ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি দিল্লি সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে একলা চলার ব্যাপারেই এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে তৃণমূল। তার পরেই এই চিঠি পাঠালেন জয়রাম। এই অবস্থায় অনেকেই দুইয়ে দুইয়ে চার করে তৃণমূল শিবিরেরই কেউ কেউ বলছেন, যে-ই মমতা একলা চলার কথা স্পষ্ট করে দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে জয়রামের ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ল। না হলে রাজ্যে একশো দিনের প্রকল্প নিয়ে তো মমতা নিজেই একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এটাকে তাই তাঁরা কেন্দ্রের চাপ ছাড়া আর কিছু মনে করছেন না।
মমতা এখন বারবার কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা বলেন। লক্ষ্যণীয় ভাবে জয়রাম সেই প্রসঙ্গ তুলেও বলেছেন, “কারণে অকারণে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁরও জানা উচিত, বঞ্চনা তো দূরস্থান, অর্থ বরাদ্দের পরেও তা খরচ করতে পারছে না রাজ্য সরকার। একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।” তবে একই সঙ্গে তিনি এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্কের কথাও উড়িয়ে দিয়েছেন। বরং বলেছেন, “নিয়ম-নীতি মেনে প্রকল্পের আওতায় রাজ্যকে অর্থ সাহায্যের জন্য আমি সর্বদা তৈরি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কেবল খরচ বাড়ালেই চলবে না। তা দিয়ে রাজ্যে স্থায়ী সম্পদ তৈরি হচ্ছে কি না, তা-ও সুনিশ্চিত করতে হবে।” কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে প্রকল্পের টাকা পড়ে রয়েছে, তা ৩০ দিনের মধ্যে তুলে নিয়ে যারা টাকা খরচ করেছে, তাদের জন্য বরাদ্দ করা হোক। শেষ পর্যন্ত রাজ্য তা করতে পারল কি না, সেটাও কেন্দ্রকে জানাক।
এই চিঠির কথা শুনে সুব্রতবাবু কিন্তু বলেছেন, প্রকল্পের জন্য টাকা দিতে কেন্দ্র বাধ্য। তিনি বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পটি একটি নির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে রূপায়ণ করা হয়। সেই আইন জয়রাম রমেশের মন্ত্রকই সংসদে পাশ করেছে। প্রকল্পের নিয়ম অনুসারে বরাদ্দ টাকার ৮০% খরচ হয়ে গেলেই রাজ্য টাকা চাইতে পারে।” তা না হলে? সুব্রতবাবুর হুঁশিয়ারি, “আমিও দিল্লিতে হানা দেব। দেখি কী ভাবে হকের টাকা আটকে রাখে কেন্দ্র।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.